১৮ প্রভাবশালীর অবৈধ সম্পদের খোঁজে এনবিআর

:
: ৫ years ago

ক্যাসিনোর সঙ্গে সংশ্নিষ্টতার অভিযোগে রাজনীতিক, ঠিকাদার, ব্যবসায়ী, আমলাসহ ১৮ প্রভাবশালী ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অবৈধ সম্পদের হিসাব খতিয়ে দেখছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

ব্যাংক হিসাবের পাশাপাশি সন্দেহভাজন এসব প্রভাবশালীর নামে-বেনামে থাকা বাড়ি, গাড়ি, জমি ও ফ্ল্যাটসহ অন্যান্য স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি খুঁজে বের করতে মাঠে নেমেছেন এনবিআরের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। সূত্র বলেছে, অভিযুক্তদের অবৈধ আয়ের উৎস তদন্ত করা হচ্ছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে আয়-ব্যয়ের হিসাব। তারা ঠিকমতো কর দিয়েছেন কি-না, আয়ের উৎস কী, কোন ব্যাংকে কত টাকা গচ্ছিত আছে- এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তদন্ত শেষে অবৈধ সম্পদ পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে উল্লিখিত ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাব জব্দ ও তথ্য তলব করেছে এনবিআর।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, দুর্নীতিবাজ হিসেবে পরিচিত এসব প্রভাবশালীদের যাবতীয় সম্পদ খতিয়ে দেখতে তাদের আয়কর নথি তলব করা হয়েছে। সম্প্রতি এনবিআরের অধীন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল কর্তৃপক্ষ মাঠ পর্যায়ের কর অফিস থেকে এসব ফাইল সংগ্রহ করেছে।

দেশজুড়ে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা, ঠিকাদার, ব্যবসায়ী, বর্তমান ও অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী, পুলিশ কর্মকর্তাসহ অনেকের বিরুদ্ধেই ওই অবৈধ কর্মে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাদের অবৈধ সম্পদ তদন্ত করে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর।

অভিযুক্তদের মধ্যে অন্যতম বহিস্কৃত যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম। আরও রয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের সাংসদ নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, র‌্যাবের হাতে আটক বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ডিরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের নেতা এনামুল হক এনু ও রূপন ভূঁইয়া, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহসভাপতি এনামুল হক আরমান, অনলাইন ক্যাসিনো ব্যবসার মূল হোতা ও অপরাধ জগতের অন্যতম গডফাদার সেলিম প্রধান। এ ছাড়া আছেন পূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার সাহা (দুর্নীতির দায়ে বর্তমানে সাসপেন্ড), সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুল হাই, হাফিজুর রহমান মুনসী, কবির উদ্দিন ভুঁইয়া, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ফজলুল কবির প্রমুখ।

এনবিআরের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, সন্দেহভাজন এসব ব্যক্তির নামে-বেনামে একাধিক বাড়ি, গাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য রয়েছে। তাদের আয়কর ফাইলে এসব তথ্য রয়েছে কি-না তা যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে। সে জন্য আয়কর নথি তলব করা হয়। কোনো অসামঞ্জস্য পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

সম্পদ গোপন করে কর ফাঁকি দেওয়া আইনত অপরাধ। তদন্ত শেষে এ অপরাধে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করবে এনবিআর। একটি সূত্র বলছে, জি কে শামীমের নামে ঢাকায় একাধিক বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ও বাড়ি আছে। রয়েছে একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি। এ ছাড়া ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য শহরে বেনামে জমি কিনলেও এসব তথ্য তার আয়কর রিটার্নে গোপন করা হয়। এসব ফ্ল্যাট ও জমি কার নামে নিবন্ধন করা হয়েছে, তার তথ্য জানতে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে শিগগিরই চিঠি পাঠাবে এনবিআর। এরই মধ্যে তার ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। ব্যাংক থেকে পাঠানো তথ্যে দেখা যায়, জি কে শামীমের নামে অনেক এফডিআর রয়েছে যা গোপন করেন তিনি। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এসব তথ্য খতিয়ে দেখছেন।