কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে চলে যাবার পর এটাই প্রথম সিরিজ বা টুর্নামেন্ট। তাও এমন এক সময়ে, যখন মাশরাফ, তামিম ও সাকিবদের দক্ষিণ আফ্রিকার দুঃস্বপ্ন আর খারাপ ফর্ম তাড়া করে বেড়াচ্ছে। ঠিক কঠিন সময়ে দলকে আবার গড়ে তোলার গুরু ও কঠিন দায়িত্ব বর্তেছে খালেদ মাহমুদ সুজনের কাঁধে। তিনি কি পারবেন, হাথুরুর অভাব পুষিয়ে দিতে? তার কি সেই সামর্থ্য আছে?
কোচ খালেদ মাহমুদ হয়ত ঢাকা লিগ ও বিপিএলে সফল। তাই বলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জাতীয় দলের পিছনের কারিগর হবার পর্যাপ্ত মেধা-সামর্থ্য, ক্রিকেট বোধ কি তার মধ্যে বিদ্যমান? আর এটা তো মিথ্যে নয় যে, ২০০৩ সালে খালেদ মাসুদ পাইলটের বদলে যখন সুজনকে অধিনায়ক করা হয়, তখন ক্রিকেটার সুজনের ইমেজ ছিল অনেক ক্লিন। জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে।
এখনও যে তার গায়ে কালো আঁচড় লেগেছে তা নয়। জনপ্রিয়তাও কমেনি তেমন। তবে বিসিবিতে পদে থাকা এবং ক্লাব ও বিপিএলে কোচিং করানোর কারণে এখনকার ইমেজটা ঠিক আগের জায়গায় নেই। মাঠের বাইরের নানা কারণে তাকে নিয়ে কটুবাক্য হয়। সমালোচকরা তীর্যক কথা বলেন। তিনিই সেরা বিকল্প নন। তার চেয়ে আরও ভালো বিকল্প খোঁজা যেত। এমন প্রশ্নও উঠেছে।
এসব প্রশ্ন যে তার কানে যায়নি, এমন নয়। গেছে। সব মহলেই গুঞ্জন, কেমন করবেন সুজন? তার এ নতুন যাত্রা কেমন হবে? এটা আবার তার জন্য বাড়তি চাপ হয়ে যাবে না তো? তিন জাতি টুর্নামেন্টের আগে প্রেস কনফারেন্সেও সুজনকে এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হলো, ‘আপনি ১৫ বছরের আগের মত এখন আর ‘পপুলার চয়েজ’ নন। এটা কিভাবে দেখছেন। ভিতরে কোনরকম চাপ অনুভব করছেন কি না?
খালেদ মাহমুদের আবেগতাড়িৎ জবাব, ‘আমি জানি না, আসলে কি! আমার জন্য আসলে এটা একটা সুযোগ। ২০০৩ সালে আমি যখন দায়িত্ব নিয়েছিলাম, ওই সময়টা খুব কঠিন ছিলো। তখন দলটাকে এক করার একটা কাজ ছিলো আমার। দায়িত্বটাও অনেক বেশি ছিলো। সে তুলনায় এখন কাজটা অনেক সহজ। কারণ এখন আমি অভিজ্ঞ। যদিও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমার কোচিংয়ের অভিজ্ঞতা কম; কিন্তু গত তিন-চারটা বিপিএলে কাজ করে, চাপ নেয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমি মনে করি, জাতীয় দলের চেয়ে বিপিএলে চাপ বেশি থাকে। জাতীয় দলে পরীক্ষিত ক্রিকেটার আছে। যারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দাপটের সাথে খেলেছে। তারা এগিয়ে যাচ্ছে । এখন তামিম যেভাবে ব্যাটিং করে, এটা তো আমরা বলতেই পারি যে- আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সেরা কয়েকজন ব্যাটসম্যানের কথা বলতে হলে, তামিমের কথা বলতেই হবে। ক্রিকেটার যারা আছে, তারা ছোট থাকতেই তাদের সঙ্গে কাজ করেছি। সুতরাং এই কাজটা আমার জন্য সহজ। আমি জানি না, আসলে কতটা কী করতে পেরেছি। বেশি কিছু অবশ্য করারও ছিলো না। সিনিয়রদের সাথে বেশি কাজ করিনি। কারণ, তারা তাদের কাজটা খুব ভালো জানে; কিন্তু তরুণ যারা আছে, তারা যদি পারফর্ম করা শুরু করে, আমি মনে করি আমাদের দলটা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে।’
সেই খেলোয়াড়ি জীবনে সীমিত সামরর্থ্য নিয়েও পাকিস্তানের মত মাহপরাত্রমশালী দলকে হারানোর মিশনে অগ্রণী ভূমিকা নেয়া সুজন সব সময়ই নানামুখি চাপকে অতিক্রম করে এতদুর এসেছেন। তাই তার কাছে এই তিন জাতি আসরের দায়িত্বপ্রাপ্তি কোন বাড়তি চাপ নয়।
তার ব্যাখ্যা, ‘চাপের কিছু নাই। এর চেয়ে বেশি চাপ আমি নিয়েছি। আমার কাছে তাই এটাকে বড় কিছু মনে হয় না। আমার কাছে মনে হয়- একটা সুযোগ আমার জন্য। যাদের সঙ্গে আমি কাজ করছি, এরা আমার চেনা। তারা সবাই খুবই সহায়তাপরায়ণ। টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গেও আমি সাড়ে তিন বছর কাটিয়েছি। প্লেয়ারদের মধ্যে মাশরাফি তো বলতে গেলে আমার টিমমেটই। সুতরাং আমার জন্য এদের সঙ্গে করা সহজই।’
নতুন বছর, নতুন সিরিজ। লক্ষ্য কি? খালেদ মাহমুদের কথা, ‘নতুন একটা বছর, নতুন একটা সিরিজ আমাদের জন্য। আর আমরা তো ভালো করার জন্যই কদিন অনুশীলন করলাম। আমরা মনে করি, চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত। এই টুর্নামেন্টে আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে চাই।’
তার দাবি প্রস্তুতিও হয়েছে বেশ ভালো, ‘আমরা স্পেসিফিক কিছু কাজের প্রতি নজর দিয়েছিলাম। আমরা বেশ ভালোভাবে প্রস্তুত। যেসব বিষয় নিয়ে চিন্তা ছিল আমরা সেগুলো নিয়ে কাজ করতে পেরেছি। ছেলেরাও সব কিছুতে সমর্থন করেছে, সবাই একাগ্র। আমরা যা করতে চেয়েছি, সেটা পেরেছি। যদিও প্রথম সপ্তাহটা আমাদের স্ট্রেন্থ ও কন্ডিশনের উপরে ছিল। তারপর পেস বোলার নিয়ে ওই সময় কাজ করেছি। যেটা আমাদের চিন্তা ছিল- নতুন বলের বোলিংটা। উইকেট নেওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে কোন ফরম্যাটে। বোলারদের সঙ্গে কাজ করে চেষ্টা করেছি লাইন এবং লেন্থ যত টাইট রাখতে পারি।’