২৮ বছর বয়সে ৫টি বিয়ে, পার্লারের আড়ালে দেহ ব্যবসাঃ দুই নারীসহ তিনজনকে আটক

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

ঢাকার আশুলিয়া থেকে মানবপাচার ও পার্লারের আড়ালে জোরপূর্বক দেহ ব্যবসার অপরাধে দুই নারীসহ তিনজনকে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৪)।

আটকরা হলেন- শাহীন খান (২৮), সেলিনা আক্তার (৩৫) ও জান্নাতুল ফেরদৌস (৩২)।

মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন র‌্যাব-৪ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া অফিসার) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম সজল।

তিনি বলেন, একাধিক ভুক্তভোগী র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক বরাবর শাহীন খানের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফিসহ একাধিক বিষয়ে অভিযোগ করেন। এর প্রেক্ষিতে বিষয়টি আমলে নিয়ে র‌্যাবের একটি গোয়েন্দা দল অনুসন্ধান শুরু করে। অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল আশুলিয়া থানাধীন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মানবপাচার ও জোরপূর্বক দেহ ব্যবসায় নিয়োজিত করার অভিযোগে শাহীন খান, সেলিনা আক্তার ও জান্নাতুল ফেরদৌসকে আটক করে।

শাহীনের উত্থান
মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম সজল বলেন, শাহীন স্থানীয় একটি স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। তিনি সুদর্শন হওয়ায় অল্প বয়সেই চারিত্রিক ও নৈতিক অধঃপতন হয়। মায়ের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অষ্টম শ্রেণির পর তাকে আর বিদ্যালয়ে পাঠানো যায়নি। এলাকায় উঠতি বয়সী মেয়েদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করা তার একটি নেশায় পরিণত হয়। চার ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট শাহীন বেপরোয়াভাবে চলাফেরা শুরু করেন ও অনৈতিক জীবন-যাপনের দিকে নিজেকে অস্বাভাবিক রূপে ধাবিত করেন।

শাহীনের বৈবাহিক জীবন
২০১৪ সালে ২১ বছর বয়সে আশুলিয়ার এক মেয়েকে জোরপূর্বক বিয়ে করেন শাহীন। একইসময়ে অন্য আরেক নারীর সঙ্গে অবৈধ সর্ম্পকে জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে সেই নারীকেও বিয়ে করেন। এর এক বছর পর ২০১৭ সালে সাভার ব্যাংক কলোনির এক নারীকে বিয়ে করেন। ২০১৯ সালে মোহাম্মদপুর এলাকায় আরেক নারীকে ফাঁদে ফেলে নিজেকে অবিবাহিত পরিচয় দিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক করেন এবং পরে বিয়ে করেন।

জিজ্ঞাসাবাদে শাহীন জানান, চলতি বছরের অক্টোবর মাসে আটক সেলিনা আক্তারকেও পূর্বের মত বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করেন ও বিয়ে করেন। যদিও এই বিয়ের প্রমাণস্বরূপ কোনো প্রমাণপত্র দেখাতে পারেননি। এছাড়াও শাতাধিক নারীর সঙ্গে শাহীন খানের অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে বলে জানা যায়। তার এই অসামাজিক ও অনৈতিক কাজের জন্য তার তৃতীয় স্ত্রী ও মা তার বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে মামলা করেন।

শাহীনের স্ত্রী আটক সেলিনা আক্তার পার্লার ব্যবসার নামে নারীদেরকে নিয়ে অবৈধভাবে দেহ ব্যবসা করাতেন। পার্লারে মেয়েদের কাজ শেখানোর নাম করে নিয়ে এসে জোরপূর্বক অনৈতিক সম্পর্কে জড়াতে বাধ্য করতেন। সেলিনা আক্তার মাদক কারবারের সঙ্গেও জড়িত বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়। ইতোপূর্বে তিনি থানা পুলিশের হাতে আটক হয়েছিলেণ। সম্প্রতি শাহীন খান ও সেলিনা আক্তার উভয়ে যৌথভাবে মাদক কারবারসহ দেহ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। সেলিনা আক্তার নিজকে একজন প্রভাবশালী নারী বলে এলাকায় পরিচয় দিয়ে আসছিলেন। সেলিনা আক্তার অষ্টম শ্রেণি পাস হলেও নিজেকে একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট বলে প্রচার-প্রচারণা চালান।

আটক জান্নাতুল ফেরদৌস তার সাভার ব্যাংক কলোনির বাসায় শাহীন ও সেলিনা আক্তারের সঙ্গে মিলে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ দেহ ব্যবাসা করে আসছিলেন।

প্রাথমিক বিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, শাহীন খান বিভিন্ন সময়ে নিজের বিভিন্ন ভুয়া পরিচয় প্রদান করেন। কখনো শাহীন ইসলাম জীবন, কখনো শাহীন খান, কখনো মো. শাহীন ইসলাম নামে নিজের পরিচয় দেন। তিনি ভুয়া আইডি কার্ড দেখিয়ে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয়ও দিতেন। এছাড়া ব্যবস্থাপনা পরিচালক, শাহীন এন্টারপ্রাইজ; ব্যস্থাপনা পরিচালক, উন্নয়ন সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির পরিচয় দিতেন। তিনি অনেক নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে ভিডিও ধারণ করে তাদের ব্ল্যাকমেইল করতেন। শাহীনের ব্যক্তিগত মোবাইলের এসবের বহু তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়।

আটকদের বিরুদ্ধে মানব পাচার, পর্নোগ্রাফি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।