বাফুফে ভবনে বসে কাল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন দুঃখ করে বলছিলেন, ‘চারদিক থেকে এখন আমার সমালোচনা হয়। আপনারা মিডিয়ার লোক আমাকে তুলোধুনো করেন। আমার একসময়ের বন্ধুরা আমাকে গালি দেয়, আমি সব জানি। তবে এসব আমার গায়ে মাখার দরকার নেই। আমি জানি আমার গ্রহণযোগ্যতা কোথায় আর আমাকে কী করতে হবে।’
নিজের গ্রহণযোগ্যতা বোঝাতে সালাউদ্দিন প্রথমেই উদাহরণ হিসেবে টেনেছেন দক্ষিণ এশীয় ফুটবল ফেডারেশনকে (সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন, সাফ), যে আঞ্চলিক ফুটবল সংস্থার সদস্য দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশ। সালাউদ্দিন বললেন, ‘এই তো সামনেই সাফের নির্বাচন। আরও এক মেয়াদ সাফের সভাপতি হিসেবে থেকে যেতে অনুরোধ পাচ্ছি আমি।’
আগামী ১১ এপ্রিল ঢাকায় সাফের কংগ্রেস। এখানেই আগামী চার বছরের জন্য সাফের নতুন সভাপতি নির্বাচিত হবেন। টানা দুই মেয়াদের নির্বাচিত সভাপতি সালাউদ্দিন আবারও সভাপতি পদে নিজের প্রার্থিতা পেশ করেছেন। ২৬ মার্চ মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। সাফের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক হেলালের কাছ থেকে জানা গেল, সাফ সচিবালয়ে আর কোনো মনোনয়নপত্র এ পর্যন্ত জমা পড়েনি। তাঁর ধারণা, আর কোনো মনোনয়নপত্র জমা পড়ার সম্ভাবনা কম। অর্থাৎ বাফুফের মতো সাফেও হয়তো সভাপতি হিসেবে ‘হ্যাটট্রিক’ করতে চলেছেন বাংলাদেশের সাবেক তারকা স্ট্রাইকার। পার্থক্য হলো, বাফুফেতে তাঁকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিততে হয়েছে দুইবার, আর তৃতীয়বার সাফে নির্বাচিত হতে চলেছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। শেষ মুহূর্তে অন্য কেউ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড়িয়ে যেতে পারেন কি না বলতে পারছেন না সালাউদ্দিন। ‘হলে হবে। আমি তো মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে দিয়েছি’, বলেছেন তিনি। যদিও নিজেই জানিয়েছেন, ২০ মার্চ মালয়েশিয়ায় দক্ষিণ এশিয়ার সাত দেশের ফুটবল ফেডারেশনের প্রধানদের বৈঠকে ডেকেছেন এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের (এএফসি) সভাপতি সালমান বিন ইব্রাহিম আল খলিফা। এই বৈঠকেই সাফের সভাপতি হিসেবে সালাউদ্দিনকে সবাই একমত হয়ে মেনে নেবেন কি না জানেন না সালাউদ্দিন, শুধু বলেছেন, ‘এএফসি প্রেসিডেন্ট ব্যক্তিগত কারণে এই মিটিং ডেকেছেন।’
প্রসঙ্গত, কাজী সালাউদ্দিন প্রথম দফায় ২০০৮ সালে বাফুফে সভাপতি নির্বাচিত হন, দ্বিতীয় মেয়াদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন ২০১২ সালে। তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হন ২০১৬ সালে। ১৯৯৭ সালে সাফ গঠিত হওয়ার পর থেকেই এটির প্রশাসনে বাংলাদেশের ফুটবল কর্মকর্তাদের বেশ দাপট। সাফের দ্বিতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বাফুফের সাবেক কর্মকর্তা প্রয়াত সিরাজুল ইসলাম বাচ্চু। ২০০৯ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সভাপতি রয়েছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। ২০১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন বাফুফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক হেলাল। সাধারণ সম্পাদকের পদটি অবশ্য বেতনভুক্ত এবং তাঁকে মনোনয়ন দেন সভাপতি।
সাফের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য দেশ ছয়টি—বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা। ২০০০ সালে ভুটান এবং ২০০৫ সালে আফগানিস্তান সাফে যোগ দেয়। ২০১৫ সালে সাফ থেকে বেরিয়ে মধ্য এশীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনে (কাফা) যোগ দেয় আফগানিস্তান।