সেবা প্রকাশনীর ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের ২৬০টি ও ‘কুয়াশা’ সিরিজের ৫০টি বইয়ের স্বত্বাধিকার লেখক শেখ আবদুল হাকিমকে দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, সার্বিক পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণপূর্বক দেখা যায় যে, অভিযোগকারী (শেখ আবদুল হাকিম) প্রতিপক্ষের (কাজী আনোয়ার হোসেন) বিরুদ্ধে কপিরাইট আইনের ৭১ ধারা ও ৮৯ ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন মর্মে প্রতীয়মান হয়।
অন্যদিকে তার (শেখ আবদুল হাকিম) নামে কপিরাইট রেজিস্ট্রেশনকৃত বই কোনো স্টোর, বাজারে গুদামজাত করা থাকলে তা জব্দ করার জন্য স্থানীয় থানা কিংবা কপিরাইট টাস্কফোর্সের কাছে আবেদন করতে পারেন।
সাথে সাথে দায়রা আদালতে কপিরাইট আইনের ৮৯ ধারা লঙ্ঘনের প্রতিকার চাইতে পারেন অথবা উভয়পক্ষের গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সুষ্ঠু ও সম্মানজনক নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়েছে, সুষ্ঠু সমাধান ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে কপিরাইট বোর্ড বা বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যন্ত আবেদনকারীর দাবিকৃত ও তালিকাভুক্ত বইগুলোর প্রকাশ বা বাণিজ্যিক কার্যক্রম গ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য প্রতিপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হলো।
এর আগে গত ১৩ ডিসেম্বর কপিরাইট অফিসের আদেশের বিরুদ্ধে করা সেবা প্রকাশনীর কাজী আনোয়ার হোসেনের রিট খারিজ করে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ মাসুদ রানা এবং কুয়াশা সিরিজের ৩১০ বইয়ের স্বত্ত্ব আবদুল হাকিমের বলে রায় দেন। এর ফলে ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের ২৬০টি বই এবং ‘কুয়াশা’ সিরিজের ৫০টি বইয়ের স্বত্ব পেলেন প্রয়াত লেখক শেখ আবদুল হাকিম। রায়ে এখন ৩১০টি বইয়ের মালিকানা শেখ আবদুল হাকিমের।
২০১৯ সালের ২৯ জুলাই শেখ আব্দুল হাকিম ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের ২৬০টি ও ‘কুয়াশা’ সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখক হিসেবে স্বত্ব বা মালিকানা দাবি করে সেবা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী কাজী আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ কপিরাইট আইনের ৭১ ও ৮৯ ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসে অভিযোগ দাখিল করেন।
এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আইনি লড়াই শেষে ২০২০ সালের ১৪ জুন বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস শেখ আবদুল হাকিমের পক্ষে সিদ্ধান্ত দেয়।
এ সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সেবা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী কাজী আনোয়ার হোসেন হাইকোর্টে রিট করেন। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট কপিরাইট অফিসের সিদ্ধান্ত এক মাসের জন্য স্থগিত করে রুল জারি করেন। এরপর গত ১৩ ডিসেম্বর সেই রুল খারিজ করে রায় দেন আদালত।