হোল্ডিং কর নির্ধারনে নানা অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে ওই সকল অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ নিজেই উদ্যোগী হয়েছেন। তার এ উদ্যোগের ফলে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ইতোমধ্যে অনিয়মের আশ্রয় নেয়াসহ চাকুরী বিধিমালা ভঙ্গের অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের চিফ এ্যাসেসর আ.ন. ম মোশফেক আহসান আজমকে চাকুরী থেকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। এছাড়া একই অপরাধে কেন তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের হবেনা তা ৭ কার্যদিবসের মধ্যে জানাতে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ সংক্রান্ত এক অফিস আদেশ প্রদান করেছেন। ওই আদেশ সূত্রে জানা গেছে, চিফ এ্যাসেসরের দায়িত্ব পালনকালে মোশফেক আজম উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই বিভিন্ন সময়ে একক ক্ষমতাবলে কর নির্ধারন বোর্ড বসিয়ে অবৈধভাবে কর ধার্য করেছেন। যা বিসিসির চাকুরী বিধিমালার ৩৮ এর ( খ) ধারার অপরাধ। এছাড়া মোশফেক আজমের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনকালে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। বিসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা বেলায়েত হাসান বাবলু এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, হোল্ডিং কর নির্ধারনের বিষয়ে সংক্ষুদ্ধ কয়েকজন গ্রাহক এব্যাপারে অনিয়মের নানা অভিযোগ তুলে মেয়র বরাবর আবেদন করেন। আবেদনের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক এব্যাপারে নিজেই তদন্ত শুরু করেন। প্রাথমিক তদন্তেই ব্যাপক অনিয়মের বিষয়টি তার সামনে চলে আসে। তদন্তে দেখা যায়, হোল্ডিং কর নির্ধারনে অনেক ক্ষেত্রে কোন নিয়ম নীতি ও আইনের তোয়াক্কা করা হয়নি। কোন কোন ক্ষেত্রে স্থাপনার পরিবর্তন না হলেও গ্রাহককে নোটিশ দিয়ে তাদের করের পরিমান কয়েক শত গুন বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। মেয়র এব্যাপারে কর ধার্য্য শাখার সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেন এবং ফাইল তলব করেন। এব্যাপারে চিফ এ্যাসেসরের দায়িত্বে থাকা মোশফেক আজম কোন সদুত্তর না দিয়ে নিজের দোষ ঢাকতে গনমাধ্যম কর্মীদের কাছে বক্তব্য প্রদান করেন। জনসংযোগ কর্মকর্তা বলেন, অনিয়মের তদন্ত কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত মেয়র মহোদয় কর নির্ধারন বোর্ড কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করেছেন। এব্যাপারে মেয়রের বক্তব্য হচ্ছে অনিয়ম করে কেউ পার পাবেনা। তদন্তে অনিয়মের ক্ষেত্রে আর কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধেও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি বিসিসির কারো ভুলে কোন গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেই গ্রাহকের দেয়া অভিযোগ আমলে নিয়ে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এদিকে বিসিসির আলোচিত সমালোচিত মোশফেক আজমকে চিফ এ্যাসেসর থেকে সরিয়ে দেয়ায় নগর ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সাধারণ নাগরিকরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিসির একাধিক কর্মকর্তা বলেন মোশফেক আজম একজন দূর্নীতিপরায়ন লোক। হোল্ডিং কর নির্ধারনে অনিয়মের ক্ষেত্রে আজমের আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি ছিল অনেকটা ওপেন সিক্রেট। তিনি নিজে ঘুষ গ্রহনের পাশাপাশি কর ধার্য্য ও কর আদায় শাখার তার সহকর্মীদের ঘুষ গ্রহনের বিষয়ে উৎসাহিত করতেন। বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ দায়িত্ব গ্রহনের পর মোশফেক আজম প্রকাশ্যে ঘুষ গ্রহন অনেকটা কমিয়ে দিলেও তার অপকর্ম একদিনের জন্যও বন্ধ করেননি। বিভিন্ন সময়ে একক ক্ষমতাবলে তিনি যেমন বোর্ড বসিয়ে অবৈধভাবে কর ধরেছেন আবার তার নিজেরসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের কর ধার্যের ক্ষেত্রে বিরত থেকেছেন। গ্রাহকেরা অভিযোগ করেছেন বর্তমান পরিষদের আগে মোশফেক আজম অনৈতিক সুবিধা গ্রহন করে কয়েক লাখ টাকার মালিক হয়েছেন। তার কখনোই বেতন বোনাসের টাকায় হাত দিতে হতোনা। জানা গেছে অনিয়মে জড়িত থাকার দায়ে তিনি একবার চাকুরীচ্যুত হয়ে দীর্ঘ ১৭ বছর কাজে যোগদান করা থেকে বিরত ছিলেন। পরে আহসান হাবিব কামাল মেয়র থাকাবস্থায় তাকে মোটা অংকের অর্থ দিয়ে পুনরায় চিফ এ্যাসেসরের দায়িত্ব আসেন তিনি। সর্বশেষ মেয়র অনিয়মের বিষয়ে নিজে তদন্ত শুরু করলে আজমসহ হোল্ডিং করের নানা অসঙ্গতির বিষয়টি সামনে চলে আসে। জানা গেছে তদন্ত কাজ শেষ হলে আরো কয়েকজনের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হতে পারে।