#

বরিশাল-ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলের আভ্যন্তরিন নৌ-পথ নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে আজ শুক্রবার (০১ নভেম্বর) থেকে শুরু হচ্ছে ড্রেজিং কার্যক্রম। এ কার্যক্রমের আওতায় কীর্তনখোলাসহ বিভাগের বিভিন্ন নদীতে প্রায় ৩০ লাখ মিটার নদী ড্রেজিং করা হবে। যা আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বরিশাল নগরীর নদী বন্দরের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ আভ্যন্তরিন নৌ চলাচল কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ড্রেজিং বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মিজানুর রহমান ভূইয়া সাংবাদিকদের এই তথ্য জানিয়েছেন।

এসময় বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা ও নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-পরিচালক আজমল হুদা মিঠু সরকার, ড্রেজিং বিভাগের প্রকৌশলী এসএম শাহনেওয়াজ কবির, ড্রেজিং বিভাগের বরিশালের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী আবুবক্কর সিদ্দিকসহ বিভিন্ন লঞ্চ মালিক, মাস্টার এবং উন্নয়ন কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

মতবিনিময় সভায় ড্রেজিং বিভাগের বরিশাল অঞ্চলের দায়িত্বে থাকা তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মিজানুর রহমান ভূইয়া জানান, ‘এবার শুস্ক মৌসুমের এক মাস আগেই বিভিন্ন নদীতে নাব্যতা সংকট দেখা দেয়। উত্তরাঞ্চলে বণ্যার কারনে এবার দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীতে বেশি পলি জমেছে।

তিনি বলেন, ‘বণ্যার পানির সাথে এবার বাংলাদেশের নদ নদীতে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন মেট্রিকটন পলি এসেছে। যার মধ্যে বরিশালের নদ নদীতে ৪০ ভাগের বেশি পলি জমা হয়েছে। এ কারনে আগেভাগেই আমরা ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু করছি। নৌপথ নিরাপদ এবং নিরাপদ যাত্রার স্বার্থেই এই উদ্যোগ।

মিজানুর রহমান ভূইয়া বলেন, ‘ঢাকা-বরিশাল নৌ রুট সহ বিভাগের আভ্যন্তরিন রুটগুলোর অন্তত ২০টি পয়েন্টে নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। তবে সবগুলো পয়েন্ট এক সঙ্গে ড্রেজিং করা সম্ভব নয়। জনগুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ড্রেজিং করা হবে। প্রাথমিকভাবে ১ নভেম্বর থেকে দেশের প্রথম শ্রেণির বরিশাল নদী বন্দর এলাকায় কীর্তনখোলা নদীতে ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু করা হবে। দেশের প্রথম শ্রেণির এই বন্দর এলাকায় ১৪ মিটার পর্যন্ত খনন করা হবে। এজন্য দুটি ড্রেজিং ম্যাশিন ব্যবহার করা হবে এবং আগামী ২ মাসের মধ্যেই ড্রেজিং কার্যক্রম শেষ করা হবে।

অবশ্য এর আগেই লাহারহাট-ভেদুরিয়া রুটে ৩টি ড্রেজিং কার্যক্রম চলামান রয়েছে। সেখানে ৩টি ড্রেজার দিয়ে ড্রেজিং চলছে। এছাড়া ঢাকা-পটুয়াখালী নৌ রুটের কারখানা-কবাই পয়েন্টে ২টি ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু কাটা হচ্ছে। এখানে আরও একটি ড্রেজার সংযোজন হবে। আর লাহারহাট-ভেদুরিয়া রুট থেকে একটি ড্রেজার ইলিশায় নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানেও ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু হবে। সব মিলিয়ে বর্তমানে ৭টি ড্রেজার মেশিন থাকলেও আরও ৩টি সংযোজন করা হবে।

এদিকে মতবিনিময় সভায় বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটের নৌ-যাত্রা নিরাপদ করতে বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন লঞ্চ মালিক এবং মাস্টাররা। বিশেষ করে বরিশাল-ঢাকা নৌ-রুটের এমভি সুন্দরবন-৮ লঞ্চের মাস্টার মজিবর রহমান বলেন, ‘বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটের সব থেকে নিরাপদ চ্যানেল হচ্ছে আবুপুর-হিজলা ৬ নম্বর চ্যানেলটি। এখান থেকে একসময় লঞ্চ চলাচল করত।

