হাসানাতকে মন্ত্রী হিসেবে চান এলাকাবাসী

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

বরিশাল-১ আসনে চতুর্থ বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহকে মন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান গৌরনদী-আগৈলঝাড়াবাসী।

জানা যায়, ১৯৯১ সালে বরিশাল-১ আসনে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন হাসানাত আবদুল্লাহ। একসময় বরিশালে আওয়ামী লীগের রাজনীতির কর্ণধার পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নিহত আবদুর রব সেরনিয়াবাতের ছেলে ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে হাসানাত। ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-১ আসনে জয়ের পর তিনি চিফ হুইপ হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা হয়। এর দুটিতে ৩৩ বছরের কারাদণ্ডাদেশ হয়। এ কারণে নবম সংসদ নির্বাচনে তিনি অংশ নিতে পারেননি। নবম সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-১ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মামলাগুলো প্রত্যাহার হলে হাসানাত বরিশালে ফেরেন ২০০৯ সালের ১৩ অক্টোবর। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ।

এরপর যতই সময় পার হয়েছে দিন দিন দক্ষিণাঞ্চলে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর অবস্থান আরও শক্ত হয়েছে। শুধু বরিশাল জেলা বা মহানগর নয়, বিভাগের ৬ জেলায় থাকা ২১টি নির্বাচনী এলাকা আর প্রায় সব উপজেলা-পৌরসভাতে রয়েছে তার আধিপত্য। সব মিলিয়ে বরিশাল তথা দক্ষিণের সিংহভাগ এলাকায় এখন হাসানাতেই আবর্তিত ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতি।

দলের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, হাসানাত আবদুল্লাহ এমপির বিচরণ পুরো দক্ষিণাঞ্চলে। কয়েক বছরে দলের বেশির ভাগ কমিটিই হয়েছে তার পছন্দে। কেবল ঝালকাঠি ও ভোলায় তার হস্তক্ষেপ কম। কারণ, ঝালকাঠি শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও ভোলা বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের এলাকা।

স্থানীয় একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা জানান, দক্ষিণের ৬ জেলায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের অনেক প্রভাবশালী নেতা। কেন্দ্রে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন মন্ত্রী-এমপির সংখ্যা কম নয়। কিন্তু তাদের মধ্যে হাসানাত আব্দুলাহর আলাদা গুরুত্ব আছে।

স্থানীয়রা জানান, জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর তিন ছেলের বড়জন সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র। ছেলের মনোনয়ন থেকে নির্বাচনে বিজয়ের নেপথ্যে ছিলেন হাসানাত। অন্য দুই ছেলের একজন আশিক আবদুল্লাহ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও বাবার সঙ্গে সক্রিয় গৌরনদী-আগৈলঝাড়ায় দলীয় রাজনীতিতে। আরেক ছেলে মঈন আবদুল্লাহ থাকেন ঢাকায়। তিনিও দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। হাসানাত আবদুল্লাহর স্ত্রী সাহান আরা আবদুল্লাহ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি।

গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, গত ৮ বছর হাসানাত আবদুল্লাহ এলাকায় বেশি সময় কাটিয়েছেন। নিয়মিত রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার পাশাপাশি যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে। সময় দিয়েছেন এলাকার মানুষের সঙ্গে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিজে তদারকি করেছেন।

গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র হারিছুর রহমান হারিছ বলেন, গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো কেন্দাল নেই, নেই বিভক্তি। দক্ষিণাঞ্চলের আওয়ামী লীগের অভিভাবক হাসানাত আবদুল্লাহর নেতৃত্বে বিগত যেকোনো সময়ের চেয়ে দল অনেক সুসংগঠিত। জনবান্ধব এই নেতাকে এলাকার মানুষ সুখ-দুঃখে পাশে পেয়েছেন। জনসমর্থনের দিক দিয়ে তার কাছে নেই কেউ। সেটা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিফলিত হয়েছে। গত ৫ বছরে যে উন্নয়ন করেছে, তা এখন দৃশ্যমান। বিপুল উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে আওয়ামী লীগের পাশে ছিল জনগণ। এখানকার উন্নয়ন ধারা অব্যাহত রাখতে হাসানাত আব্দুল্লাহকে মন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান মানুষ।

গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া এই দুই উপজেলার স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে গত ৮ বছরে গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। রাস্তাঘাট থেকে সব কিছুতে উন্নয়নের ছোয়া লেগেছে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবার হাসানাত আব্দুল্লাহকে মন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-১ আসনে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ২ লাখ ৫ হাজার ৫০২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির এম জহিরউদ্দিন স্বপন পেয়েছেন ১ হাজার ৩০৫ ভোট।