শাহেদা বেগম রাজধানীর মহাখালীতে ক্যান্সার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গ্রামের বাড়ি বরিশালের উজিরপুর থেকে অসুস্থ স্ত্রীর দেখাশোনা করতে ঢাকায় এসেছিলেন ষাট বছর বয়সী আব্দুর রহমান। সঙ্গে মেয়ে শারমিন আক্তার (৩৮), জামাতা রিয়াজুল ইসলাম (৪৫) আর ছয় বছরের নাতনি বৃষ্টি আক্তারও এসেছিল। তবে হাসপাতালে আর তাদের যাওয়া হয়নি। পথেই মেয়ে আর জামাতাকে নিয়ে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারান আব্দুর রহমান। শুক্রবার সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইলে তাদের বহন করা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় বাসটি ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্বৃত করে পুলিশ বলেছে, 'সেন্টমার্টিন পরিবহনের' একটি বাস ওই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। অটোরিকশাটিকে চাপা দিয়ে বাস নিয়ে চালক পালিয়ে যায়। তাকে গ্রেপ্তার বা বাসটি জব্দ করা যায়নি।
গ্রাম থেকে ঢাকায় এসে ছুটির দিনের সকালে ফাঁকা সড়কে বেপরোয়া গতির বাসের নিষ্ঠুরতা দেখল ছোট্ট বৃষ্টি। বাবা-মা আর নানাকে চোখের সামনেই হারিয়েছে সে। নিহত আব্দুর রহমানের ছেলে তানভীর আহমেদ জানান, তারা দুই ভাই মাতুয়াইলে থাকেন। মায়ের অবস্থা খারাপ হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার তাকে মহাখালীতে ভর্তি করা হয়। গতকাল সকালে উজিরপুর থেকে লঞ্চে তার বাবা, বোন, দুলাভাই ও ভাগ্নি ঢাকার সদরঘাটে নামেন। সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তারা বাসায় আসছিলেন। পথেই একটি বাস অটোরিকশার ওপর তুলে দিয়ে দুমড়েমুচড়ে দেয়। এতে সবাই আহত হন। খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে দেখেন তার বাবা, বোন আর দুলাভাইয়ের নিথর দেহ।
বিলাপ করে তানভীর বলছিলেন, মা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে। বাবা, বোন আর বোনের স্বামী এভাবে চলে গেল! তিনজনের লাশ নিয়ে দৌড়ঝাঁপ দিতে হচ্ছে। মায়ের চিকিৎসারও খোঁজ নিতে পারছেন না এখন। আদরের ভাগ্নি বৃষ্টিও বাবা-মা হারিয়ে হাসপাতালের শয্যায় কাতরাচ্ছে।
রহমানের আরেক ছেলে নজরুল ইসলাম বলছিলেন, মা হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও তিনজনের লাশ নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন তিনি। ভাগ্নি বৃষ্টি এখনও জানে না, তার বাবা-মা নেই!
ওই দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ সরকার। তিনি জানান, ওই চারজনকে বহন করা অটোরিকশাটি মাতুয়াইলের শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সামনে উত্তর পাশের সড়ক থেকে ইউটার্ন নিচ্ছিল। ওই সময় সেন্টমার্টিন পরিবহনের বাস সেটিকে ধাক্কা দেয়। এতে অটোরিকশা দুমড়েমুচড়ে কাত হয়ে পড়ে। আশপাশের লোকজনের সহায়তায় চালক ও একই পরিবারের চার যাত্রীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে আব্দুর রহমান, শারমিন ও তার স্বামী রিয়াজুলকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম জানান, এত বড় দুর্ঘটনা ঘটিয়ে বাসটি পালিয়ে গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা নিশ্চিত করেছেন, সেন্টমার্টিন পরিবহনের বাস এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। পরিবহন কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং রাস্তায় থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে বাসটি শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
স্বজনরা জানান, নিহত আব্দুর রহমান গ্রামে কৃষি কাজ করতেন। মেয়ে শারমিন গৃহিণী এবং শারমিনের স্বামী রিয়াজুল স্থানীয় একটি এনজিওর কর্মকর্তা ছিলেন। বৃষ্টি ছাড়াও শারমিন-রিয়াজুল দম্পতির ১০ বছর বয়সী এক ছেলে রয়েছে। সে ঘটনার সময় ঢাকাতেই মামার বাসায় ছিল।
চিকিৎসকদের উদ্বৃত করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, শিশু বৃষ্টির মাথায় আঘাত রয়েছে। তবে সে শঙ্কামুক্ত। গতকালই ময়নাতদন্ত শেষে তিনজনের মরদেহ স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com