#

বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশন (বিজেএসসি) সচিবালয় ১২ মার্চ দ্বাদশ বিজেএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। ১২তম বিজেএস পরীক্ষার মাধ্যমে ৫০ জনকে সহকারী জজ-জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ দেয়া হবে।

বিধি অনুযায়ী এ সংখ্যা বাড়তে বা কমতে পারে। আগ্রহী প্রার্থীদের আগামী ৫ এপ্রিল থেকে ২৫ এপ্রিল ২০১৮-এর মধ্যে যথানিয়মে আবেদন করতে হবে। আবেদনকারীদের মধ্য থেকে ৩টি ধাপে তথা প্রিলিমিনারি, লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের সহকারী জজ-জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হবে। প্রথম ধাপে একজন প্রার্থীকে ১০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হবে।

১০০টি এমসিকিউ প্রশ্ন থাকবে যার প্রত্যেকটির মান (১)। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য .২৫ নম্বর কাটা যাবে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস নম্বর ৫০। শুধু প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরাই পরবর্তী ধাপ তথা লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে।

প্রার্থীদের ১০০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হবে। গড়ে ৫০ শতাংশ নম্বর পেলে একজন প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বলে ধরে নেয়া হবে। উল্লেখ্য, কোনো প্রার্থী কোনো বিষয়ে ৩০ নম্বরের কম পেলে সে লিখিত পরীক্ষায় অকৃতকার্য বলে গণ্য হবে।

লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরাই কেবল ৩য় এবং চূড়ান্ত ধাপ তথা মৌখিক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগ পাবে। ১০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে যেখানে ন্যূনতম পাস নম্বর ৫০।

এখন থেকেই পরিকল্পনা মাফিক আপনার প্রস্তুতি শুরু করুন। বিজেএস পরীক্ষার সিলেবাস অনেক বড়। অপরিকল্পিত এবং এলোমেলোভাবে প্রস্তুতি নিতে গেলে আপনি পিছিয়ে পড়তে পারেন। সিলেবাসের বিশালত্ব এবং পড়াশোনার চাপে এক সময় নিজের ওপর আস্থাও কমে যেতে পারে।

তাই, শুরু থেকেই ঠাণ্ডা মাথায় নিজের মতো করে গুছিয়ে এ প্রস্তুতি পর্বটা আরম্ভ করুন। একই বিষয়ের জন্য ৩টি ধাপে যেন আলাদা করে ৩ বার সময় নষ্ট না হয়, সেই দিকে খেয়াল রাখুন।

মনে রাখবেন, সিলেবাসের তুলনায় সময় খুবই অপর্যাপ্ত। তাই, এমনভাবে প্রস্তুতি শুরু করুন যেন একই প্রস্তুতি ৩টি ধাপেই কাজে আসে। প্রিলিমিনারির প্রস্তুতিকে শুধু প্রিলি পাস নয় বরং লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে শুরু করুন।

আইন বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার ৬০ শতাংশ এবং মৌখিক পরীক্ষার প্রায় সব প্রশ্নই আইন এবং আইন সংশ্লিষ্টবিষয়ক। সুতরাং ভালো ফলাফল করতে হলে অবশ্যই একজন প্রার্থীকে সিলেবাসভুক্ত আইনগুলো সম্পর্কে স্পস্ট জ্ঞান থাকতে হবে।

প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতি

প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় আইন বিষয়ের পাশাপাশি সাধারণ বাংলা, সাধারণ ইংরেজি, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়গুলো, সাধারণ গণিত, দৈনন্দিন বিজ্ঞান এবং বুদ্ধিমত্তার ওপর প্রশ্ন করা হবে।

কোন বিষয়ের ওপর কতটি প্রশ্ন হবে সেটা সুনির্দিষ্ট নয়। তবে বিগত বছরগুলোর প্রশ্ন পর্যালোচনায় দেখা যায়, আইন বিষয় থেকে প্রায় ৬০ শতাংশের মতো প্রশ্ন আসে। বাংলায় ব্যাকরণ অংশের জন্য নবম-দশম শ্রেণীর পাঠ্য ব্যাকরণ বইটি ভালো করে পড়তে হবে।

