জমি না থাকায় দুই শতক জায়গার ওপরে একটা ঝুপড়িঘরে মানসিক প্রতিবন্ধী স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে থাকেন ট্রাকের ধাক্কায় হাত বিচ্ছিন্ন হওয়া সুমীর বাবা দুলাল খাঁ। ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতেন তিনি।
কয়েক মাস ধরে শরীরে নানা রোগ দানা বাঁধায় অর্থ উপার্জনের পথ অনেকটাই বন্ধ হয়ে গেছে। এখন হাত বিচ্ছিন্ন সুমীর চিকিৎসার ব্যয় কীভাবে বহন করবেন, তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন তিনি। এছাড়া ট্রাকচাপায় পঙ্গুত্ব বরণকারী মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কিত তিনি।
মা মরিয়মও মানসিক ভারসাম্যহীন হলেও অন্যের বাড়ি ও চাতালে কাজ করে খায়। অভাবি সংসারে তিন বোনের মধ্যে আট বছর বয়সী সুমী খাতুন সবার ছোট হলেও লেখাপড়ায় বেশ পটু ছিল। ছিল চটপটে ও হাস্যোজ্জ্বল। পড়তো পাড়ার একটি ব্র্যাক উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রকল্পের আওতায় শিশুশ্রেণিতে।
বড় বোন দোলেনা খাতুন স্বামী পরিত্যক্তা হয়ে বর্তমানে ঢাকায় অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে বাবা-মায়ের অভাবি সংসারের কিছুটা লাঘব করে বলে পাড়া-প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন। রোববার দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের শেরপুরে ট্রাকের ধাক্কায় শিশু সুমী খাতুনের হাত বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘটনা নিয়ে ২৩ এপ্রিল সোমবার দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিনে প্রতিবেদন করতে বগুড়ার শেরপুরের ফুলতলা গ্রামে গিয়ে আহত ও হাত বিচ্ছিন্ন সুমীর পরিবারের করুণ কাহিনী উঠে আসে।
রোববার বেলা দেড়টার দিকে বাবা দুলাল খাঁর হাত ধরে তার খালার বাড়ি পার্শ্ববর্তী কৃষ্ণপুর যমুনাপাড়ার দিকে দাওয়াত খেতে যাচ্ছিল। এ সময় ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের শেরপুরের ধরমোকাম (হোটেল খামখেয়ালী) এলাকায় পৌঁছলে ঢাকাগামী পাথরবোঝাই ট্রাকের ধাক্কা খেয়ে সুমীর খাতুনের (৮) শরীর থেকে বাম হাতের অর্ধেকাংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
এ সময় তার ডান হাতের তিনটি আঙুল ভেঙে যাওয়ার পাশাপাশি ক্ষতবিক্ষত হয় মুখমণ্ডলের অনেকাংশ। শিশুটিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্থানীয়রা উদ্ধার করে প্রথমে শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শজিমেক) ভর্তি করা হয়েছে বলে শেরপুর থানার এসআই পুতুল মোহন্ত জানিয়েছেন।
সোমবার দুপুরে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে উপপরিচালক ডা. নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, রোববার বিকালের দিকে শেরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত সুমী খাতুনকে নিয়ে হাসপাতালে আনা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে রোগীকে রক্ত, স্যালাইনসহ ওষুধপত্র দেয়া হয়।
তিনি জানান, পরে রাতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের তত্ত্বাবধানে তার শরীরে অস্ত্রোপচার করানো হয়। এখন সুমী বর্তমানে আশঙ্কামুক্ত হওয়ায় তাকে অর্থপেডিকস বিভাগে ভর্তি রাখা হয়েছে। আশা করছি ২-৩ সপ্তাহের মধ্যেই সুমী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে।
এদিকে হাত হারানো সুমীর চিকিৎসার খোঁজ নিয়ে বগুড়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নুরে আলম সিদ্দিকী জানায়, শিশুটি চিকিৎসার ব্যাপারে ডাক্তারদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তা সুচিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
সুমীর অভাবি বাবা দুলাল খাঁ জানান, তিন বোনের মধ্যে সুমীই ছিল অত্যন্ত চটপটে ও লেখাপড়ায় মনোযোগী। ঘাতক ট্রাক এভাবে তার শরীর থেকে হাত কেড়ে নিয়ে পঙ্গু বানিয়ে দিল। এখন কীভাবে তার চিকিৎসা ও পঙ্গুত্বের অভিশাপের ব্যথা সহ্য করব বুঝে উঠতে পারছি না।
এ প্রসঙ্গে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হাত বিচ্ছিন্ন সুমীর সুচিকিৎসার ব্যাপারে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনে নিজেও অর্থ সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে শেরপুর থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আহত সুমীর ঘটনাকারী ট্রাকটিকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। আহত সুমী ও তার পরিবারের সদস্যদের খোজঁখবর রাখা হচ্ছে।