ভারতে হিজাব বিতর্ক নিয়ে এবার মুখ খুললো যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সরকারের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক একটি সংস্থা বলেছে, কর্ণাটকের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিপন্থি। এ অবস্থার জন্য রাজ্য সরকারের কড়া সমালোচনা করেছে তারা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এমন বিবৃতিতে মোটেও খুশি নয় ভারত। হিজাব বিতর্ককে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মন্তব্য করেছে ভারতীয় সরকার। খবর এনডিটিভির।
গত শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ রাশাদ হুসেইন এক টুইটে বলেছেন, ধর্মীয় স্বাধীনতার মধ্যে ধর্মীয় পোশাক বেছে নেওয়ার ক্ষমতাও রয়েছে। ভারতের কর্ণাটক রাজ্য ধর্মীয় পোশাকের অনুমতি নির্ধারণ করতে পারে না। স্কুলে হিজাব নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘন করে এবং নারীদের তুচ্ছ করে তোলে।
গত ডিসেম্বরে মার্কিন সরকারের ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম বা আইআরএফের অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ নিযুক্ত হন রাশাদ। এ পদে তিনিই প্রথম মুসলিম ব্যক্তি। এর আগে ওবামা প্রশাসনের আমলে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থায় (ওআইসি) যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন রাশাদ হুসেইন।
তবে মার্কিন কর্মকর্তার এমন বক্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারত সরকার। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি হিজাব বিতর্ককে দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয় উল্লেখ করে বলেছেন, ভারতকে যারা ভালোভাবে চেনে, তারা ঠিকই বাস্তবতা বুঝতে পারবে।
প্রতিবাদী কলেজছাত্রী মুসকান খান। ছবি: সংগৃহীত
এক বিবৃতিতে ভারতীয় মুখপাত্র বলেছেন, কর্ণাটকের কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ড্রেস কোড সংক্রান্ত একটি বিষয় হাইকোর্টে বিচারাধীন। সাংবিধানিক কাঠামো ও প্রক্রিয়ার পাশাপাশি আমাদের গণতান্ত্রিক নীতি ও শাসনব্যবস্থা এমন, যেখানে সব সমস্যা বিবেচনা করে সমাধান করা হয়।
তিনি বলেন, যারা ভারতকে ভালোভাবে চেনেন, তারা সঠিক বাস্তবতা বুঝতে পারবেন। আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মন্তব্য স্বাগত নয়।
ভারতে হিজাবকাণ্ডের শুরু মূলত গত ডিসেম্বরে। সেসময় কিছু মুসলিম ছাত্রী হিজাব পরে উড়ুপির একটি কলেজে যাচ্ছিলেন। তার জেরে হিন্দুত্ববাদী শিক্ষার্থীরা গেরুয়া বস্ত্র পরে কলেজে যেতে শুরু করেন। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকায় কর্ণাটকের বিজেপিশাসিত সরকার কলেজছাত্রীদের হিজাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
ধীরে ধীরে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিশেষ করে গত মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) থেকে মাণ্ড্যর প্রি-ইউনিভার্সিটি কলেজে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের সঙ্গে মুসকান খানের মুখোমুখি হওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর আলোচনার ঝড় ওঠে। মামলা গড়ায় আদালতে।
বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে শুনানি ছিল কর্ণাটক হাইকোর্টে। যতদিন এ বিষয়ে মামলা চলছে, ততদিন ধর্মীয় পোশাক পরে শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে যাওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আগামী সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে আবারও এ বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।