‘দেড় বছর আগে চিত্রনায়িকা মির্জা ফারজানা ইয়াসমিন তমার (তমা মির্জা) সঙ্গে বিয়ে হয় কানাডা প্রবাসী হিশাম চিশতীর। বিয়ের পরে তমা মির্জাকে অকারণে মারধর করতেন হিশাম। ব্যবসার জন্য তমাকে তারা বাবার কাছ থেকে যৌতুক হিসেবে ২০ লাখ টাকা এনে দিতে বলেন। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে তমা মির্জার বাবা-মা হিশামকে বিভিন্ন সময় ১০ লাখ টাকা দেন।’
‘এর কিছুদিন পর হিশাম আবারও তমা মির্জাকে মারধর করেন। এক সময় হিশামের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তমা মির্জা বাবার বাড়ি চলে আসেন। ২০২০ সালের ৫ ডিসেম্বর হিশাম তমা মির্জার বাবার বাসায় আসেন। তার বাবার কাছ থেকে যৌতুকের বাকি ১০ লাখ টাকা নিয়ে দিতে বলেন। তমা মির্জা তার দাবিকৃত টাকা দিতে অস্বীকার করলে হিশাম তাকে আবারও মারপিট করেন।’
বাড্ডা থানায় দায়ের করা মামলায় এসব অভিযোগ করেছেন তমা মির্জা। পুলিশ বলছে, মামলার তদন্তে ঘটনার ‘সত্যতা’ পাওয়া গেছে। খুব শিগির হিশামের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হবে।
তমা মির্জার মামলাটি তদন্তের বিষয়ে বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ ইসলাম বলেন, ‘তমা মির্জা তার স্বামী হিশাম চিশতীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তদন্তে ঘটনার সত্যতা খুঁজে পাওয়া গেছে। হিশামকে অভিযুক্ত করে খুব দ্রুত চার্জশিট দেব।’
এ বিষয়ে তমা মির্জা বলেন, হিশামের সঙ্গে আমার পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় । বিয়ের পর থেকে হিশাম আমাকে যৌতুকের জন্য মারধর করত। এছাড়া হিশাম আমার অনুমতি ছাড়া আমার মোবাইল ফোন থেকে ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও ডাউনলোড করে বিভিন্ন আইডি থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। এসব কারণে আমি হিশামের বিরুদ্ধে মামলা করেছি।’
হিশামও তমা মির্জার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা করেছেন, এ বিষয় জানতে চাইলে চিত্রনায়িকা বলেন, ‘হিশাম যে অভিযোগে মামলাটি করেছে তা সঠিক নয়। সে আমাকে আমার বাসায় এসে মারধর করেছে। এরপর সে কানাডায় চলে যায়। ঘটনা সত্যি যদি হতো, সে দেশে থাকতো। মামলা মোকাবিলা করতো।’
মামলার বিষয়ে কথা বলার জন্য হিশাম চিশতীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তার মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এর আগে গত ৫ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর বাড্ডা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং যৌতুকের জন্য মারপিটসহ হুমকি প্রদানের অভিযোগে স্বামী হিশাম চিশতীর বিরুদ্ধে নায়িকা তমা মির্জা মামলা করেন। ৬ ডিসেম্বর তমাসহ চারজনের বিরুদ্ধে হিশাম চিশতীও বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেন। মামলা দুটি বাড্ডা থানার পুলিশ তদন্ত করছে।
মামলার অভিযোগে তমা আরও বলেন, ‘২০২০ সালের ৫ ডিসেম্বর রাত ৩টার দিকে হিশাম আমার বাসায় আসে। আমাকে মারধর করলে আমার চিৎকারে পাশের রুম থেকে আমার বাবা-মা এলে হিশাম তাদেরও মারধর করে। ঘরে থাকা ফুলদানি দিয়ে আমার মায়ের পিঠে ও মাথায় এবং আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। যার ফলে আমার বাবা-মাসহ আমি আহত হই। এরপর হিশাম আমাকেসহ আমার বাবা-মাকে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে বলতে থাকে যে, আমাদের প্রাণে মেরে ফেলবে এবং তার নিকট থাকা আমার ব্যক্তিগত মুহূর্তের অনেক ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করে আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করবে। পরবর্তীতে আমিসহ আমার বাবা-মা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করি।’
তবে হিশাম চিশতীর মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, হিশামের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় ২০ লাখ টাকা ধার হিসেবে নেন তমা। সেই টাকা ফেরত চাইলে তমা কালক্ষেপণ শুরু করেন। ২৯ সেপ্টেম্বর হিশাম কানাডা থেকে দেশে এসে তমাকে তার নিজের বাসায় এসে থাকতে বলেন। কিন্তু তিনি নানা অজুহাতে তার বাসায় না গিয়ে বাবার বাসায় থাকেন। এরপর হিশাম শ্বশুরবাড়ি গেলে তার সঙ্গে তমাসহ বাড়ির সবাই খারাপ আচরণ শুরু করেন। এক পর্যায়ে গত ৫ ডিসেম্বর রাত ৩টার দিকে তমা মির্জার বাবার বাড্ডার বাসায় যেতে বলা হয় হিশামকে। সেখানে নানা বিষয়ে আলোচনার পর ধার নেয়া ২০ লাখ টাকা চাইলে বাসার সদস্যদের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হয় হিশামের।
এজাহারে আরও বলা হয়, একপর্যায়ে শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে হিশামের ওপর আক্রমণ করেন। ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে তাকে খুন করার চেষ্টা করা হয়। এছাড়া লোহার চেয়ার দিয়ে আঘাত করলে ডান হাতে গুরুতর আঘাত পেয়ে মেঝেতে পড়ে যান হিশাম। তিনি চিৎকার শুরু করলে বাসার নিচের দারোয়ান ও আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
২০১৯ সালের ৭ মে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক হিশাম চিশতীকে বিয়ে করেন তমা মির্জা। বর্তমানে তমা মির্জা দেশে থাকলেও হিশাম চিশতী থাকছেন কানাডায়।