নাটোরের লালপুর উপজেলায় বাস ও লেগুনার সংঘর্ষে ১৫ জন নিহতসহ সারা দেশে শনিবার সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন অন্তত ২৩ জন। অন্যান্য দুর্ঘটনার মধ্যে কুমিল্লায় ও ফরিদপুরে দুজন করে, কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুর ও মৌলভীবাজারে একজন করে নিহত হন। এ ছাড়া অপর ব্যক্তি নাটোরের বড়াইগ্রামে আরেকটি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন।
নাটোর
বিকেলে নাটোর-পাবনা মহাসড়কের লালপুর উপজেলার কদিমচিলান এলাকায় (লেগুনার সঙ্গে বাসের ভয়াবহ সংঘর্ষ হয় । এতে লেগুনার ১৬ যাত্রীর মধ্যে ১৫ জনই নিহত হন। আর বাসযাত্রীদের মধ্যে আহত হন ১০ জন।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত একজন বাদে বাকি ১৪ জনের পরিচয় জানা গেছে। তাঁরা হচ্ছেন পাবনা জেলার মুলাডুলি গ্রামের মন্টু রোজারিওর স্ত্রী আদরী বিশ্বাস (৩৬), ছেলে প্রত্যয় বিশ্বাস (১২), মেয়ে স্বপ্না বিশ্বাস (১০), ঈশ্বরদী উপজেলার মীরকামারি গ্রামের সালামত আলীর স্ত্রী শাপলা বেগম (২০), তাঁর ১১ মাস বয়সী শিশু কন্যা সুমাইয়া, পাকশি গ্রামের সুবহান আলী (৭৫), নিকরহাটা গ্রামের আবুল কাশেমের স্ত্রী জহুরা বেগম (৬০), লেগুনার চালক ঠাকুরগাঁ জেলার আব্দুর রহিম (৩৫), চালকের সহকারী নীলফামারী জেলার রাজা হোসেন (২০), নাটোরের বড়াইগ্রামের শেফালি বেগম (৪০), রজুফা বেগম (৪৫), লজেলা বেগম (৬৫) রোকন আলী (২২) ও সোবহান (৭৫)।
লেগুনার বেঁচে যাওয়া একমাত্র যাত্রী নুরসেদ সর্দার (৭২) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নিহতদের মধ্যে লজেলা বেগম এই নুরসেদ সর্দারের স্ত্রী।
বিকেলে প্রায় একই সময়ে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার রাজ্জাকের মোড় এলাকায় বনপাড়া-হাটিকুমরুল সড়কে বাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ট্রাকের চালক নিহত হয়েছেন। নিহত ট্রাক চালক মো. বাবুর (২৮) বাড়ি রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার বানেশ্বরে। এ দুর্ঘটনা পাঁচজন আহত হন। বনপাড়ার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সামসুন নূর ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
কিশোরগঞ্জ
বেলা আড়াইটার দিকে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলায় মোটরসাইকেল চাপায় আবদুল গণি (৬৫) নামের মসজিদের এক মোয়াজ্জিন নিহত হন।
এলাকাবাসী ওই ঘটনায় মোটরসাইকেল চালকসহ তিন আরোহীকে পুলিশে সোপর্দ করে। আটক ব্যক্তিরা হলেন, আবু নাঈম (২১), মাসুম মিয়া (১৭), ও সাকিব মিয়া (২০)। তাঁরা সকলেই কিশোরগঞ্জ পৌর শহরের হারুয়া এলাকার বাসিন্দা। হোসেনপুর থানার ওসি আবুল হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মাদারীপুর
বিকেলে ঢাকা বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার ভুরঘাটা এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় অমল চন্দ্র হালদার (৬৫) নামে এক পল্লি চিকিৎসক নিহত হন। ঘটনার সময় তিনি মোটরসাইকেলে ছিলেন। এতে মোটরসাইকেলের চালক লিটন মাতুব্বর আহত হন। কালকিনি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সঞ্জিব জোয়াদ্দার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মৌলভীবাজার
বিকেলে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার কাঁঠালতলি এলাকায় মারা যান সিএনজি চালিত অটোরিকশার এক চালক। পর্যটকবাহী বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহত হয় পাঁচজন। নিহত চালকের নাম রাজু আহমদ (২০)।
আহতরা হলেন, নিহত রাজুর বন্ধু জাকির (১৮), শাকিল (১৭), সাইদুল (১৬), শামসুল (১৬) ও এনাম (৩০)। তাঁদের বড়লেখা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। বড়লেখা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দেবদুলাল ধর ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। রাজুর বাড়ি পার্শ্ববর্তী জুড়ী উপজেলার কালিনগর গ্রামে। আহতদের সূত্রে জানা গেছে, রাজুসহ তাঁরা বড়লেখার মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে বেড়াতে এসেছিলেন।
ফরিদপুর
ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছেন। সকাল সাতটার দিকে ফরিদপুর সদরের মুন্সিবাজার বাইপাস সড়কে ও বিকেল পৌনে তিনটার দিকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে ভাঙার হামেরদী এলাকার এ দুটি দুর্ঘটনা ঘটে। সকালে মাইক্রোবাস চাপায় মারা যান পথচারী খাদিজা বেগম (৪৫)। আর বিকেলে গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী কমফোর্ট লাইন পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে মাহেন্দ্রের মুখোমুখি সংঘর্ষ নিহত হন যাত্রী শামীম শেখ (৩০। এ দুর্ঘটনায় ছয়জন আহত হন। হতাহতরা সবাই মাহেন্দ্রর যাত্রী।
কুমিল্লা
ভোররাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পৃথক স্থানে শ্যামলী পরিবহনের (দুটি বাস খাদে পড়ে দুজন নিহত হন । এতে আহত ৫০ যাত্রী। কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার জিংলাতলীতে যে বাসটি খাদে পড়ে সে ঘটনায় নিহত হন দুই যাত্রী। ওই ঘটনায় আহত হয়েছিলেন ৩৫ জন। অন্যদিকে রায়পুরে শ্যামলী পরিবহনের আরেকটি বাস খাদে পড়ে ১৫ যাত্রী আহত হন।