ছবিয়ারা বেগমের স্বামী শওকাত আলী কর্মরত আছেন আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীতে। অথচ চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মোবারকপুর ইউনিয়নের এই নারী তুলছেন বিধবা ভাতা।
একইভাবে ওই ইউনিয়নের কান্তিনগর গ্রামের অর্ধশত নারী এভাবে ভাতা তুলছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। তাঁদের অনেকেই উৎকোচের বিনিময়ে এ কার্ড বাগিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানও এ বিষয়ে অনিয়ম হয়েছে বলে স্বীকার করেন।
মোবারকপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কান্তিনগর গ্রামের ওই নারীদের বেশিরভাগই অবশ্য উৎকোচ দেওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যান। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বিষয়টি স্বীকার করেন।
তাঁদের ভাষ্য, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য অলিউর রহমান এবং ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সংরক্ষিত নারী সদস্য সাহেলা বেগমের মাধ্যমে এমন কার্ড করেছেন তাঁরা। এর জন্য তাঁদের প্রত্যেককে ৫ হাজার টাকা করে দিতে হয়েছে।
আনসার সদস্য শওকাত আলীর স্ত্রী ছবিয়ারা বেগম বলেন, ‘এক মেম্বারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকায় তাঁর মাধ্যমে কার্ড করে নিয়েছি।’ তবে এর জন্য টাকা খরচ করতে হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি। এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে ক্ষোভের সঙ্গে তাঁর স্বামী শওকাত আলী বলেন, ‘কার্ড হয়েছে, তাতে কী হয়েছে? আরও কতজন কী করছে- তার হিসাব নিতে পারেন না?’
বিধবা ভাতার কার্ড দিয়ে তিনবারে ৬ হাজার টাকা তুলেছেন বলে জানান একই গ্রামের মিলিয়ারা বেগম। তাঁর স্বামী ফাহসান আলীর ভাষ্য, ‘আমি বেঁচে থাকা অবস্থায় কীভাবে স্ত্রীর নামে বিধবা ভাতার কার্ড হয়েছে, তা জানি না।’
মায়ের মৃত্যুর পর তাঁর নামে থাকা বিধবা ভাতার কার্ড নিজের নামে করিয়ে নেন একরাম আলীর স্ত্রী মোছাম্মৎ চিরল বেগম। তিনি বলেন, ‘মায়ের কার্ডের নমিনি হিসেবে আমি ছিলাম। তাঁর মৃত্যুর পর কার্ডটি আমাকে দিয়েছে।’
এ বিষয়টি যে ঠিক হয়নি, তা স্বীকার করলেও এই তিন নারীই দাবি করেন, কার্ড তাঁদের নামে করার জন্য উৎকোচ দিতে হয়নি। নিয়ম অনুযায়ীই পেয়েছেন। তবে প্রতিবেশীদের বক্তব্যে উঠে আসে ভিন্ন বিষয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েক নারী জানিয়েছেন, যাঁরা স্থানীয় ইউপি সদস্যকে ৫ হাজার টাকা করে দিয়েছেন, তাঁরাই বিধবা ভাতার কার্ড পেয়েছেন। এভাবেই কার্ড পেয়েছেন আব্দুস সাত্তারের স্ত্রী জোগো বেগম, রোজলুর স্ত্রী পানতারা বেগমসহ অন্তত ৫০ জন। সবাই তিন-চারবার করে টাকাও তুলেছেন।
একই এলাকার আহাদের স্ত্রী এমালি বেগম ও মজিবুর রহমানের স্ত্রী কাচু বেগম জানান, তাঁরা বিধবা ভাতার কার্ডের জন্য সাবেক সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য সাহেলা বেগম ও বর্তমান ইউপি সদস্য অলিউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আশ্বাস পেলেও এখনও বই পাননি।
টাকার বিনিময়ে এমন কার্ড করে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন সাহেলা বেগম। তিনি দাবি করেন, মানবিক কারণে নাম পরিবর্তন করে কয়েকটি কার্ড করে দেওয়ায় সহায়তা করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী বলেন, ‘২১ বছর আগে আমার স্বামী মারা গেছেন। ১৯ বছর কেউ খোঁজ নেয়নি। তিন বছর আগে মেম্বারকে ৫ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। এক বছর আগে বই পেয়েছি। এখন টাকা পাচ্ছি।’
তবে এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য অলিউর রহমানকে পাওয়া যায়নি। বেশ কয়েকবার তাঁর মোবাইল ফোন নম্বরে কল করলেও বন্ধ পাওয়া যায়।
মোবারকপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান মিঞা বলেন, ‘আমি ইতোমধ্যে অবৈধ বিধবা ভাতার তিনটি কার্ড বাতিল করেছি। এখনও তদন্ত করছি।’
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কাঞ্চন কুমার দাস এ বিষয়ে বলেন, ‘সারা উপজেলায় নানা সুবিধাভোগীর প্রায় ৫৬ হাজার কার্ড রয়েছে। সবগুলোর তদন্ত করা আমাদের জন্য খুব কষ্টকর। তবে অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেব।’
এভাবে ভবিষ্যতে যেন কেউ ভুয়া কার্ড করতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকার আশ্বাস দেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কাঞ্চন কুমার দাস।
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com