১০ লাখ টাকার বেশি সম্পদ কিনতে অনুমতি লাগবে

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদ অর্জনের পরিসীমা দ্বিগুণ হচ্ছে। এখন থেকে পাঁচ লাখ টাকার নিচে অস্থাবর সম্পত্তি ও ১০ লাখ টাকার নিচে স্থাবর সম্পত্তি কিনতে তাদের সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে না। তবে এর বেশি টাকার সম্পত্তি কিনতে সরকারের অনুমতি নিতে হবে। আয়ের উৎস সম্পর্কেও জানাতে হবে সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। তা ছাড়া এখন থেকে তারা যে কোনো জায়গা থেকে ৫০ হাজার টাকার উপহারও নিতে পারবেন। সরকারি কর্মচারীর স্বামী বা স্ত্রী রাজনৈতিক সংগঠনে যুক্ত হলে সংশোধনী বিধিমালায় সরকারকে তা জানানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে সরকারকে জানিয়ে তারা রাজনীতি করতে পারবেন।

বিদ্যমান বিধিমালায় অনুমতি ছাড়াই সরকারি কর্মচারীরা আড়াই লাখ টাকার অস্থাবর সম্পত্তি ও পাঁচ লাখ টাকার স্থাবর সম্পত্তির মালিক হতে পারতেন। তা ছাড়া শ্বশুরবাড়িসহ যে কোনো জায়গা থেকে ২৫ হাজারের বেশি টাকার উপহার নিতে পারতেন না। এসব ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনে ও নতুন বিধান যুক্ত করে সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা, ১৯৭৯-এর সংশোধনী খসড়া চূড়ান্ত করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। শিগগিরই এটি প্রণয়ন করা হবে। আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘনের অপরাধ অসদাচরণ বলে গণ্য হবে। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার বিধান বহাল রাখা হয়েছে।

গত এক দশকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা কয়েক দফা বাড়লেও সম্পদ অর্জনের সীমা রয়েছে আগের মতোই। তবে তাদের পক্ষ থেকে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির সীমা বাড়ানোরও দাবি উঠেছে। তাদের মতে, সম্পদ সংরক্ষণের বর্তমান সীমা বাস্তবসম্মত নয়। এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে আচরণ বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিধিমালার খসড়া তৈরিতে সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে একটি উপকমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি স্টেকহোল্ডারদের মতামত নিয়ে একাধিক বৈঠকের মাধ্যমে খসড়া চূড়ান্ত করেছে।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সদ্য বিদায়ী সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা সংশোধনের লক্ষ্যে কয়েক দফা বৈঠকও হয়েছে। তবে বিধিমালার মূলত কয়েকটি ধারায় সংশোধনী আসছে। কিছু নতুন বিষয় যুক্ত করার চিন্তাভাবনাও রয়েছে। বিধিমালায় যেসব অস্পষ্টতা রয়েছে, তা দূর করার প্রচেষ্টাও রয়েছে।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অপর একটি সূত্র জানায়, আচরণ বিধিমালা সংশোধনীর একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদ অর্জন ও উপহার গ্রহণের পরিমাণ বাড়ানোর পক্ষে মত পাওয়া গেছে। তাদের অধিকাংশই মনে করছেন, বিদ্যমান বিধিমালা বাস্তবের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এসব দিক বিবেচনা করে বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদ অর্জন ও উপহার গ্রহণের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে।

অভিযোগ, বিদ্যমান সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালার অনেক অস্পষ্টতা কাজে লাগিয়ে অনেক অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে অস্বাভাবিক পরিমাণ অর্থ ও সম্পদের মালিক হয়েছেন। বর্তমান বিধিতে বলা আছে, ইমারত নির্মাণ করতে হলে আয়ের উৎস উল্লেখ করাসহ সরকারের পূর্বানুমোদন নিতে হবে। তাই সরকারি কর্মচারীরা বাড়ি নির্মাণ করার বদলে বাড়ি ও ফ্ল্যাট কিনছেন। এতে আয়ের উৎস দেখাতে হচ্ছে না কিংবা সরকারের অনুমোদন নিতে হচ্ছে না।

সংশোধিত বিধিতে বলা হচ্ছে, বাড়ি কিংবা ফ্ল্যাট নির্মাণ বা কেনার ক্ষেত্রে প্রকৃত বাজারদর উল্লেখ করে বিনিয়োগকৃত অর্থের উৎস জানানোর পাশাপাশি সরকারের পূর্বানুমোদন নিতে হবে। অর্থাৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীর আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সঙ্গতি না থাকলে অনুমোদন মিলবে না। আত্মীয়স্বজন কিংবা কারও কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ দেখালে সে বিষয়েও সংশ্নিষ্ট ঋণ প্রদানকারীর পক্ষ থেকে লিখিত প্রত্যয়নপত্র থাকতে হবে। আপন ভাই হলেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। আয়কর রিটার্নেও এসব বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য থাকতে হবে। সংশোধনীতে সরকারি কর্মচারীদের সামাজিক দাওয়াত খাওয়ার ওপর নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। অনেক সময়ই সরকারি কর্মকর্তারা প্রটোকলের বাইরে কর্মস্থল এলাকায় ঠিকাদারসহ সমাজের বিশেষ ব্যক্তিদের বাসায় গিয়ে কিংবা নিমন্ত্রণ পার্টিতে দাওয়াত খেয়ে থাকেন। অনেক নিমন্ত্রণদাতাই এভাবে প্রশাসনিক সুবিধা নেওয়া এবং নিমন্ত্রণ রক্ষাকারী ও দাতা উভয়েই নানা দুর্নীতি প্রশস্ত করে থাকেন। তাই ডিসি-এসপিসহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তার কর্মস্থলের আশপাশের এলাকায় দাওয়াত খেতে পারবেন না। অবশ্য নিকটাত্মীয় ও স্বজনদের বিয়েশাদি ও সামাজিক অনুষ্ঠান এর আওতাভুক্ত হবে না। নতুন এ বিধিমালার কারণে সরকারি কর্মকর্তারা ইচ্ছা করলেও যত্রতত্র দাওয়াত খেতে পারবেন না।

সংশোধিত বিধিমালার ২৭(বি) ধারাকে আরও স্পষ্ট করা হচ্ছে। এই ধারা অনুযায়ী, সরকারি কর্মচারীর স্বামী বা স্ত্রী রাজনৈতিক সংগঠনে সম্পৃক্ত হলে তা সরকারকে বাধ্যতামূলকভাবে জানাতে হবে। বিদ্যমান বিধিমালায় এ নিয়ম থাকলেও তা তেমন প্রতিপালন হতো না। কিন্তু সংশোধনীতে এ নিয়ম প্রতিপালন বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী রাজনীতিতে বা কোনো রাজনৈতিক সংগঠনে সম্পৃক্ত হতে পারবেন না। কারও বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে বরখাস্ত করা হবে। আরেকটি উপধারায় বলা হয়েছে, সরকারি কর্মচারীর স্বামী বা স্ত্রী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হলে সরকারকে তা জানাতে হবে। কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী এ বিষয়ে না জানালে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিধিমালায় প্রতিবছরের জানুয়ারির মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বার্ষিক মূল্যায়ন রিপোর্ট (এসিআর) জমা দেওয়ার বিধানও রাখা হচ্ছে।