২২ টনের সড়কে ৬০ টনের ট্রাক!

লেখক:
প্রকাশ: ১ বছর আগে

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর সোনামসজিদ থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত মহাসড়কের বেশ কিছু স্থানে উঁচু-নিচু হওয়ায় চলাচলে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। বেহাল এই মহাসড়কে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই ট্রাক চলাচলের কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সড়ক বিভাগের প্রকৌশলীদের ভাষ্য অনুযায়ী, সড়কের বিভিন্ন স্থানে উঁচু-নিচু হয়ে যাওয়াকে ‘রাটিং’ বলা হয়। তীব্র গরমে সড়কে ওভার লোড যানবাহন চলাচল করলে রাটিংয়ের সৃষ্টি হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সোনামসজিদ স্থলবন্দর থেকে পণ্য বোঝাই যানবাহন যে লেন দিয়ে চলে মূলত সেই লেনে রাটিং পয়েন্ট সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু অপর লেন সুরক্ষিত রয়েছে। সোনামসজিদ থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের দ্বারিয়াপুর পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার সড়কে কমপক্ষে ২১ স্থানে রাটিং রয়েছে। অতি ঝুঁকিপূর্ণ রাটিং রয়েছে ৭টি স্থানে। এর মধ্যে কয়লাবাড়ি, কানসাট, ইসরাইল মোড়, একাডেমি মোড়, ছত্রাজিতপুর ও দ্বারিয়াপুরে রাটিং অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

বিআরটিএ’র নির্দেশনা অনুযায়ী চাঁপাইনবাবগঞ্জ সোনামসজিদ মহাসড়কে যানবাহনে সর্বোচ্চ সাড়ে ২২ টন পণ্য পরিবহন করা যাবে। অথচ এই সড়কে ৪০ থেকে ৭০ টন পর্যন্ত পণ্য পরিবহন করা হচ্ছে। অন্যদিকে কয়েক দিনের তীব্র গরমে সড়কের বিটুমিন গলে গেছে। ফলে দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। অতিরিক্ত পাথর বোঝাই ট্রাক চলাচল বন্ধ করতে না পারলে এ অবস্থা থেকে সহসা মুক্তি মিলবে না।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানিয়েছে, অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন রোধে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সোনামসজিদ মহাসড়কের কয়লাবাড়ি এলাকায় এক্সএল রোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয় ২০১৪ সালে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের ব্যবস্থাপনায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ওজন যন্ত্রটি এক মাস যেতে না যেতেই নষ্ট হয়ে যায়। এরপর আর সেটি চালু করা হয়নি।

সদর উপজেলার চক আলমপুরের অটো রিকশাচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সড়ক উঁচু-নিচু হয়ে যাওয়ায় খুবই সমস্যার মধ্যে পড়তে হয় আমাদের। আমরা যারা কম গতির যানবাহন চালাই তারা সবচেয়ে বেশি সমস্যার মধ্যে আছি। সড়কের এক লেন থেকে অন্য লেনে যেতে হলে মাঝখানে উঁচু জায়গা পার হতে হয়। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী কাশেম আলী জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে সোনামসজিদ যাওয়ার সময় অসুবিধা হয় না। কিন্তু সোনামসজিদ থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আসার সময় সমস্যা হয়। সড়কের বাম দিক দেবে গেছে। তিনি বলেন, আমরা যারা মোটরসাইকেলে চলাচল করি তারা এই সড়কে চরম ঝুঁকিতে থাকি।

সড়কের এমন বেহাল অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য ইতোমধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিজস্ব অর্থায়নে সড়কে থাকা রাটিং পয়েন্টগুলোতে সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। কাজ সম্পন্ন করতে সপ্তাহখানেক সময় লাগবে বলে জানান জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সানজিদা আফরীন ঝিনুক।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার হরিপুর থেকে দ্বারিয়াপুর পর্যন্ত যতগুলো রাটিং পয়েন্ট রয়েছে সবগুলো পয়েন্টে সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। সাধারণত তীব্র গরম আবহাওয়ায় সড়কে ওভারলোড যানবাহন চললে এমন রাটিং হয়।

ওভার লোড পণ্য নিয়ে সড়কে যানবাহন যাতায়াত যাতে না করতে পারে সেজন্য কোটি টাকা ব্যয়ে জেলার শাহবাজপুরে কয়লাবাড়ি এলাকায় এক্সএল রোড নিয়ন্ত্রণ-স্কেল বসানো হচ্ছে। স্কেলটি চালু হলে সড়কে এমন অবস্থা আর সৃষ্টি হবে না বলে মন্তব্য করেন সানজিদা আফরীন ঝিনুক।