হাদিসুরের লাশের অপেক্ষায় বাবা-মা, তৈরি হচ্ছে কবর

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে। বাড়ির সন্তান অবশেষে বাড়িতে ফিরছে। তবে সন্তানের ফিরে আসা নিয়ে বাড়িতে নেই কোনো আনন্দ, নেই কোনো উন্মাদনা।

বরং হাদিসুর রহমানের বাবা-মা-ভাই-বোনের মধ্যে যে দীর্ঘশ্বাস তৈরি হয়েছে, তাতে বেতাগীর আকাশ-বাতাসও যেন গুমোট হয়ে পড়েছে। কারণ হাদিসুরের নিথর দেহটাই কেবল দেশে ফিরে আসছে। প্রাণটা দিয়ে এসেছেন ইউক্রেনের আলভিয়া বন্দরে।

ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর অলভিয়া বন্দরে আটকে পড়ে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি বাংলার সমৃদ্ধি। সেখানে নোঙর করা অবস্থায় গত ২ মার্চ জাহাজটি রকেট হামলার শিকার হয়। ওই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হাদিসুর রহমান।

নিহত হাদিসুর বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদারের ছেলে।

দীর্ঘ ১১ দিন পর রোববার দেশে ফিরে আসছে হাদিসুরের মরদেহ। রোববার রাত ৮টায় তুর্কি এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে হাদিসুরের মরদেহ হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছাবে। এরপর হাদিসুরের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে তার গ্রামের বাড়িতে। সেখানেই দাদা-দাদীর কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন তিনি।

শনিবার বিকেলে হাদিসুরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পারিবারিক কবরস্থানে ইতোমধ্যেই কবরের নমুনা করে রাখা হয়েছে। বিদেশ বিভুঁইয়ে বীরের মতো প্রাণ হারানো হাদিসুরকে শেষবারের মতো এক নজর দেখতে আসা লোকজন যেন কোনো ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়াই তাকে দেখতে পারে এজন্য নেওয়া হয়েছে সকল প্রস্তুতি। এছাড়া তার বাড়ির উঠানে টাঙানো হয়েছে সামিয়ানা, আগত লোকজনকে বসতে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে চেয়ার।

আগামী সোমবার (১৪ মার্চ) বাদ আছর বাড়ির পেছনের মাঠে হাদিসুরের জানাযা অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন তার চাচা ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান ফোরকান। এরপর পারিবাহিক করবস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মসজিদের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে হাদিসুরকে সমাহিত করা হবে। দাদা আতাহার উদ্দীন হাওলাদার এবং দাদী রোকেয়া বেগমের কবরের পাশেই তাদের আদরের নাতিকে সমাহিত করা হবে বলে জানা গেছে।

হাদিসুরকে হারানোর শোক বয়ে নিয়েই তাকে দাফনের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিসহ মানসিক প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছে তার পরিবার।

এখন অপেক্ষা কেবল হাদিসুরের মরদেহ বুঝে পাওয়ার। হাদিসুরের বাবা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এখন আমরা ছেলের লাশ পাওয়ার অপেক্ষায় আছি।