কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালের প্রধান সহকারী দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ঘুষ-দুর্নীতি প্রমাণ হওয়ায় এর আগে একবার তাকে বদলি করা হয়েছিলো। কিন্তু নিজেকে বহাল রাখতে দেলোয়ার আদালতে মামলা করে বদলি ঠেকান। এরপরও তার অপকর্ম অব্যাহত থাকায় এবার বিভাগীয় মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়।
গত ২২ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের প্রশাসন-১ অধিশাখার উপসচিব জাকিয়া পারভীন এক চিঠিতে বিভাগীয় মামলা দায়ের করতে কুমেক হাসপাতাল পরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন।
৪৫.০১.০০০০.১৪০.২৭.০০১.১৭(অংশ-১)-১৪১৬ নং স্মারকের ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, দেলোয়ারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, সরকারি অর্থ আত্মসাতসহ বিভিন্ন অভিযোগ পেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়। ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট অধিদপ্তর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবের কাছে দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদনে দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে উত্থাপিত দুর্নীতি, সরকারি অর্থ আত্মসাতসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে বলে উল্লেখ করে। অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয়/ফৌজদারি মামলা (যা অধিকতর যৌক্তিক) দায়ের করে দেলোয়ার হোসেনকে হাসপাতালের প্রশাসনিক ও আর্থিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে চিঠিতে।
চিঠি প্রাাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত হতে কুমেক হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মাহবুব আলমের কাছে ফোন করলে তিনি মোবাইলে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি নন, যা জানার সরাসরি গিয়ে জানতে হবে বলে কল কেটে দেন।
এর আগে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তার ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পেয়ে চলতি বছর ১ মার্চ তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যোগদান করতে তিন কার্যদিবস সময় বেঁধে দিয়েছিলো। দেলোয়ার হোসেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করে তার বদলি আদেশ স্থগিত করেন। করোনা পরিস্থিতিতে সকল আদালত বন্ধ থাকায় এর মাঝে দেলোয়ারের করা মামলার শুনানির তারিখ ছিলো, তবে শুনানি হয়নি। এখন আদালত খোলা হলেও এরই মাঝে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে শীর্ষ পর্যায়ের পদে পরিবর্তন এসেছে, পাশাপাশি করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা নিয়ে সবাই ব্যস্ততায় রয়েছেন। যে কারণে দুর্নীতি প্রমাণ হওয়ার পরেও দেলোয়ার হোসেন পার পেয়ে যাওয়ার মতো সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে।
জানা গেছে, দেলোয়ার হোসেন কুমেক হাসপাতালে ক্যাশিয়ার পদে চাকরি শুরু করেন। স্বাস্থ্য বিভাগীয় নন-মেডিকেল কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালার গেজেটে দেখা গেছে, ক্যাশিয়ার বা উচ্চমান সহকারী পদ থেকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রধান সহকারী পদে বদলি হয়ে যেতে হবে। কিন্তু দেলোয়ারের বেলায় নিয়ম ভঙ্গ করা হয়েছে। তার চেয়ে বিভিন্ন দিক থেকে সিনিয়র ও অভিজ্ঞ লোক থাকা সত্ত্বেও তিনি প্রধান সহকারীর পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। এক্ষেত্রে ‘ম্যানেজ’ প্রক্রিয়ায় তিনি এই পদে বসেছেন বলো শোনা যায়।
কুমেক হাসপাতালের হিসাব রক্ষক আব্দুল মোতালেব তার পদ দেলোয়ার হোসেন দখল করে রাখার সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, ‘আমি দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসাব রক্ষক। কিন্তু আমার দায়িত্ব আমাকে পালন করতে দেয়া হয় না। এখানে অনেক রাজনীতি আছে। সব কথা বলা যায় না। তাদের অনেক ক্ষমতা। আমাকে বলছে হিসাব রক্ষকের কাজ আমার করা লাগবে না, তাই করি না’। এই কথোপকথনের কল রেকর্ড প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে।
সূত্র মতে, এই কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর তা নিয়ে আদালতে রিট হয়েছে এবং দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) তার বিষয়ে তদন্ত করছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন আদেশ থেকে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. শহিদ মোঃ সাদিকুল ইসলাম সহকারী পরিচালককে (শৃঙ্খলা-২) দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে উত্থাপিত ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার আদেশ দেন।
সে বছর ১৭ নভেম্বর অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মোঃ বেলাল হোসেন এক চিঠিতে দেলোয়ার হোসেনকে বলেন, তার বিরুদ্ধে নিয়োগ বিধি লংঘন করে ক্যাশিয়ার পদ থেকে প্রধান সহকারী পদে পদোন্নতি নেয়া; প্রতি অর্থ বছরে বিভিন্ন খাত থেকে বিভিন্ন প্যাডের মাধ্যমে ক্রয়, মেরামত বাবদ ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে ২০/৩০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা; হাসপাতালের কফি হাউজের বিদ্যুৎ বিলের টাকা আত্মসাৎ করা; প্রতি বছর সিসি ক্যামেরা ও ইন্টারকম মেরামত বাবদ বিল ভাউচারের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া; প্রধান সহকারী হিসেবে বিল-ভাউচার তৈরী করা, হিসাব রক্ষক হিসেবে সেগুলো পাশ করা ও ক্যাশিয়ার হয়ে টাকা উত্তোলন করা, অর্থাৎ তিনটি পদের দায়িত্ব একই সঙ্গে পালন করা এবং এসব দুর্নীতি-অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে অবৈধ উপার্জনের টাকা দিয়ে নিজ জেলা শরীয়তপুর ও কুমিল্লায় বেশ কিছু জমি এবং ফ্ল্যাট ক্রয়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
যে কারণে ওই তারিখ থেকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তার বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী কেন দণ্ড প্রদান করা হবে না তার কারণ দর্শাতে বলা হয়।
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com