পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় গত ২২ বছরে বেড়িবাঁধের রিভার সাইটের অন্তত ২০০ কিলোমিটার এলাকার ম্যানগ্রোভ প্রজাতির হাজার হাজার গাছ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ফলে সবুজ দেয়ালখ্যাত ঝড়-জলোচ্ছ¡াসের ঝাপটার প্রাথমিক রক্ষাকবচ নেই। বাঁধগুলো অরক্ষিত হয়ে গেছে।
ঝুঁিক বেড়েছে বাঁধের। জানা গেছে, প্রাচীন এই গাছগুলো এখন যেসব এলাকায় রয়েছে তাও মেরে ফেলার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। এসব গাছ উজাড় করে সেখানে মানুষ বাড়িঘরসহ পুকুর তৈরি করছে।
এছাড়া বাঁধ মেরামতের নামে স্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটার ফলেও অন্তত ৩০/৩৫ কিলোমিটার এলাকার ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছ মারা পড়ছে। ২০০১ সাল থেকে বাঁধের রিভার সাইটের গাছগুলো নিধনের মহোৎসব চলে আসছে। অধিকাংশ জনপ্রতিনিধিগণ জানান, অন্তত আশি ভাগ বেড়িবাঁধের বাইরের ভেতরের গাছপালা বনাঞ্চল নেই। একসময় বাঁধের বাইরে ২০-৫০ মিটার প্রস্থ ছইলা-কেওড়া, গেওয়া, গোলপাতা, বাইনসহ গুল্মজাতীয় গাছপালা লতাপাতায় আচ্ছাদিত ছিল।
সবচেয়ে বেশি বনাঞ্চল ছিল লতাচাপলী, কুয়াকাটা, ধুলাসার, বালিয়াতলী, মিঠাগঞ্জ, ডালবুগঞ্জ, মহিপুর, ধানখালী, চম্পাপুর ও লালুয়ায়। দেখা গেছে, মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া শাখা নদীর দুই পাড়ে বেড়িবাঁধের বাইরে এখনও ৫-৬ কিলোমিটার এলাকায় কালের স্বাক্ষীর মতো দাঁড়িয়ে আছে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির প্রাচীন ছইলা-কেওড়া গাছ। কিন্তু বনাঞ্চলের এই গাছগুলোর মধ্যে বাড়িঘর পুকুর করা হচ্ছে। গাছগুলো জোয়ার-ভাটার পানি থেকে বঞ্চিত থাকায় মরে যাচ্ছে।
বনবিভাগ কিংবা পানি উন্নয়ন বোর্ড কেউ ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বনাঞ্চল রক্ষায় তেমন আন্তরিক নন। আর এই ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছের সবুজ দেয়াল নিশ্চিহ্ন হওয়ায় সাগরপারের কলাপাড়ার মানুষ দূর্যোগকালীন ঝুঁকির কবলে রয়েছে।
লতাচাপলী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক মোল্লা জানান, ইউনিয়নে প্রায় ৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। আশি শতাংশ এলাকার ম্যানগ্রোভ বাগান নেই। এগুলো থাকলে ঝড়-জলোচ্ছ¡াস গাছের ওপর আছড়াইয়া পড়তো।
এখন তো বাঁধের ওপর পড়বে। গঙ্গামতির ধোলাইর খাল মার্কেটের দোকানি সাইফুল ইসলাম জানান, এই বাঁধের দুই দিকে গভীর বন ছিল। যা ২০০১ সাল থেকে ধ্বংস শুরু হয়। এখন বেড়িবাঁধ পানির ঝাপটায় ভেসে যাবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আরিফ হোসেন জানান, কলাপাড়া উপজেলায় ৩২৯ দশমিক ৫১ কিলোমিটার বন্যানিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ রয়েছে। নতুন জেগে ওঠা চরে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছের চারা রোপনের কাজ চলমান রয়েছে।