হবিগঞ্জ জেলার লন্ডন প্রবাসী ৬৩ বছরের এক বৃদ্ধা ও ৪৭ বছরের এক মধ্যবয়সী পুরুষ গত ৩ জানুয়ারি দেশে ফেরেন। দুজনেই সঙ্গে করে নিয়ে আসেন আরটিপিসিআর ল্যাবরেটরি থেকে করোনামুক্ত থাকার নেগেটিভ সনদ। এছাড়া সরকারি নির্দেশনা মেনে তারা নিজ খরচে সরকার নির্ধারিত আবাসিক হোটেলে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে থাকেন।
দুই সপ্তাহ শেষ হওয়ার পর তাদের নমুনা সংগ্রহ করে আরটিপিসিআর ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়। ফলাফল হাতে পেয়ে সংশ্লিষ্ট সকলেই অবাক হয়ে যান। দুজনেই করোনা পজিটিভ। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর রোগতত্ত্ব ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়। এটা কিভাবে সম্ভব?
যুক্তরাজ্যের ল্যাবরেটরিতে করা নমুনা পরীক্ষার নেগেটিভ সনদ নিয়ে আসার পরও এই দুইজন কিভাবে, কোথা থেকে আক্রান্ত হলেন তা নিয়ে আলোচনা চলছে সর্বত্র। আপাতত তাদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য পাঠানো হয়েছে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, যুক্তরাজ্যে থেকে ফেরার পর ১৪ দিন আবাসিক হোটেলে অবস্থান সত্ত্বেও কেন করোনা পজিটিভ হলো, কোথা থেকে সংক্রমণ ঘটেছে, তাদের সংস্পর্শে যারা এসেছে তাদের কারো করোনা শনাক্ত হয়েছে কিনা, যদি হয়ে থাকে তাহলে সেটা করোনার বিশেষ কোনো ধরন কি না তা বের করতে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাজ্যে নতুন ধরনের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়ার কারণে তারা বেশি উদ্বিগ্ন। বিশেষ সতর্কতা হিসেবে তারা অন্যান্য দেশের চেয়ে যুক্তরাজ্যফেরত যাত্রীদের বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা এবং তাদের মনিটরিংয়ের ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। এমতাবস্থায় ১৪ দিন পর করোনা পজিটিভ শনাক্ত হওয়ার বিষয়টি তাদের রীতিমতো ভাবিয়ে তুলছে। তবে পুনঃপরীক্ষা করে তারা সত্যিই পজিটিভ কি না সেটাও পরীক্ষা করা হবে বলে জানান তারা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শাহরিয়ার বলেন, যুক্তরাজ্যেফেরত দুইজন যাত্রীর ১৪ দিনের কেয়ারেন্টাইনের পর নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ এসেছে। তবে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাতে অস্বীকৃতি জানান।
উল্লেখ্য, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) নির্দেশনা অনুযায়ী, ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে ১৫ জানুয়ারি রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত যুক্তরাজ্যফেরত সব যাত্রীকে (করোনা নেগেটিভ সনদ সঙ্গে নিয়ে এলেও) বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হচ্ছে। অবশ্য যাত্রীরা নিজ খরচে সরকার নির্ধারিত হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন।
আজ শনিবার (১৬ জানুয়ারি) থেকে যুক্তরাজ্যফেরত যাত্রীদেরকে ১৪ দিনের বদলে চারদিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।