বরিশালে উপজেলা পরিষদ চত্বরে শোক দিবসের ব্যানার অপসারণকে কেন্দ্র করে বাসভবনে হামলার পর সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ার আগেই বদলির আদেশ হয়েছিল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুনিবুর রহমান।
গত ১০ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে তাকে বদলি করে আদেশ জারি করা হয়। মুনিবুর রহমানকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবে বদলি করা হয়েছে।
বরিশাল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত ১০ আগস্ট মুনিবুর রহমানকে বদলি করা হয়। একই সঙ্গে এসিল্যান্ড করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় তিনি (মুনিবুর রহমান) বদলি করা জায়গায় যোগ দিতে পারেননি। তাকে ছাড়পত্র দেয়া হয়নি। তিনি হয়তো শিগগিরই নতুন কর্মস্থলে যোগ দেবেন।
গত ১৮ আগস্ট রাতে বরিশালের সিঅ্যান্ডবি সড়কে উপজেলা পরিষদ চত্বরে শোক দিবসের ব্যানার অপসারণকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে রাতভর সংঘর্ষ হয়। এ সময় ইউএনও’র সরকারি বাসভবনেও হামলার অভিযোগ করা হয়।
ইউএনও মুনিবুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে শোক দিবস উপলক্ষে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুকের ব্যানার ও পোস্টার লাগানো ছিল। রাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসব ছিঁড়তে আসেন। রাতে লোকজন ঘুমাচ্ছে জানিয়ে তাদের সকালে আসতে বলা হয়। এ কারণে তারা গালিগালাজ করে। আমার বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হামলা চালায়।’
পরের দিন ১৯ আগস্ট ইউএনও ও পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা হয়। ইউএনও’র মামলায় বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে হুকুমের আসামি করা হয়।
১৯ আগস্ট রাতে এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানায় বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। অ্যাসোসিয়েশনের পাঠানো প্রেস রিলিজে জানানো হয়, ‘মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ও তার দুর্বৃত্ত বাহিনী সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের দিয়ে নানা প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে এবং সমস্ত জেলায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।’
এতে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এমন কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা জানায় ও বরিশালের মেয়র যার অত্যাচারে সমগ্র বরিশালবাসী অত্যন্ত অতিষ্ঠ সেই সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর হুকুমেই এ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে বলে তারা মনে করেন। অতএব, অ্যাসোসিয়েশন অবিলম্বে তার গ্রেফতার দাবি করছে এবং তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অঙ্গীকার ব্যক্ত করছে।’
এই বিজ্ঞপ্তি তুমুল আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দেয়। এর মাধ্যমে প্রশাসনের কর্মকর্তা ও রাজনীতিকদের দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। অনেকেই এটাকে বাড়াবাড়ি বলে মন্তব্য করেছেন।
পরে গত রোববার (২২ আগস্ট) রাতে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনে প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের সমঝোতা বৈঠক হয়। বৈঠকে উভয়পক্ষ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দায়ের করা মামলাগুলো প্রত্যাহার করে নেওয়ার ব্যাপারে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছেন। বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল ইসলাম বাদলের আহ্বানে নগরীর রাজা বাহাদুর সড়কে তার সরকারি বাসভবনে এ বৈঠক হয়।