২৯ জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে সংক্রমণ, স্বাস্থ্যবিধি ছাড়া নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

দেশের ২৯টি জেলায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। সর্বত্র মানুষে মানুষে করোনার সংক্রমণ দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। দেশের শতভাগ মানুষ মাস্ক পরাসহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চললে এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে সোমবার (২৯ মার্চ) স্বাস্থ্য অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল প্রেস কনফারেন্সে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, গত তিনমাসে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে সারাদেশের মানুষের চরম অনিহা, অবহেলা ও বেপরোয়া মনোভাবের কারণে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনের প্রচেষ্টার পাশাপাশি জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া মহামারি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। মনে রাখতে হবে- প্রত্যেকে সুরক্ষিত না হলে আমরা কেউ সুরক্ষিত নই।

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরও ৫ হাজার ১৮১ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। যা বাংলাদেশে একদিনে সর্বোচ্চ। এ নিয়ে শনাক্তকৃত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৮৯৫ জন। এছাড়া একই সময়ে করোনায় আরও ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩০ জন পুরুষ ও ১৫ জন নারী। এ নিয়ে দেশে মোট করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৯৪৯ জন।

এদিকে করোনা সংক্রমণ বাড়ায় উদ্বিগ্ন সরকারও। তাই সরকার ফের করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছে।

নির্দেশনাগুলো হলো-

১. সব ধরনের জনসমাগম (সামাজিক/ রাজনৈতিক/ধর্মীয়/অন্যান্য) সীমিত করতে হবে। উচ্চ সংক্রমণযুক্ত এলাকায় সব ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হলো। বিয়ে/ জন্মদিনসহ যে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে জনসমাগম নিরুৎসাহিত করতে হবে।

২. মসজিদসহ সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে।

৩. পর্যটন/ বিনোদন কেন্দ্র সিনেমা হল/ থিয়েটার হলে জনসমাগম সীমিত করতে হবে এবং সব ধরনের মেলা আয়োজন নিরুৎসাহিত করতে হবে।

৪. গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং ধারণ ক্ষমতার ৫০ ভাগের বেশি যাত্রী পরিবহন করা যাবে না।

৫. সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাতে আন্তঃজেলা যান চলাচল সীমিত করতে হবে; প্রয়োজনে বন্ধ রাখতে হবে।

৬. বিদেশ হতে আগত যাত্রীদের ১৪ দিন পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক (হোটেলে নিজ খরচে) কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে হবে।

৭. নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী খোলা/উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনপূর্বক ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে; ওষুধের দোকানে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।

৮. স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো মাস্ক পরিধানসহ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে।

৯. শপিং মলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।

১০. সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাদরাসা, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়) ও কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে।

১১. অপ্রয়োজনীয় ঘোরাফেরা/ আড্ডা বন্ধ করতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাত ১০টার পর বাইরে বের হওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

১২. প্রয়োজনে বাইরে গেলে মাস্ক পরিধানসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে। মাস্ক পরিধান না করলে কিংবা স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

১৩. করোনায় আক্রান্ত/ করোনার লক্ষণযুক্ত ব্যক্তির আইসোলেশন নিশ্চিত করতে হবে। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা অন্যান্যদেরও কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে হবে।

১৪. জরুরি সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব সরকারি-বেসরকারি অফিস/প্রতিষ্ঠান শিল্প কারখানাগুলো ৫০ ভাগ জনবল দ্বারা পরিচালনা করতে হবে। গর্ভবতী/ অসুস্থ/ বয়স ৫৫-ঊর্ধ্ব কর্মকর্তা/ কর্মচারীর বাড়িতে অবস্থান করে কর্মসম্পাদনের ব্যবস্থা নিতে হবে।

১৫. সভা, সেমিনার, প্রশিক্ষণ, কর্মশালা যথাসম্ভব অনলাইনে আয়োজনের ব্যবস্থা করতে হবে।

১৬. সশরীরে উপস্থিত হতে হয় এমন যেকোনো ধরনের গণপরীক্ষার ক্ষেত্রে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে।

১৭. হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে ধারণ ক্ষমতার ৫০ ভাগের বেশি মানুষের প্রবেশ বন্ধ করতে হবে।

১৮. কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ এবং অবস্থানকালীন সর্বদা বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে।