পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম-এমপি বলেছেন, আমাদের ছেলেমেয়েদর একটা চিন্তাভাবনা হলো তারা সরাসরি কাজ চায়।
কিন্তু কাজের জন্য তাদের যে একটা প্রস্তুতির দরকার অর্থাৎ যে কাজ করবে, সেই কাজের মানের কাছে আসার চিন্তা করেনা। তারা মনে করে বসিয়ে দিলে কাজ শিখে নেবে অর্থাৎ তারা সর্টকাট টু লাইফ চায়।
কিন্তু লাইফে কোন সর্টকাট নেই। লাইফকে যদি বাড়াতে হয় তাহলে নিজের ভিতটাকে মজবুত করতে হবে। ভিতকে মজবুত করতে হলে তার হাত দুটোকে শক্তিশালী করতে হবে।
শনিবার (০৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১ টায় বরিশাল টেকনিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের (টিটিসি) ২৭৫তম ব্যাচের প্রশিক্ষিত শিক্ষার্থীদের মাঝে সনদ বিতরন এবং ২৭৬তম কোর্সের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এসময় প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, আমি পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী হয়েও আমার মন্ত্রনালয়ে ছেলেদেরকে চাকুরি দিতে পারিনা। কারণ তারা সেটার জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে পারে না, তাহলে আমি কিভাবে চাকুরি দিবো। আবার আমার যদি নিজস্ব ফার্ম বা কোম্পানি বা গার্মেন্টস থাকতো সেখানেও চাকুরি দিতে গেলে আমি যোগ্যতার বিষয়েই গুরুত্ব দিতাম।
কারণ যে মেশিনটা চালাতে পারবে না, তাকে সেই চাকুরি কখনোই দিবোনা। সুতরাং এই সোজা জিনিসটা সবাইকে বুঝতে হবে ও অনুধাবন করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০২১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে নিয়ে যাওয়ার সপ্ন দেখছি।
সেক্ষেত্রে জনসম্পদ থেকে আয় হচ্ছে আমাদের বড় একটি ক্ষেত্র। আমাদের এই ছোটদেশে বড় জনসংখ্যা, যে মানুষগুলোকে কোথাও না কোথাও কাজে লাগাতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বায়স্তবায়নের লক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে মোট ১ শত টি ইকোনোমিক জোন তৈরি হচ্ছে।
আমাদের সপ্ন, আশা, ইচ্ছা সেখানে এসে বিদেশীরা ইন্ডাষ্ট্রি করবে এবং যেখানে আমাদের লোকজন চাকুরি নিবে। তবে পরিষ্কার এটা যে শিল্প কারখানায় চাকুরি নিতে হলে আমাদের ছেলে-মেয়েদের যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। না হলে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে গড়া শিল্প কারখানা চালাতে বিদেশ থেকে লোক আনবে তারা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক গার্মেন্টস, কম্পোজিট ফ্যাক্টরী রয়েছে যেখানে বড় বড় পদে বিদেশীরা চাকুরী করে। আমাদের ছেলে-মেয়েদের সেখানে চাকুরী দেয়া হয়না, কারন সে যোগ্যতা তারা অর্জন করতে পারেনি। কিন্তু ব্যবসায়ীরা সেখানে আমাদের ছেলে-মেয়েদের চাকুরী দিতে চায়।
তিনি বলেন, দেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের অগ্রযাত্রায় কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন মানুষের বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে। বরিশাল টেকনিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (টিটিসি) এ কি ধরণের প্রশিক্ষন দেয়া হচ্ছে তা সকলের জানা উচিত। যাতে করে তারা এসব প্রশিক্ষন কেন্দ্রে এসে প্রশিক্ষন নিতে আগ্রহী হয়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিক নির্দেশনা দিয়েছে সেভাবে এখানে কাজ হচ্ছে। তবে আমি মনে করি আরো আন্তরিক হতে হবে। আরো আন্তরিকতার সাথে প্রশিক্ষকরা প্রশিক্ষন দেয়, আর শিক্ষার্থীরাও সঠিকভাবে শিক্ষাটা গ্রহন করছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে প্রশিক্ষকদেরই।
তিনি বলেন, টিটিসির প্রশিক্ষনগুলো খুবই মান সম্মত। এর মান আরো বাড়াবোর স্কোপ রয়েছে। প্রশিক্ষকদের প্রতিটি শিক্ষার্থীকে মনিটরিং করতে হবে। ঝোকের মাঝে অনেক শিক্ষার্থী আসছে কিন্তু শিক্ষার্থীর অবস্থা বুঝে তার সাথে কথা বলে সে কি চাচ্ছে সেটা জানতে হবে।
তার সাথে কথা বলে যদি বুঝতে পারেন সে যেটা করছে তার থেকে অন্যটাতে আগ্রহ বেশি তাহলে তাকে সুইচওভার করে সেই ক্যাটাগরিতে দেন। আমার মনে হয়, এতে ভালো ফলাফল পাবেন।
আর প্রশিক্ষনে আগ্রহী করতে এটি ফলাউ করে প্রচার করতে হবে। যাতে বেশি লোক আসে এবং প্রশিক্ষন নিয়ে নিজের পায়ে দাড়াতে পারে। এতে বেকারত্ব কমবে।
প্রশিক্ষনার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন,বিদেশের কাজে বেতন বেশি। তারা বেতন বেশি দিলেও কাজ ১৬ আনাই আদায় করে নেয়, আমাদের দেশের মতো ৮ ঘন্টার স্থলে ৬ ঘন্টা কাজ করে আর বাকি দুই ঘন্টা গল্পগুজব-লাঞ্চ করে সময় কাটানো যাবে না। তাদের ওখানে ওয়ার্কিং হাওয়ার মানে ওয়ার্কিং হাওয়ার।
আপনারাই বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশের পথ সুগম করবেন। আপনারা ভালো কাজ করলে বাংলাদেশ আরো লোক যেতে পারবে, খারাপ কাজ করলে এটা সম্ভব হবে না। সেখানকার ডিসিপ্লিন মেনে চলবেন এবং দেশ ও নিজের পরিবারের জন্য সুনাম বয়ে আনবেন।
জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন টিটিসি’র অধ্যক্ষ মো. গোলাম কবির, মহিলা টিসিসি’র অধ্যক্ষ আলী আহম্মেদ ইমরান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) প্রশান্ত কুমার দাস, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনিবুর রহমান ও মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আলহাজ্ব মাহমুদুল হক খান মামুন।
অনুষ্ঠানে টিটিসি’র কারিগরি কোর্স সম্পন্ন করা ২৭৫তম ব্যাচের বিদেশগমনেচ্ছু ৫জন শিক্ষার্থীর মাঝে সনদ বিতরন করেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী। এর আগে প্রতিমন্ত্রী টিটিসি ও মহিলা টিটিসি’র সার্বিক কার্যক্রম পরিদর্শন করেন তিনি।