পাশাপাশি সৌমিত্র শেখরের বই, বিসিএস এবং বিজেএসের বিগত পরক্ষিাগুলোর প্রশ্নগুলো গুরুত্বসহকারে দেখে নিলে আশা করা যায় প্রিলিমিনারিতে বাংলা বিষয়ে ভালো করা সম্ভব। ইংরেজি বিষয়ের জন্যও একই পরামর্শ থাকবে।

তবে ইংরেজির জন্য গ্রামার বিষয়ে অধিক মনোযোগ দিতে হবে। ইংরেজিতে সাধারণত গ্রামার অংশ থেকেই বেশি প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ বিষয়ের জন্য বাংলাদেশের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, জলবায়ু, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, অর্থনীতি ইত্যাদি সম্পর্কে মোটামুটি জ্ঞান থাকতে হবে। আন্তর্জাতিক বিষয়ের জন্য বিভিন্ন দেশের মুদ্রা, দিবস, পুরস্কার ও সম্মাননা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে জানতে হবে। বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক উভয় বিষয়ের জন্য সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর ওপর ভালো জানাশোনা থাকা দরকার।

এটা আপনাকে লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতিতেও এগিয়ে রাখবে। এ জন্য সাধারণ জ্ঞানের যে কোনো ভালো প্রকাশনীর বই, দৈনিক পত্রিকা এবং কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়তে পারেন। গণিত এবং বিজ্ঞান বিষয়ে আমি বিশেষ জোর দেব।

এ বিষয় দুটিই আপনাকে অন্য প্রতিযোগীদের থেকে অনেকখানি এগিয়ে রাখতে পারে। জুডিসিয়ারি পরীক্ষায় অবতীর্ণদের মধ্যে বেশিরভাগ প্রার্থীই এই দুই বিষয়ে দুর্বল। অনেকের মাঝেই গণিত ভীতি আছে। অথচ একটু গুরুত্ব দিলেই আপনি এ বিষয়ে ভালো করতে পারেন।

এগিয়ে যেতে পারেন অন্য প্রতিযোগীদের থেকে। তাই গণিত এবং বিজ্ঞান বিষয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিন। গণিতে ভালো করতে হলে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর বইগুলো বারবার চর্চা করুন।

একই সঙ্গে বিজেএস পরীক্ষার বিগত সব গণিত বিষয়ের প্রশ্নগুলো সমাধান করুন। বিজ্ঞানের জন্যও একই পরামর্শ। বিগত বছরের বিজেএস পরীক্ষার প্রশ্নগুলো পড়ে ফেলুন। পাশাপাশি বিসিএসের বিজ্ঞান প্রশ্নগুলোও ভালোভাবে দেখুন।

লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি

লিখিত পরীক্ষায় ১০০০ নম্বরের মধ্যে বাংলা বিষয়ে ১০০, ইংরেজিতে ১০০, গণিতে ৫০, দৈনন্দিন বিজ্ঞানে ৫০, বাংলাদেশ বিষয়ে ৫০ ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে ৫০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। বাকি ৬০০ নম্বর আইন-সংক্রান্ত বিষয়ে।

বিধায়, একজন প্রার্থীকে আইন অংশে ভালো করতে হবে। এ জন্য সিলেবাসভুক্ত আইনগুলো খুব ভালো করে পড়তে হবে। আইন বিষয়গুলোতে লিখিত পরীক্ষার জন্য বিষয়ভিত্তিক সব আইন বিস্তারিত জানতে হবে। যেহেতু হাজার হাজার অনুচ্ছেদ, ধারা, উপধারা, আদেশ, বিধি আছে সেহেতু এত বিশাল সিলেবাস পরীক্ষার আগে একটানা পড়ে শেষ করা সম্ভব নয়।

তাই একটু কৌশলী হতে হবে। ধারার বিষয়বস্তু সাধারণত মনে থাকে। কিন্তু ধারা বা অনুচ্ছেদ, পরিচ্ছেদ নং মনে থাকে না। তাই আইনগুলো একবার ভালো করে পড়ার পর, মাঝে মাঝে ধারার সূচিপত্র তথা শিরোনামগুলো দেখতে হবে।

