১৩ বছর পর প্রথমবারের মতো পৃথিবীকে দেখছে শাহিনুর

:
: ২ years ago

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার লোহাগাছ গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম ও মাজেদা খাতুনের একমাত্র মেয়ে শাহিনুর আক্তার (১৩)। জন্মের পর থেকেই সে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। প্রথম সাত মাস কিছুটা দেখতে পেলেও এরপর থেকে পুরোপুরি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে যায় সে।

দীর্ঘ এক যুগ পর এখন নিজ চোখে পৃথিবীর সৌন্দর্য দেখতে পারছে শাহিনুর। তার চোখের আলো ফিরিয়ে আনতে সহযোগিতা করেছেন সাদ্দাম হোসেন নামের একজন রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী।

জন্মের ১১ মাস পর শাহিনুরের মা মারা যান। কয়েক মাসের মাথায় বাবা রফিকুল ইসলাম নিরুদ্দেশ হন। দ্বিতীয় বিয়ে করে আর বাড়ি ফেরেননি। খোঁজ নেননি মেয়ে শাহিনুরের। তাদের ফেলে যাওয়া এক বছর বয়সী মেয়েকে বুকে টেনে নেন চাচা শফিকুল ইসলাম ও চাচি সখিনা বেগম। তাদের অভাবের সংসারেই পরম আদর-যত্নে বড় হয় শাহিনুর।

শাহিনুরের চাচা শফিকুল ইসলাম পেশায় একজন রিকশাচালক। তার আয় দিয়ে পুরো সংসার চলছে। তিনি জানান, ৬-৭ মাস বয়স পর্যন্ত শাহিনুরকে দেখে কিছু বুঝতে পারেনি তার পরিবার। তবে ৯ মাস বয়সে তার আচরণ দেখে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর বিষয়টি বুঝতে পারেন তারা। এরপর আরেকটু বয়স বাড়ার পর বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়।

চোখে দেখতে না পারায় শাহিনুর ছোটবেলায় একা চলতে পারতো না। একটু বড় হওয়ার পর কোনোকিছুর সাহায্য নিয়ে ধরে ধরে ঘরের একপাশ থেকে অন্যপাশে যাওয়ায় অভ্যস্ত হয়। তবে আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় শাহিনুরের উন্নত চিকিৎসা করতে পারছিল না পরিবার। পরে সমাজসেবা কর্মকর্তার মাধ্যমে তার জন্য প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করা হয়।

কয়েক বছর ধরে ভাতার টাকা জমা করেন শাহিনুরের চাচা-চাচি। কিছু টাকা জমার পর গত বছরের নভেম্বরে চিকিৎসকের কাছে যান তারা। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর শাহিনুরের চোখে কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন চিকিৎসক।

শ্রীপুর উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের ট্রেড ইনস্ট্রাক্টর মো. আমিনুল ইসলাম শাহিনুরের চিকিৎসার জন্য ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেন। ওই পোস্ট দেখে শাহিনুরের চোখের চিকিৎসার জন্য সহযোগিতার হাত বাড়ান শ্রীপুরের নগরহাওলা গ্রামের বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন নামের এক রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী। এর আগেও তিনি ১১ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন।

পরে সাদ্দাম হোসেনের সহায়তায় রাজধানী ঢাকার ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে শাহিনুরের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। ওইসময় এক চোখে একটি লেন্স প্রতিস্থাপন করা হয়। এতে তার দৃষ্টিশক্তি কিছুটা ফিরে আসে। কয়েকমাস অপেক্ষার পর চলতি বছরের জুনে শাহিনুরের আরেক চোখে সফল অস্ত্রোপচার হয়।

শাহিনুরের চাচি সখিনা বেগম বলেন, চোখের অপারেশনের পর শাহিনুর চোখ খুলে অবাক হয়ে গেছে। চোখ খোলার সঙ্গে সঙ্গে সে চারদিকে তাকাচ্ছিল। সে খুশিতে সবাকে বলছিল, ‘আমি দেখতে পাচ্ছি’।

শাহিনুর জানায়, এটা তার জন্য নতুন জীবন। সে এখন সবকিছু ভালো দেখতে পায়। অন্য সবার মতোই সব কাজ নিজে করতে পারে। অন্ধ চোখে সবকিছু দেখতে পাওয়ার জন্য সাদ্দাম হোসেনকে কৃতজ্ঞতা জানায় শাহিনুর।

এ বিষয়ে সাদ্দাম হোসেন বলেন, তিনি একজন সাধারণ ব্যবসায়ী। নিজের আয় থেকে চিকিৎসা করিয়েছেন। তিনি শাহিনুরকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেবেন। তার লেখাপড়ার খরচও নিজে চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।