হাদিসুরের পরিবারে নেই ঈদ আনন্দ, থামেনি মায়ের আহাজারি

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে রকেট বোমা হামলায় নিহত বাংলাদেশি জাহাজ এমভি বাংলার সমৃদ্ধির প্রকৌশলী হাদিসুর রহমানের পরিবারে এবার যেন ঈদের আনন্দ নেই। কিন্তু নিহত হাদিসুর রহমান আরিফের মায়ের কান্নার আহাজারি আজও থামেনি।

আসন্ন ঈদের আনন্দে সবাই যখন মাতোয়ারা, তখন হাদিসুরের গ্রামের বাড়ি বরগুনার বেতাগীতে চলছে শোকবিহল মায়ের কান্না। শোকাহত স্বজনদের আহাজারিতে এখনো স্তব্ধ গোটা গ্রামের বাড়ি।

নৌ প্রকৌশলী হাদিসুর রহমানের গ্রামের বাড়ি বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামে। তার বাবা ছিলেন একই এলাকার নাদেরিয়া মাদরাসার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। নাম তার আব্দুর রাজ্জাক।

চলতি বছরের গত ২ মার্চ ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকে থাকা বাংলাদেশি পণ্যবাহী জাহাজ এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ রকেট বোমা হামলার শিকার হয়ে সে আঘাতে নিহতহন হাদিসুর রহমান আরিফ। তার পরিবারে গ্রামের বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা, বড় এক বোন ও ছোট দুই ভাইসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন রয়েছে তার। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম হারিয়ে প্রিয় হাদিসুর রহমান আরিফকে হারিয়ে এবার বিবর্ণ আর আনন্দবিহীন ঈদুল ফিতর পালন করবেন তারা।

হাদিসুরের ছোট ভাই গোলাম মাওলা প্রিন্স বলেন, ‘প্রতি বছর ঈদ আসলে পরিবারের সবাইকে পছন্দের অনুযায়ী পোশাক কিনে দিতেন ভাই হাদিসুর। এবার ঈদে বাড়িতে এসে বিয়ে করার কথা ছিল আমার ভাইয়ার। এবার ঈদে সবাই আছে কিন্তু নেই শুধু ভাই। রমজান মাস চলে গিয়ে ঈদ আসছে এখন ভাই না থাকায় আনন্দ সব যেন মাটি হয়ে গেছে আমাদের।’

বাড়িতে গিয়ে হাদিসুরের কথা মনে করিয়ে দিতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন হাদিসের মা রাশিদা বেগম। শোকার্ত মাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা। কান্না করতে করতে তিনি বলেন, হাদিস ঈদে বাড়িতে আসলে আমাদের সবার জন্য কেনাকাটা করত। সবার সঙ্গে একসঙ্গে ঈদ করত। এবার ঈদে আমাকে আর কেউ কাপড় কিনে দেবে না। কেউ আর দোয়া চাইবে না। আমাদের ঈদ আনন্দ হাদিসের সঙ্গেই শেষ হয়ে গেছে।

হাদিসের মা আরও বলেন, ‘হাদিসুরের কুলখানির আগে সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ১ লাখ টাকা, সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমন এবং বরগুনার পুলিশ সুপার ১৫ হাজার টাকা করে দিয়েছিলেন। তবে ঈদ উপলক্ষে এখনো কেউ কোনো সহযোগিতা করেননি। তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে কীভাবে আমাদের ঈদ হবে সেই চিন্তাই করি এখন।

পুরো পরিবারের কারও চেয়ে কারও কষ্ট-বেদনা কম নেই। বাবাও যেন মেনে নিতে পারছেন না ছেলে হারানোর শোক। ছেলের কথা মনে করিয়ে দিতে কাঁদতে কাঁদতে বারবার মূর্ছা যান বাবা আব্দুর রাজ্জাক। তিনি জানান, ঈদ উল ফিতরের এমন আনন্দঘন মুহূর্তে হাদিস নেই, ভাবতেই পারছেন না তিনি। বাবা-ছেলের নানা সুখস্মৃতি জড়িয়ে আছে বিগত বছরের ঈদগুলোতে। হাদিস নেই তো ঈদও নেই। বরং আছে বুকজুড়ে একরাশ কষ্টের আর্তনাদ।

এ বিষয়ে বেতাগী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. সুহৃদ সালেহীন জানান, বোমা হামলায় নিহত হাদিসুর রহমান আরিফ পুরো গ্রামের মানুষকে শোকাহত করে চলে গেছেন। তার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সাধ্য করো নয়। জেলা প্রসাশনের সঙ্গে কথা বলে তার পরিবারকে সাহায্য, সহযোগিতা করার চেষ্টা করা হবে।