এতে গন্তব্যে পৌছতে সময় যেমন কম লাগত তেমনকি লঞ্চে জ্বলানী খরচও কম ছিল। কিন্তু ওই রুটি দীর্ঘ বছর যাবত বন্ধ হয়ে আছে। পলি জমে নাব্যতা হারিয়ে ফেলায় সেখান থেকে এখন আর বড় কোন নৌ যান চলাচল করতে পারছে না। এ চ্যানেলের চার কিলোমিটার এলাকা ড্রেজিং করা হলে পুনরায় ওই রুটে লঞ্চ চলাচল সম্ভব হবে।

তাছাড়া বর্তমানে ঢাকা-বরিশাল নৌ রুটের মিয়ারচর চ্যানেলটিও গত দুই মাসের অধিক সময় ধরে বন্ধ হয়ে আছে। ঊলানীয়া চ্যানেলের ডানে এবং বামে চর পড়ে নৌযান চলাচল ব্যহত হচ্ছে। ওই রুটে বিপরিত দিক থেকে একটি নৌযান প্রবেশ করলে অপরদিক থেকে আসা নৌযান আর অতিক্রম করতে পারবে না। কালিগঞ্জেও একই সমস্যা। সেখানেও পলি জমে নদীর গভিরতা কমে গেছে।

মাস্টার এবং লঞ্চ মালিকদের দাবির প্রেক্ষিতে ড্রেজিং বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মিজানুর রহমান ভূইয়া বলেন, ‘আবুপুর-হিজলা চ্যানেলটি চালু করা অসম্ভব কিছু নয়। তবে সে জন্য লঞ্চ মালিকদের পক্ষ থেকে বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান বরাবর একটি আবেদন করতে হবে। বাকিটা বরিশাল নৌ বন্দর এবং ড্রেজিং বিভাগ করবে। তাছাড়া ওই রুটে ৫টি জাহাজ ডুবে ছিল। যা উদ্ধার করা হয়েছে।

তবে এই মুহুর্তে মিয়ারচর চ্যানেল সচল করা সম্ভব নয় জানিয়ে, বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা আজমল হুদা মিঠু সরকার বলেন, ‘ওই চ্যানেলটি রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের অধিনে দেয়া হয়েছে। তারাই ওই চ্যানেলটি খনন ও ড্রেজিং করবে। যে কারনে বিআইডব্লিউটিএ এই বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। তবে অন্য যেসব রুট রয়েছে সেগুলো খুব দ্রুতই ড্রেজিং কার্যক্রমের মাধ্যমে নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হবে বলে জানিয়েছেন ড্রেজিং বিভাগের তত্ত্ববধায়ক প্রকৌশলী মিজানুর রহমান ভূইয়া।

তিনি বলেন, ‘ড্রেজিং কার্যক্রমে কিছুটা সমস্যা বরাবরই থেকে যায়। গত বছর আমরা কালিগঞ্জে ড্রেজিং করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে স্থানীয়দের কাছ থেকে কোন সহযোগিতা পাইনি। নদী ভাঙনের আশঙ্কায় আমাদেরকে সেখানে ড্রেজিং করতে দেয়া হয়নি। এবারও ওই এলাকায় ড্রেজিং কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এজন্য সকলের সহযোগিতা চান কর্মকর্তারা।

তিনি বলেন, ‘নদীর বালু নদীতে ফেলার বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এ কারনে আমরা আগেই ঘোষনা দিয়েছে কারোর নিচু জমি থাকলে তা আমরা ড্রেজিং এর বালু দিয়ে ভরাট করে দিব। এজন্য কোন টাকার প্রয়োজন হবে না। তবে যে পরিমান ড্রেজিং হয় সেই পরিমান বালু ফেলার মত জমি বরিশালে নেই। তাই বাধ্য হয়েই সেগুলো নদীতেই ফেলতে হয়। তবে আমরা চেষ্টা করছি যেখানে জোয়ারের পানি সেখানে বালু ফেলার। এতে নদীতে বালু ভেসে যাবে।

উত্তর দিন

Please enter your comment!
এখানে আপনার নাম লিখুন