একটানা ৫০০-৬০০ ধারা মনে রাখা অসম্ভব। তাই একটানা ধারা মনে রাখার চেষ্টা না করে ধারাগুলোকে অধ্যায় অনুযায়ী ভাগ ভাগ করে পড়া যেতে পারে। এতে ধারা অনুযায়ী বিষয়বস্তু মনে রাখা সহজ হবে।

লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষায় প্রায়ই সুনির্দিষ্ট ধারা জানতে চাওয়া হয়। তাই নিজের মতো করে একটা কৌশল ঠিক করে গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো মনে রাখার চেষ্টা করুন।

বাংলা, ইংরেজি, বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ে আপনি সমন্বিতভাবে একত্রে প্রস্তুতি নিতে পারেন। বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ের প্রস্তুতি আপনার বাংলা ও ইংরেজি রচনার প্রস্তুতির অংশ হতে পারে।

পরিকিল্পিতভাবে এ চারটি বিষয়ে প্রস্তুতি নিলে পড়াশোনার চাপ অনেকটাই কমে যেতে পারে। এ জন্য বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক বিষয়াবলীর ওপর ভালো জ্ঞান থাকতে হবে।

বিগত ১ বছরের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এবং কারেন্ট ওয়ার্ল্ড আপনার সংগ্রহে রাখুন। সাম্প্রতিক বিষয়ের ওপর প্রতি মাসেই বাংলা এবং ইংরেজিতে নিবন্ধ থাকে। সেগুলো খুব ভালো করে জেনে রাখুন। যে কোনো ভালো প্রকাশনীর একটি করে বিষয়ভিত্তিক বই সহায়ক হিসেবে রাখতে পারেন।

গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো আপনার খাতা বা ডায়েরিতে লিখে তার পাশে বইয়ের নাম এবং পৃষ্ঠা নম্বর লিখে রাখতে পারেন। এতে পরে প্রয়োজনের সময় খুব সহজেই আপনি ওই বিষয়টি বের করে একবার দেখে নিতে পারবেন। বাংলা সাহিত্যের জন্য সৌমিত্র শেখরের বই এবং বিসিএস ও বিজেএসের বিগত সালের প্রশ্নাবলী দেখুন।

গণিতের জন্য ৬ষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণীর পাটীগণিত, বীজগণিত, জ্যামিতি, পরিমিতি, ত্রিকোণমিতি ভালোভাবে চর্চা করুন। গণিতে ভালো করতে হলে বেশি বেশি অনুশীলনের বিকল্প নেই।

বিজ্ঞানের জন্য আমি বলব বিগত বিসিএস এবং বিজেএস পরীক্ষাগুলোর প্রশ্নাবলী পড়ে ফেলাই যথেষ্ট। পাশাপাশি বিজ্ঞানবিষয়ক বিসিএসের যে কোনো একটি লিখিত বই সহায়ক হিসেবে সঙ্গে রাখুন।

মৌখিক পরীক্ষা : লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ১০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হবে। মৌখিক পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস নম্বর ৫০। মৌখিক পরীক্ষায় ভালো করার প্রথম শর্ত আত্মবিশ্বাস।

আপনি অনেক জেনেও এই পরীক্ষায় খারাপ করতে পারেন। আবার মোটামুটি জেনেও বেশ ভালো করতে পারেন। তাই আত্মবিশ্বাস ধরে রাখতে হবে। নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে হবে।

যেহেতু মৌখিক পরীক্ষায় আইন এবং আইন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অধিক (প্রায় সব) প্রশ্ন করা হয় সেহেতু আইন বিষয়ে ভালো জ্ঞান থাকতে হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, ইতিহাস, প্রার্থীর নিজ জেলা, সংস্কৃতি, রাজনীতি, নিজ নামের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিত্ব এবং অর্থ ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে।

প্রস্তুতি নিতে থাকুন আজ থেকেই। আইনের পাশাপাশি নিয়মিতভাবে গণিত, ইংরেজি ও বিজ্ঞানচর্চা করুন। দুর্বল দিকগুলো খুঁজে বের করে শুরুতে সেগুলোর ওপর গুরুত্বারোপ করুন। প্রত্যাশার সঙ্গে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখুন। সাফল্য আসবেই। সবার জন্য শুভকামনা রইল।

লেখক : সহকারী জজ, পাবনা

উত্তর দিন

Please enter your comment!
এখানে আপনার নাম লিখুন