২০০০ সালে এক মৌসুমে ৫ সেঞ্চুরি করেছিলেন ১৬ বছরের আশরাফুল!

:
: ৬ years ago

নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে গতবার প্রিমিয়ার লিগ খেলতে নেমে সুবিধা হয়নি। এবার বিসিএলে একটি শতরান অবশ্য করেছেন। কিন্তু প্রিমিয়ার লিগের মাঝামাঝি থেকে শেষ পর্যন্ত টানা ভালো খেলেছেন। এক পর্যায়ে পর পর দুই ম্যাচে শূন্য রানে আউট হবার পর একাদশ থেকে বাদ পড়ার অবস্থাও হয়েছিল। টিম ম্যানেজমেন্ট তাকে যে ম্যাচে ড্রপ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল, ঠিক সেই খেলায় শতরান করে আবার ফর্মে ফেরেন। তারপর আর পিছন ফিরে তাকাননি আশরাফুল।

এ ভালো খেলার পিছনের কাহিনী কী? এর আগে সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে আশরাফুল বলেছিলেন, তার বন্ধু ও সমবয়সী ক্রিকেটার এবং সেই ২০০০ সালে যার সাথে অনূর্ধ্ব-১৭ আর তারপর অনূর্ধ্ব -১৯ দলে খেলে জাতীয় দলের সদস্য হয়েছিলেন, সেই মাশরাফিই তাকে ফিটনেস সচেতন করে দেয়ার পর থেকে ব্যাটে স্বচ্ছন্দ ও সাবলীল হতে পেরেছেন।

মুটিয়ে যাওয়া ও পেটে বাড়তি মেদ জমে স্লথ হয়ে যাওয়া আশরাফুল চপলতা ও ক্ষিপ্রতা হারিয়ে ফেলেছিলেন। মাশরাফির পরামর্শে ফিটনেস সচেতন হয়ে ভাত খাওয়া ছেড়ে আর বাড়তি ফিটনেস ট্রেনিং করে আবার চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন তিনি।

এর বাইরেও কথা আছে। আজ  সঙ্গে আলাপে আশরাফুল জানিয়েছেন, তার এবারের লিগে ভালো খেলার রহস্য।

এক লিগে পাঁচ সেঞ্চুরি, স্বপ্নেও ভাবেননি। কিন্তু হয়ে গেছে। শুরুতে রান না পেলেও পরের দিকে মাঠে নেমে তিন অংকে পৌঁছে যাওয়া যেন অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছিলেন। কি করে তা সম্ভব হলো? আশরাফুলের গোছানো ব্যাখ্যা, ‘আমি স্বপ্নেও ভাবিনি এতগুলো সেঞ্চুরি করবো। প্রথম দিকে না হলেও পরের দিকে যখন রান করা শুরু করি, তখন আস্থা আর আত্মবিশ্বাস দুই-ই বেড়ে যায়। মনে হয় আরে রান তো আসছে!’

এই ভালো খেলার পিছনের কারণ খুঁজতে গিয়ে একটা বড় তথ্য দিয়েছেন আশরাফুল। আগেই জানা, নিজের রেকর্ড, পরিসংখ্যান ও তথ্য উপাত্ত এবং জাতীয় দলের সাফল্য-ব্যর্থতার খতিয়ান আশরাফুলের নখোদর্পনে। রেকর্ড আর পরিসংখ্যান নিয়ে ঘাটাঘাটি করা তার স্বভাব। নিজের পরিসংখ্যান, কবে কোথায় কেমন খেলেছেন, কোন সেঞ্চুরিতে কোন পজিসন দিয়ে কয়টি চার আর কোনটিতে লাইফ ছিল এবং কোনটা একদম নিখুঁত, সবই তার জানা।

তার অনুভব, এবার লিগে ভালো খেলার পিছনে তার অতীত পরিসংখ্যান নাকি বড় প্রভাব ফেলেছে। সেটাও নাকি ভালো খেলার একটা কারণ। এ সম্পর্কে আশরাফুলের কথা, ‘আমার ক্যারিয়ারের শুরু থেকে উইকেট ও পরিস্থিতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নেবার পর বেশির ভাগ সময় বড় ইনিংস খেলেছি। আমার বিগ ইনিংসের রেকর্ড বেশি। তাই ভালো সময়ের কথা মনে করে অনুপ্রেরণা খুঁজেছি। উজ্জীবিতও হয়েছে।’

ঢাকা লিগে দুটি ম্যাচে শুন্য করার পর যখন বাদ পড়তে যাচ্ছিলেন, তখন বলে কয়ে দলে এসে সেঞ্চুরি পাওয়াটাই আশরাফুলকে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আসল উদ্যম ও অনুপ্রেরণা ভিতরে আসে দুটি জিরো করার পর। পর পর দুই খেলায় শূন্য রানে ফেরার পর টিম ম্যানেজমেন্ট ও কোচ যখন আমাকে ড্রপ করার চিন্তা করছিলেন, তখন তাদের কাছ থেকে চেয়ে ম্যাচ নিয়ে সেই খেলায় শতরান করাটা আমার টার্নিং পয়েন্ট।’

এরপরই আশরাফুল জানালেন, অনেকের অজানা একটি তথ্য। বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক বলছিলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা, আমি কিন্তু জাতীয় দল ও যুব দলে (অনূর্ধ্ব ১৯) খেলার আগেও ক্যারিয়ারের প্রথম বছর এক মৌসুমে ছয় সেঞ্চুরি করেছিলাম। সেটা ২০০০ সালে।’

সেই সেঞ্চুরিগুলো কখন, কোথায় করেছিলেন-তাও আশরাফুলের মনে আছে। বিস্তারিত বলছিলেন এভাবে, ‘আমি তখন জাতীয় দল বহুদূরে। যুব দল মানে অনূর্ধ্ব-১৯ দলেই খেলিনা। সাড়ে ষোল বছরের কিশোর আমি তখন। ওই বছর এক মৌসুমে জাতীয় লিগ, অস্ট্রেলিয়ান একাডেমি আর এশীয় অনূর্ধ্ব-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপ মিলে পাঁচটি সেঞ্চুরি করেছিলাম। প্রথম বছর ঢাকা মেট্রোর হয়ে জাতীয় লিগে দুটি সেঞ্চুরি করি। তারপর অস্ট্রেলিয়ান একাডেমির বিপক্ষে একটি আর অনূর্ধ্ব-১৭ দলের হয়ে এশিয়া কাপে আরও একজোড়া শতক করি। ১৮ বছর পর আবার এক মৌসুমে ছয় শতরান। খুব ভালো লাগছে।’