২০ টাকায় কেনা পেঁয়াজের কেজি ৩৫ টাকা

:
: ৬ years ago

সরকার শুল্কমুক্ত সুবিধায় ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ দিলেও বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতায় পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলেছে। ভারতীয় পেঁয়াজ এখন বেনাপোল বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা কেজি আর দেশি পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা।

অতিরিক্ত মুনাফালোভী বিক্রেতাদের কারসাজির কারণে অস্বাভাবিক হারে মূল্য বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে পেঁয়াজের মূল্য বেড়েছে অস্বাভাবিকহারে।

তবে আমদানিকারকরা বলছেন, ভারত থেকে উচ্চমূল্যে পেঁয়াজ আমদানি হওয়ার কারণে মূল্য বেড়েছে। ভারত থেকে নাসিক, হাসখালি, বেলেডাঙ্গা ও খড়কপুর জাতের পেঁয়াজ আমদানি হয়ে থাকে। এদেশে নাসিকের পেঁয়াজের চাহিদা বেশি। ছয়দিনে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ৪ হাজার ৭৩৮ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হলেও দাম কমেনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পেঁয়াজের বাজার মূল্য ক্রেতাদের ক্রয়-ক্ষমতার মধ্যে রাখতে ২০১৬ সালে পেঁয়াজের ওপর আমদানি শুল্ককর প্রত্যাহার করে সরকার। তখন থেকে আর শুল্ককর সংযোজন হয়নি। তবে শুল্ককর উঠলেও অতিরিক্ত লাভে বিক্রেতাদের সিন্ডিকেটের কারণে হঠাৎ করে অস্বাভাবিক হারে পেঁয়াজের মূল্য বেড়েছে। ভারতের রফতানি মূল্যে প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে ২০৫ মার্কিন ডলার মূল্যে। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রতিটনের মূল্য দাঁড়ায় ১৭ হাজার ২০০ টাকা। কেজি প্রতি আমদানি খরচ পড়ে প্রায় ১৮ টাকা। এলসি খরচসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে বেনাপোল স্থলবন্দর পর্যন্ত পেঁয়াজ পৌঁছাতে খরচ পড়ছে প্রতিকেজি ২০ টাকা। আমদানি হওয়া পেঁয়াজ বন্দর থেকে পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৩৫ টাকা।

বেনাপোল কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরার ভোমরা শুল্ক স্টেশন দিয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি হয় বাংলাদেশে। ওখানে ট্রাক জটের কারণে কিছু পেঁয়াজ বর্তমানে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি হচ্ছে। বাজার সহনশীল রাখতে ও পেঁয়াজ আমদানি গতিশীল করতে বেনাপোল বন্দর ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার নির্দেশনা দিয়েছে কাস্টম কর্তৃপক্ষ। পেঁয়াজের কোনো সরকারি শুল্ক নেই। গত ৫ আগস্ট থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারত থেকে ৪ হাজার ৭৩৮ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। যা বেনাপোল কাস্টমস হাউস থেকে ছাড় করে নিয়ে গেছে আমদানিকারকরা। তবে অদৃশ্য কারণে বাজারে পেঁয়াজের দাম কমছে না।

বেনাপোলের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট রয়েল এন্টার প্রাইজের মালিক রফিকুল ইসলাম রয়েল বলেন, বর্তমানে বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজে ২০৫ ডলার মূল্যে শুল্কায়ন করেছে। সে হিসাবে ভারতীয় রফতানি খরচ, ট্রাক ভাড়া দিয়ে বেনাপোল পর্যন্ত প্রতি কেজি পেঁয়াজের মূল্য পড়ছে ২০ টাকা। যদিও সিন্ডিকেটের কারণে ২০ টাকার সেই পেঁয়াজ বাজারে ৩৫ টাকা কিনতে হচ্ছে।

বেনাপোল থেকে ঢাকায় পাঠাতে খরচ পড়ছে প্রতি কেজিতে আরো ৩ টাকা। সে হিসেবে প্রতি কেজির দাম পড়ে যাচ্ছে ২৩ টাকা। এর পর কিছু পেঁয়াজ পচে যায় আবার কিছু পেঁয়াজ শুকিয়ে যায়। এ ছাড়াও আগে ১৫ থেকে ২০ টন একটি ট্রাকে পাঠানো যেত। বর্তমানে ১৩ টনের ট্রাক মালিকরা নিতে চায় না। এর ফলে পরিবহন খরচও বেড়েছে। এসব কারণে এখন আমদানিকারকরা পেঁয়াজ আমদানিতে উৎসাহ দেখাচ্ছে না। বাজারে চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজ কম থাকায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান তিনি।

আমদানিকারক শাহিন রেজা বলেন, বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রির কারণে আমদানিকারকরা লাভবান হচ্ছেন না। কারণ তারা আমদানি করা দরের সামান্য ব্যবধানে তুলে দিচ্ছেন পাইকারদের হাতে। পাইকারদের সিন্ডিকেটের কারণে ক্রেতাদের বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে হয়।

বেনাপোল বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানিকারক খুলনার হামিদ এন্টার প্রাইজের ম্যানেজার নজরুল ইসলাম বলেন, পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে প্রতিটন ২০৫ থেকে ৩০০ মার্কিন ডলার মূল্য নির্ধারণ করা হলেও ওই মূল্যে ভারতীয় বাজারে পেঁয়াজ কেনা যায় না। অনেক সময় নির্ধারিত মূল্যের বেশি, আবার কোনো সময় কম থাকে। পচনশীল পণ্যের হিসেব একটু অন্য ধরনের। এ কারণে মূল্যের তারতম্য হয়। আমরা লাখ লাখ টাকা ব্যবসায় লাগিয়ে কেজিতে ১ টাকা থেকে দেড় টাকা লাভে বাজারে বিক্রি করে থাকি পেঁয়াজ।

বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। বাজার সহনশীল রাখতে ও পেঁয়াজের আমদানি গতিশীল করতে বেনাপোল বন্দর ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমদানিকারকরা যে মূল্য ঘোষণা দিচ্ছে আমরা সে মূল্যে শুল্কায়ন করে দিচ্ছি।