ঝাই রিচার্ডসনের হালকা ইনজুরি সমস্যা। তারওপর ম্যাচটি মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি)। যে মাঠে অসাধারণ বোলিং করার রেকর্ড রয়েছে স্কট বোল্যান্ডের। মিডিয়াম ফাস্ট বোলারটির বয়সও কিন্তু কম নয়। ৩২। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে এর আগে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি অভিষেক হলেও সাদা পোশাকের ব্যাগি-গ্রিন জার্সিটি গায়ে গোলার সৌভাগ্য হয়নি।
এবার যেন দুয়ে দুয়ে চার মিলে গেলো। একে তো রিচার্ডসনের ইনজুরি, সঙ্গে এমসিজিতে ভিক্টোরিয়ার হয়ে তার অসাধারণ বোলিং পারফরম্যান্স। ব্যাস! আর কথা নেই। অ্যাশেজ সিরিজে বক্সিং ডে টেস্টের জন্য একাদশে ঠাঁই মিলে গেলো ৩২ বছর বয়সী স্কট বোল্যান্ডের।
অস্ট্রেলিয়ান এই পেসারের সবচেয়ে বড় পরিচয়, তিনি একজন আদিবাসী। এদেরকেই অস্ট্রেলিয়ার মূল অধিবাসী হিসেবে গণ্য করা হয়। যারা ব্রিটিশ কলোনিয়ালাইজেশনের আগে থেকেই শতাব্দীর পর শতাব্দী অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করে আসছেন।
স্কট বোল্যান্ড মাত্র দ্বিতীয় ক্রিকেটার যিনি আদিবাসী হয়েই অস্ট্রেলিয়া দলে সুযোগ পেয়েছিলেন। প্রথম আদিবাসী হিসেবে অসি দলে খেলার সুযোগ পান জেসন গিলেস্পি। তবে সব মিলিয়ে স্কট বোল্যান্ড অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে চতুর্থ আদিবাসী। বাকি দুই ক্রিকেটার জলেন নারী। তারা হলেন ফেইথ থমাস এবং অ্যাশলেই গার্ডনার।
ঘরের মাঠে অভিষেক। স্কট বোল্যান্ড একটু বেশিই উৎফুল্ল ছিলেন বলা যায়। গ্যালারিভর্তি দর্শকের উৎফুল্ল চিৎকার যেন বোল্যান্ডের উদ্দীপনাকে বাড়িয়ে দেয়। প্রথম ইনিংসে ১৩ ওভার বল করে ২টি মেডেন এবং ৪৮ রান দিয়ে উইকেট নেন মাত্র ১টি।
তবে তার হাতের বিষ যে দ্বিতীয় ইনিংসের জন্য জমা রেখেছিলেন, তা সম্ভব কল্পনাও করতে পারেনি ইংলিশরা। দ্বিতীয় ইনিংসে বল করলেন মাত্র ৪ ওভার, তাতেই কোমর ভেঙে গেল ইংল্যান্ডের ব্যাটিং। ৭ রান দিয়ে তিনি শিকার করলেন ৬ উইকেট! অভিষেকেই এতো কম রানে ৫ উইকেট শিকারের রেকর্ড আর কারোরই নেই!
টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে এমন রেকর্ড ছিল মাত্র দুটি। আর্নি টোশাক ও স্টুয়ার্ড ব্রডের। সেই রেকর্ড আজ ছুঁয়েছেন স্কট বোল্যান্ডও। এই দুর্ধর্ষ পেস বোলারের অভিষেক টেস্টকে শেষ করে দিয়েছেন মাত্র আড়াই দিনেরও কম সময়ে।
টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষ বিকেলে কেবল ১ ওভার বোলিং করে নিয়েছিলেন ২টি উইকেট। তৃতীয় দিন সকালে বল করলেন ৩ ওভার। তাতে রান দিলেন আর ৬টি এবং উইকেট নিলেন ৪টি। ম্যাচ শেষে সেরার পুরস্কার উঠলো বোল্যান্ডের হাতে।
আবার এই ম্যাচ সেরার পুরস্কারের নামকরণ করা হলো ‘মুলাগ স্বর্ণ পদক’। জনি মুলাগের নামেই প্রবর্তন করা হয়েছে এই পুরস্কারটি। ১৮৬৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার যে দলটি প্রথম ইংল্যান্ড সফর করেছিলো, সেটা ছিল আদিবাসীদের একটি ক্রিকেট দল এবং সেই দলের অংশ ছিলেন জনি মুলাগ।
বক্সিং ডে টেস্টে ঘটলো আরেক অবিশ্বাস্য ঘটনা। বক্সিং ডে টেস্ট শেষ হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৮৪ বল খেলে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ৭০ বছরের মধ্যে এটিই সবচেয়ে সংক্ষিপ্ততম টেস্ট ম্যাচ!
ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে করে ১৮৫ রান। অজিদের ব্যাট থেকে আসে ২৬৭ রান। তাদের লিড ৮২ রানের। এই স্বল্প রানের লিড নিয়ে ম্যাচ ইনিংস ব্যবধানে জিতে যাবে, এমনটা স্বপ্নেও বোধহয় ভাবেনি প্যাট কামিন্সের দল!
কিন্তু হলো সেটাই! ৩২ বছর বয়সী ওই অভিষিক্ত পেসার বোল্যান্ডের আগুনেই পুড়ে ছারখার ইংলিশদের ব্যাটিং। ইনিংস ও ১৪ রানে অজিদের জয়। পাঁচ ম্যাচ অ্যাশেজ সিরিজের প্রথম তিনটি জিতে ট্রফিটাও নিজেদের কাছে রেখে দেয়া নিশ্চিত করলো অসিরা।
দ্বিতীয় ইনিংসে জো রুটের দল মাত্র ৬৮ রানে অলআউট হয়েছে। গত ১১৭ বছরের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এটাই ইংলিশদের সর্বনিম্ন রানের ইনিংস! এর আগে সেই ১৯০৪ সালে মেলবোর্নে ৬১ রানে অলআউট হয়েছিল তারা।
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com