দেশে মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও আটজন মারা গেছেন। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মোট ১৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হিসেবে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ৬৪১ জন। ফলে দেশে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা সাত হাজার ১০৩ জন।
বুধবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। অনলাইনে বুলেটিন উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও চার হাজার ৯৬৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৫৯ হাজার ৭০১টি। নতুন যাদের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে, তাদের মধ্যে আরও ৬৪১ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ফলে মোট করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন সাত হাজার ১০৩ জন। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মারা গেছেন আরও আটজন। ফলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬৩ জনে। এছাড়া সুস্থ হয়েছেন আরও ১১ জন। ফলে মোট সুস্থ হয়েছেন ১৫০ জন।
যারা নতুন করে মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ছয়জন পুরুষ এবং দুজন নারী। ছয়জন ঢাকার বাসিন্দা এবং দুজন ঢাকার বাইরের। বয়সের দিক থেকে চারজন ষাটোর্ধ্ব, দুজন পঞ্চাশোর্ধ্ব এবং দুজন ত্রিশোর্ধ্ব।
তিনি বলেন, ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে একভাগ রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাকি তিনভাগ বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাড়ি থেকে চিকিৎসা যারা নিচ্ছেন তাদের মধ্যে ৩৮ জন সুস্থ হয়েছেন।
ডা. নাসিমা সুলতানা আরও বলেন, করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে যারা বাড়িতে রয়েছেন, তারা আমাদের হটলাইনের মাধ্যমে চিকিৎসা নেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের লক্ষণ ও উপসর্গগুলো মৃদু থাকে। তারা বাড়িতে চিকিৎসা নিয়েই সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। করোনার উপসর্গ যখন শেষ হয়ে যাবে, তার ১৪ দিন পর তার দ্বিতীয় নমুনা নেয়া হয়। তার সাতদিন পর আবার নমুনা নেয়া হয়। পরপর দুটি পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ আসলে আমরা তাদের সম্পূর্ণ সুস্থ বলি।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, রাজধানীর তিনটি বেসরকারি হাসপাতালকে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এগুলো হলো- এভারকেয়ার হাসপাতাল লিমিটেড (সাবেক অ্যাপোলো হাসপাতাল), স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড ও ইউনাইটেড হাসপাতাল লিমিটেড। এখন থেকে এ হাসপাতালগুলোতে যেসব নমুনা পরীক্ষা করা হবে সেগুলো সরকারি ল্যাবরেটরির মোট নমুনার সঙ্গে যোগ করে প্রকাশ করা হবে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকার এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয় বুলেটিনে।
প্রায় চার মাস আগে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস এখন গোটা বিশ্বে তাণ্ডব চালাচ্ছে। চীন পরিস্থিতি অনেকটাই সামাল দিয়ে উঠলেও এখন মারাত্মকভাবে ভুগছে ইউরোপ-আমেরিকা-এশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল। এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের প্রায় সাড়ে ৩১ লাখ। মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে দুই লাখ ১৮ হাজার। তবে নয় লাখ ৬১ হাজারের বেশি রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন।
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর প্রথম দিকে কয়েকজন করে নতুন আক্রান্ত রোগীর খবর মিললেও এখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এ সংখ্যা। বাড়ছে মৃত্যুও।
প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। নিয়েছে আরও নানা পদক্ষেপ। যদিও এরই মধ্যে সীমিত পরিসরে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার কিছু পোশাক কারখানা সীমিত পরিসরে খুলতে শুরু করেছে। তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করা না গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে কি-না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।