১০০ টাকার চেয়ারে বিএনপির ৩০ টাকার ইফতার

:
: ৫ years ago

রাজনীতিবিদদের সম্মানে জনপ্রতি ৩০ টাকা মূল্যের বিএনপি যে ইফতার করিয়েছে, তা নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। মঙ্গলবার রাজধানীর ইস্কাটনের লেডিস ক্লাবে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। দলীয় সূত্র জানায়, ৬৫ হাজার টাকা দিয়ে লেডিস ক্লাবের হলরুম ভাড়া করে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে বিএনপি।

৩০ টাকার এই ইফতারে ছিল- দুটি খেজুর, একটা জিলাপি, একটা বেগুনি, একটা পেয়াজু, ছোলা ভাজি, মুড়ি ও ছোট এক বোতল (৩৩০ মিলি) পানি।

দলটির চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবীর খান বলেন, হলরুমের ভেতরে ৭’শ চেয়ার বরাদ্দ রয়েছে। হলরুমের ভেতরে-বাইরে প্রায় পাঁচ হাজার লোকের আয়োজন করা হয়।

বিএনপির এই আয়োজনে ২০ দলীয় জোট এবং ঐক্যফ্রন্টের শরিক নেতারা অংশ নেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকেও ইফতার মাহফিলে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে তাদের কোনো নেতাকে ইফতার অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি। এদিকে যুক্তফ্রন্টের শরিক নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে জানা গেছে।

ইফতার মাহফিলে যোগ দেয়া বিএনপি ও ২০ দলের নেতাদের মধ্যে ৩০ টাকার ইফতার নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। তবে এ নিয়ে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি।

ইফতারে অংশ নেয়া ২০ দলীয় জোটের একটি শরিক দলের চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, বিএনপির এই নাটকের দরকার ছিল না। খালেদা জিয়া তো এসি রুমে ঘুমাচ্ছেন না। তাহলে নেতারাও এসি রুমে না ঘুমিয়ে থাকেন? সারা দিন রোজা থাকার পর ইফতারে এই ধরনের খাবার স্রেফ নাটক ছাড়া কিছু নয়। বিএনপির যদি খালেদা জিয়ার জন্য এতোই দরদ থাকতো, তাহলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গিয়ে ইফতারের আয়োজন করতো। সেটা মানানসই ছিল।

এদিকে বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, চেয়ার ভাড়া করতে খরচ হয়েছে একশ টাকা আর ইফতারি হচ্ছে ৩০ টাকার। এটার কোনো দরকার ছিল বলে আমি মনে করি না। প্রতিবাদ করতে হলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রতিদিন একেকটি ইউনিট বা অঙ্গসহযোগী সংগঠন ৩০ টাকার মধ্যে ইফতারের আয়োজন করতো, সেখানে একজন স্থায়ী কমিটির সদস্যকে প্রধান অতিথি রাখলে তা আরও বেশি কার্যকরী হতো।

তবে ৩০ টাকা মূল্যের ইফতারিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, ভালো হয়েছে, ম্যাডাম ৩০ টাকায় ইফতারি করেন। আমরাও করেছি।

২০ দলীয় জোটের শরিক লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ইরান বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় কারাবন্দি রাখা হয়েছে। তাকে সরকার ৩০ টাকার ইফতারি দিয়েছে। আজকে ৩০ টাকার ইফতারি করে তারই প্রতিবাদ করা হয়েছে।

তবে ইফতারির আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আমাদের এই আয়োজনে অংশ নিতে হচ্ছে। আপনারা সবাই জানেন, গণতন্ত্রের মাতা দীর্ঘদিন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, লড়াই করেছেন। তাকে সম্পূর্ণ একটি মিথ্যা মামলায় কারাগারে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এই রমজান মাসে যখন আমরা এখানে সমবেত হয়েছি, তখন তিনিও কারাগারে থেকে বন্দি অবস্থায় পিজি হাসপাতালের ছোট্ট একটি কক্ষে ইফতারের জন্য অপেক্ষা করছেন। তার ইফতারের জন্য সরকারের বরাদ্দ মাত্র ৩০ টাকা। সেজন্যই আজকে আমাদের ইফতারের আয়োজনও ৩০ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছি।

তিনি বলেন, আমরা অভ্যাগত সুধীবৃন্দের কাছে, আমাদের অতিথিদের কাছে অনুরোধ জানাব- আপনাদের কষ্ট হলেও দয়া করে এটাকে স্বীকার করে নেবেন। শুধুমাত্র সেই নেত্রীর প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য।

এ সময় খালেদা জিয়াসহ আটক নেতা-কর্মী ও তাদের পরিবারের জন্য দোয়া চান বিএনপি মহাসচিব।