সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সেপ্টেম্বর জুড়ে বিশেষ অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। ঢাকাবাসীকে আইন মানতে বাধ্য করতে নানাবিধ উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে এই বিশেষ অভিযানে থাকছে রোভার স্কাউটসহ অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকেরা। থাকবেন সেলেব্রিটিরাও।
এর আগে ৫ আগস্ট থেকে পরবর্তী দশদিন বিশেষ এই অভিযান পরিচালনা করেছিল পুলিশ। এবার মাসব্যাপী অভিযানে ঢাকার সড়কের অব্যবস্থাপনা শূন্যের কোটায় আনার টার্গেট তাদের। যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, স্টপেজ ছাড়া যত্রতত্র বাস থামানো, ফুটপাতে মোটরসাইকেল উঠানো, লাইসেন্স ও নিবন্ধন ব্যতীত গাড়ি চালানো, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী উভয়ের হেলমেট পরা, উল্টোপথে গাড়ি চালানো, গাড়ি চালানোর সময় মোবাইলে কথা বলাসহ- এ ধরনের অপরাধ করে পার পাবে না চালক ও মালিকেরা।
মঙ্গলবার (৪ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর থেকে পুলিশ সড়কে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। এবার আমরা মাসব্যাপী অভিযান চালাব। পুলিশের এই উদ্যোগে সহায়তা করবে রোভার স্কাউট, গার্লস গাইড এবং বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। প্রতি শিফটে ৩২২ জন স্কাউট সদস্য গাড়িগুলোকে লাইনে দাঁড় করানো, যত্রতত্র পার্কিং না করা, জেব্রা ক্রসিং ও ফুট ওভারব্রিজ দিয়ে যাত্রীদের রাস্তা পারাপারে সহায়তা করবেন।’
তিনি বলেন, ‘আইন না মানার প্রবণতা এদের জনগণের সবচেয়ে বড় সমস্যা। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো, যানজট নিয়ন্ত্রণ এবং সচেতনতা তৈরির জন্য আমাদের ট্রাফিক মাস ঘোষণার এই উদ্যোগ।’
গত দেড় বছরে ট্রাফিক বিভাগের অভিযানের ফলাফল তুলে ধরে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘দেড় বছরে ট্রাফিক আইন না মানা, পেশাজীবীদের স্টিকার ব্যবহার করা, মোটরসাইকেলে ৩ জন তোলা ইত্যাদির বিরুদ্ধে মোট ৬ লাখ ২৬ হাজার মামলা দেয়া হয়েছে। ভিডিওতে আইন ভঙ্গের সূত্র ধরে ৯৯ হাজার মামলা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ঈদের আগে ১০ দিনের বিশেষ ট্রাফিক অভিযানে মামলা দিয়ে জরিমানা আদায় করা হয়েছে মোট ৫ কোটি ৬৭ লাখ ১৫ হাজার ৩০ টাকা।’
মাসব্যাপী বিশেষ অভিযান নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এই অভিযানে সুধী সমাজকে সম্পৃক্ত করা হবে। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের অনেকে সড়কে সচেতনতার কাজ করবেন।’
ঢাকার সড়কের শৃঙ্খলা ফেরানোর উদ্যোগগুলোর বিষয়ে কমিশনার বলেন, ‘ঢাকায় ১২১টি বাস স্টপেজের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব স্টপেজ ছাড়া কোথাও বাস থামানো যাবে না। এগুলোতে বোর্ড লাগানো হচ্ছে। এসব স্থানের বাইরে কেউ বাস থামাতে পারবে না। পাশাপাশি বাস স্টপেজ ছাড়া কোথাও বাসের দরজা খোলা যাবে না, বন্ধ থাকবে। যাত্রীরাও বাস স্টপেজ ছাড়া অন্য কোথাও নামতে পারবেন না।’
‘বাসযাত্রীরা সড়কে যত্রযত্র দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে পারবেন না। তাদের শুধুমাত্র জেব্রা ক্রসিং কিংবা বাস স্টপেজে দাঁড়াতে হবে। এছাড়া প্রতিটি বাসের সামনে চালকের ছবি ও ফোন নম্বর থাকতে হবে। বাসচালক সিটবেল্ট বেঁধে গাড়ি চালাবেন। চুক্তিভিত্তিক নয়, বাসের ড্রাইভার হবে বেতনভুক্ত।’
যানবাহনে অবৈধভাবে ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড লাগিয়ে অনেকেই আইন লঙ্ঘনের চেষ্টা করে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটি করা যাবে না। অননুমোদিত কোনো ব্যক্তি ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড ব্যবহার করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঢাকার বাইরের কোনো রিকশা ঢাকায় চললে সঙ্গে সঙ্গে আটক করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকার মূল সড়কে চলাচলে লেগুনার কোনো রুট পারমিট নেই। রাজধানীতে এতদিন যারা লেগুনা চালিয়েছে, তারা অবৈধভাবে চালিয়েছে। মূল সড়কে লেগুনা চলার কথা না। আমরা কোনোভাবেই ঢাকা মহানগরের মূল সড়ক দিয়ে লেগুনা চলাচল করতে দেব না।’
সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে মোটরসাইকেল চালকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী উভয়কেই হেলমেট পরে সুশৃঙ্খলভাবে বাইক চালানোর অনুরোধ করছি। এছাড়া যাদের হেলমেট থাকবে না তাদের কাছে তেল বিক্রি না করতে আমরা ইতোমধ্যে পেট্রোল পাম্প মালিকদের সাথে কথা বলেছি।’