২২ বছরে কোনো রোগী মারা যায়নি তার অ্যাম্বুলেন্সে

:
: ৬ years ago

‘২০০৪ সালে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার বশিরপুর গ্রামে পাঁচ বছরের শিশুকে একটি ট্রাক চাপা দিলে গুরুতর আহতাবস্থায় নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে তার স্বজনরা। প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর হাসপাতাল থেকে তাকে রেফার করা হয়। এরপর ওই শিশুকে অ্যাম্বুলেন্সে করে প্রায় ৯০ কিলোমিটার রাস্তা মাত্র ৪২ মিনিটে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছাই। সেখানে চিকিৎসার পর বাচ্চাটি সুস্থ হয়। রোগীদের জীবন বাঁচাতে এক প্রকার ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় গাড়ি চালাতে হয়।’

অ্যাম্বুলেন্স চালক হিসেবে জীবনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কথাগুলো বলেন ৫১ বছর বয়সী হাসান আলী। তিনি নওগাঁ শহরের সুলতানপুর পূর্বপাড়া মহল্লার বাসিন্দা। দাম্পত্য জীবনে তিন ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার। বড় ছেলে মেহেদী হাসান ও মেজ ছেলে মারুফ হাসান আউটসোর্সিং এবং ছোট ছেলে মাহমুদ হাসান ব্যবসা করেন। স্ত্রী হেলেনা বেগম একজন গৃহিণী।

১৯৯৬ সালে ১ হাজার ৮০০ টাকা বেতনে নওগাঁ মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে অ্যাম্বুলেন্স চালক হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন হাসান আলী। সবসময় হাসিমুখেই থাকেন এ মানুষটি। তবে পান খাওয়ার অভ্যাস আছে তার। গত ২২ বছরের অ্যাম্বুলেন্সে করে কতজন রোগী বহন করেছেন তার হিসাব রাখেননি তিনি।

হাসান আলী বলেন, চাকরির শুরুতে জেলায় তেমন অ্যাম্বুলেন্স ছিল না। তখন বেসরকারিভাবে অ্যাম্বুলেন্স চালু হয়নি। সেসময় ঢাকাতে দিনে দুইবার করে রোগী নিয়ে গিয়েছি। তখন বেতন কম থাকায় পরিশ্রমও বেশি করতে হয়েছে। কিন্তু এখন বেতন বেশি হয়েছে। বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালু হয়েছে। আমার পরিশ্রমও কম হচ্ছে। আল্লাহর রহমতে এখন পর্যন্ত আমার গাড়িতে কোনো রোগী মারা যায়নি। জনসেবার কাজে নিয়োজিত আছি। রোগীর জীবন বাঁচাতে পারলে নিজেরই ভালো লাগে।

তিনি বলেন, রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা যেকোনো সময় আমাকে ফোন করলেই অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে হাজির হই। নিজের সর্বচ্চো দিয়ে চেষ্টা করি রোগীর জীবন বাঁচাতে। প্রতি কিলোমিটারে ১০ টাকা করে ভাড়া। তবে আসা-যাওয়া উভয় খরচ গুনতে হয় রোগীকে। আর এ ভাড়া বাবদ টাকাগুলো সরকারি ফান্ডে জমা দিতে হয়।

হাসান আলী বলেন, আর সাত বছর চাকরির বয়স আছে। আগামী ২০১৯ সালের শুরুতে হজে যাব। আল্লাহ যেন সুস্থ রাখেন। সবার কাছে এই দোয়া চাই।

নওগাঁ সিভিল সার্জন ডা. মুমিনুল হক বলেন, সরকারি হাসপাতালগুলোতে কর্মরত অ্যাম্বুলেন্স চালকরা ২৪ ঘণ্টা সার্ভিস দিয়ে থাকেন। রোগীদের জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে তারাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাই তারাও প্রশংসার দাবিদার।