ম্যারাডোনার আকস্মিক মৃত্যুতে স্বাভাবিকভাবেই কাঁদছে ফুটবল বিশ্ব। তার নিজের দেশ আর্জেন্টিনা এবং ইতালিয়ান শহর নেপলস। এদের বাইরে আরও একটি জাতি ম্যারাডোনার মৃত্যুশোকে মুহ্যমান। তারা হচ্ছে, ফিলিস্তিনি। সারাজীবন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়ে গেছেন এই আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি। তুমুল বিরোধী ছিলেন ইসরায়েলি দখলদারিত্বের।
ফিলিস্তিনিদের কাছে ম্যারাডোনা শুধুমাত্র একজন ফুটবল তারকাই নন, ছিলেন যেন একজন মুক্তিদূত। সারাবিশ্বেই ফিলিস্তিনিদের অধিকারের প্রশ্নে তিনি ছিলেন আপোষহীন। ইসরায়েলের সন্ত্রাস এবং নির্বিচার অত্যাচার-নির্যাতনের তুমুল প্রতিবাদ করতেন। সারাবিশ্বে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য জনমত গঠন করেছিলেন তিনি।
কখনো কখনো ম্যারাডোনাকে দেখা গেছে, ফিলিস্তিনের পতাকা দুহাতে উঁচিয়ে তুলে ধরতে। ফিলিস্তিন ক্রনিকালের সাংবাদিক রামজি বারাউদি লিখেছেন, ‘ফিলিস্তিনে আপনি কখনোই ম্যারাডোনাকে ঘৃণা করতে দেখবেন না। একমাত্র অপশন হচ্ছে, তাকে ভালোবাসতে হবে। আপনি কখনোই তার বিরুদ্ধে কোনো নেতিবাচক কথাও বলতে পারবেন না সেখানে।’
কেন ম্যারাডোনার প্রতি ফিলিস্তিনিদের এত শ্রদ্ধা? সে জবাবও দিয়েছে রামজি। তিনি বলেন, ‘ম্যারাডোনা সম্মিলিতভাবে আমাদের মাঝে কিছু অনুপ্রেরণার বীজ বপন করে দিয়েছিলেন- ছোটখাট গড়নের একজন মানুষ, উঠে এসেছিলেন খুব দরিদ্র একটি পরিবার থেকে। অথচ, আমাদের মতই বাদামি, আমাদের মতই তার হৃদয় জ্বলন্ত, আমাদের মতই তুমুল উৎসাহী একজন মানুষ। নিজের মত করেই নিজেকে তিনি নিয়ে গিয়েছিলেন বিশ্বের সর্বোচ্চ স্থানে। আমাদের জন্য এটা শুধুমাত্র ফুটবল কিংবা খেলাধুলার মধ্যে সীমাবদ্ধ কিছু নয়। এটা ছিল একটা আশা, যে কারণে আমাদের মধ্যে এমন উদ্যম জন্ম নিয়েছে যে, যে কোনো কিছুই সম্ভব।’
ম্যারাডোনার প্রতি নিজেদের ভালাবাসার কথা জানাতে গিয়ে রামজি আরো বলেন, ‘তার প্রতি আমাদের উচ্ছ্বাস-উত্তেজনা এত বেশি হওয়ার কারণ হচ্ছে, আমরা যখন জানতে পারলাম, তিনি ফিলিস্তিনের পক্ষে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে। অনেকবারই তিনি আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামকে সমর্থন জানিয়েছেন। আমাদের অনুভূতি পূর্ণ হয়ে গেছে। জীবনের সর্বশেষ দিন পর্যন্ত নৈতিকভাবে তিনি ফিলিস্তিনিদের পাশেই থেকেছেন। সবচেয়ে বড় কথা, ২০১৮ সালের জুলাই মাসে তিনি বলেছিলেন, ‘হৃদয় দিয়েই অনুভব করি, আমি একজন ফিলিস্তিনি।’
রামজির এই বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসও। শুধুমাত্র ২০১৮ সালেই নয়, ম্যারডোনা এর আগেও প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন। যেমন, ২০১২ সালে ম্যারাডোনা নিজেকে বর্ণনা করেছিলেন, ‘আমি হলাম ফিলিস্তিনি জনগণের এক নম্বর সমর্থক। আমি তাদেরকে সমর্থন করি এবং তাদের অধিকার আদায়ের প্রতিও সমর্থন জানাই।’
আবদুল্লাহ নামে এক ফিলিস্তিনি ম্যারাডোনার বক্তব্যকে কোট করে লিখেছেন, ‘ফিলিস্তিন রয়েছে আমার হৃদয়ে, আমি নিজেও একজন ফিলিস্তিনি : ম্যারাডোনা।’
২০১৪ সালে গাজা যুদ্ধের সময় ম্যারাডোনা তার নিজের রাগ প্রকাশ করেছিলেন ইসরায়েলের প্রতি। তিনি তখন বলেছিলেন, ‘ফিলিস্তিনি জনগনের প্রতি ইসরায়েল যা করছে, তা চরম লজ্জাজনক।’
একই বছরের শেষ দিকে আলোচনা উঠেছিল, ফিলিস্তিনি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন এবং ম্যারাডোনার মধ্যে আলোচনা চলছে। ম্যারাডোনাকে তারা ফিলিস্তিন জাতীয় ফুটবল দলের কোচ হিসেবে নিয়োগ দিতে চায়। যদিও শেষ পর্যন্ত সেটা আর হয়নি।
রামজি বারাউদ বলেন, ‘গাজায় বেড়ে উঠেছি ম্যারাডোনাকে ভালোবেসে। ব্যক্তিগতভাবে আমি ফুটবলকে ভালোবাসি শুধুমাত্র তার কারণে। ধন্যবাদ ম্যারাডোনা। তুমি সারাজীবনই আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবে।’
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করে ইনস্টাগ্রামে নিজের পেজে ম্যারাডোনা লিখেছিলেন, ‘এই লোকটি ফিলিস্তিনে চায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে। মিস্টার আব্বাস একটি সঠিক রাষ্ট্রই প্রতিষ্ঠা করেছেন।’