দেশীয় ওটিটি (ওভার দ্য টপ) কলিং সার্ভিস ‘আলাপ’ চালু হওয়ার পর ১৩ দিনেই তিন লাখেরও বেশি ব্যবহারকারী তা ডাউনলোড করেছেন। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) বিস্তৃত নেটওয়ার্ক আপডেট বা আধুনিকায়নের মাধ্যমে অ্যাপটি ব্যবহার করায় এটি কারিগরি অনেক সুবিধা পাচ্ছে। আর অন্যান্য ওটিটির চেয়ে এর সুবিধা বেশি হওয়ায় দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এর কয়েকজন ব্যবহারকারীর সঙ্গে কথা বলেও এর সত্যতা পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) কর্মকর্তারা জানান, ২৪ মার্চ থেকে আলাপ অ্যাপটি গুগল স্টোরে ছাড়া হয়। এরপর ৪ এপ্রিল অ্যাপটির উদ্বোধন করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। সরকারের জন্য অ্যাপটি তৈরি করে দিয়েছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান রিভ সিস্টেমস। অন্যদিকে টিএন্ডটি থেকে টিএন্ডটিতে ইন্টারনেট ডাটা ব্যবহার করে কথা বলার ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) বলেন, অ্যাপটি চালুর পর এখন পর্যন্ত তিন লাখেরও বেশি ব্যবহারকারী তা ডাউনলোড করেছেন। একই সঙ্গে এটাতে দুটি সুবিধা। একটা হচ্ছে- আলাপ অ্যাপের সঙ্গে আলাপে অন্যান্য যেসব ডাটাবেজ অ্যাপস আছে যেমন- হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, ম্যাসেঞ্জারের মতো ফ্রি কল করা যায়। আর দ্বিতীয় সুবিধাটি হলো- এটা থেকে সরাসরি যাদের আলাপ নেই শুধু টেলিফোন আছে তাদের সঙ্গেও কথা বলা যায়।
মোস্তফা জব্বার বলেন, আমার কাছে মনে হয়, এটি জনপ্রিয় হওয়ার বড় কারণ- এই দুই সুবিধা একসঙ্গে থাকা। কেউ ইচ্ছে করলে ডাটা ইউজ করতে পারে। আবার জাস্ট সরাসরি মোবাইলে যোগাযোগ করতে পারে। তুলনামূলকভাবে এতে মূল্য কম। কারণ আমাদের টেলকোগুলোর রেট যথেষ্ট হাই। কোনো কোনো সময় প্রতি মিনিটে দুই টাকা পর্যন্ত কাটে। সেক্ষেত্রে আলাপে ৩০ থেকে ৩৫ পয়সায় কথা বলা যায়। আরেকটি কথা হলো- আমাদের বিটিসিএলের বিস্মৃতি তুলনামূলকভাবে অন্যদের চাইতে বেশি। বিটিসিএল একটি লেভেল পর্যন্ত পৌঁছেছে। তাই মানুষের কাছে এর জনপ্রিয়তা রয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের যে দুর্বলতা সেটা হলো- আমাদের ইনফ্রাস্ট্রাকচার আপডেট করা দরকার ছিল। সেটা আমরা বহুদিন করতে পারিনি। কিন্তু এখন আমরা আপডেট করছি।
তিনি বলেন, ডাক বিভাগ ও বিটিসিএলের মত নেটওয়ার্ক কারো পক্ষে গড়ে তোলা কঠিন। আমাদের যে ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক আছে, এটা কারোর নেই। একই সঙ্গে আমাদের উপজেলা লেভেল পর্যন্ত এক্সচেঞ্জগুলো থেকে গেছে। এইসব পুরোনো টেকনোলজিগুলোর যেসব জায়গায় কাজ করা দরকার, আমরা এখন সেগুলোর কাজ করছি। যখন পুরো বাংলাদেশের উপজেলা স্তর পর্যন্ত আপডেট হবে তখন আরও ভালোভাবে কাজ করতে পারব। এখন যেহেতু ডিমান্ড বেড়েছে তাই ডাটা ইউজ করে টিএন্ডটি থেকে টিএন্ডটিতে কথা বলার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমরা সেই ফ্যাসিলিটিটা তৈরি করছি।
তিনি বলেন, আমরা খুশি যে, মানুষের কাছ থেকে সেই পরিমাণ রেসপন্স পেয়েছি। আমরা আশা করি, এটি আরও বেশি বিস্তৃত হবে।
জানা গেছে, আলাপ থেকে আলাপে কথা বলা যাবে বিনামূল্যে। তবে ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে। আলাপ থেকে যেকোনো মোবাইল বা ল্যান্ডফোনে কথা বললে প্রতি মিনিটে খরচ হবে ৩০ পয়সা (এর সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট যুক্ত হবে)। আবার যেকোনো মোবাইল বা ল্যান্ডফোন নম্বর থেকেও আলাপে কল করা যাবে।
বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. রফিকুল মতিন জানান, ডাটা (ইন্টারনেট খরচ) ব্যবহার করে হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, ইমোতে নিজেদের মধ্যে কথা বলা যায়। মোবাইল নম্বর বা ল্যান্ডফোনে করা যায় না। আলাপে এই সমস্যা নেই।
গুগল প্লে স্টোর, অ্যাপল স্টোর থেকে আলাপ (alaap) লিখে সার্চ দিলে অ্যাপটি পাওয়া যাবে। অ্যাপটি ডাউনলোড করে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলেই কথা বলা যাবে আলাপ দিয়ে। দেশে ব্রিলিয়ান্ট, আম্বার আইটিসহ আরেকটি ওটিটি অ্যাপ চালু রয়েছে। আলাপ হলো- দেশের চতুর্থ ওটিটি অ্যাপ। আরও চারটি অ্যাপ চালুর জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো বিটিআরসি থেকে সম্প্রতি অনুমোদন পেয়েছে।
বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আইটি বিশেষজ্ঞ আরিফুর রহমান আরমান বলেন, আলাপ অ্যাপটি আমি শুরু থেকেই ব্যবহার করছি। দেশীয় অন্যান্য ওটিটির চেয়ে এটি অনেক ভালো। এছাড়া বিদেশি ওটিটি বা কলিং সার্ভিস থেকে ইন্টারনেটবিহীন মোবাইলে ফোন যায় না। কিন্তু আলাপ থেকে টিএন্ডটিতেও কথা বলা যায়।