হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে না পেরে নবজাতক বিক্রি

লেখক:
প্রকাশ: ২ years ago

হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে না পেরে নিজের নবজাতক সন্তানকে বিক্রি করে দিলেন এক অসহায় মা। চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় এ ঘটনা ঘটেছে। সন্তান হারিয়ে এখন পাগলপ্রায় ওই মা।

অসহায় ওই নারীর নাম তামান্না বেগম (২৮)। পাঁচ বছর আগে উপজেলার হানিরপাড় গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে আলমের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। শ্বশুরবাড়ির লোকজন মেনে না নেওয়ায় ভাড়া বাসায় থাকেন তারা। দুই সন্তানের জননী তামান্না বেগম। স্বামীও ঠিকমতো তাদের দেখভাল করেন না। তৃতীয় সন্তানের ডেলিভারির সময় হয়ে এলে স্বামী টাকা জোগাড় করতে না পেরে চলে যান। কয়েকদিন ফোন বন্ধ করে বাসায়ও আসেননি। এর মধ্যে তামান্না বেগমের প্রসব বেদনা উঠলে তার মা ও স্বজনরা মিলে স্থানীয় পালস এইড হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ভর্তি করান। ঋণ করে হসপিটালে ভর্তি হয়ে সন্তান প্রসব করলেও মুখ দেখা হয়নি তামান্নার।

হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তান জন্ম নিলেও শেষ পর্যন্ত হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে না পারায় নিজ সন্তানকে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। ছেলেকে বিক্রি করলেও অবুঝ মায়ের মন সন্তানের জন্য কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। তার ওপর স্বামী আলম বাড়িতে এসে তার সন্তানকে ফিরিয়ে দিতে চাপ প্রয়োগ করছেন বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে অসহায় তামান্না বেগম জানান, হাসপাতালে অপারেশনের পর পরই টাকা চাওয়া হয়। আমি গরিব মানুষ টাকা দেব কোথা থেকে? আরেকজন আমাকে বিনামূল্যে রক্ত দিলেও হাসপাতালে রক্তের বিল দুই হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে অপারেশন ওষুধপত্র এবং আনুষঙ্গিক খরচ নিয়ে প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। কারও কথায় আমি সন্তান দেইনি। যখন হাসপাতালের বিল ও নিজের চিকিৎসার খরচ বহন করতে পারছিলাম না তখনই সন্তান বিক্রি সিদ্ধান্ত নিই। এর আগে কাউসার নামের একজন সন্তান বিক্রি করব কি না আমার কাছে জানতে চায়।

 

পরে হাসপাতালে একজনের সঙ্গে কথা বলে ৫০ হাজার টাকায় সন্তানকে বিক্রি করি। কিন্তু এখন আমার স্বামী তার সন্তান দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। তা না হলে আমার সঙ্গে সংসার করবে না বলেও হুমকি দিচ্ছেন। তখন টাকার জন্য সন্তান বিক্রি করলেও এখন আমার সন্তানের জন্য কষ্ট হয়। আমি আমার সন্তানকে ফিরে পেতে চাই।

এ বিষয়ে হাসপাতালের মালিক পক্ষের প্রতিনিধি লিমন সরকার জানান, বাচ্চা বিক্রির বিষয়ে আমরা অবগত নই। দুইদিন আগে যখন তিনি অপারেশনের সেলাই কাটতে আসেন তখনও আমরা তার বাচ্চা কেমন আছে জিজ্ঞাস করলে তিনি ভালো আছে বলে জানান।

এ বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজী শরিফুল হাসান বলেন, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।