ঈদের আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়েছে লক্ষ্মীপুরের হাফেজ মিয়ার পরিবারে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদে ঘুরতে বের হয়ে নরসিংদীতে ট্রেনের ধাক্কায় হাফেজ মিয়া ও তার দুই মেয়ের মৃত্যু হয়।
একসঙ্গে পরিবারের তিন সদস্যকে হারিয়ে তাদের গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। পরিবারটিকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা পাচ্ছে না স্বজনরা। হাফেজের বৃদ্ধ মা ছেলে ও নাতনিদের জন্য কেঁদেই যাচ্ছেন।
ওই দুর্ঘটনায় অল্পের জন্য বেঁচে যাওয়া স্ত্রীও অনেকটা অচেতন। একমাত্র ছেলেও বাবা ও বোনদের হারিয়ে ভবিষ্যৎ ভাবনায় চোখে যেন অন্ধকার দেখছেন।
মঙ্গলবার বিকেলে লক্ষ্মীপুর সদরের দত্তপাড়া ইউনিয়নের দর্জিপাড়া গ্রামে নিহত হাফেজের বাড়িতে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। এর আগে সকাল ৯টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে তাদের মরদেহ পাশাপাশি দাফন করা হয়। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় নরসিংদী শহরের বাদুয়ারচর এলাকায় রেল সেতুর পাশে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, মো. হাফেজ মিয়া (৪০), তার দুই মেয়ে তানজিদা আক্তার তারিন (১৪) ও তাসলিমা আক্তার তুলি (০২)। হাফেজ মিয়া লক্ষ্মীপুরের দর্জিপাড়া গ্রামের মৃত জহিুরুল ইসলামের ছেলে। তারিন ব্রাহ্মন্দী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী।
নিহতদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ১২ বছর বয়সে হাফেজ তার বড় চাচা শফিকুল ইসলামের সঙ্গে চাকরির খোঁজে নরসিংদিতে যান। এরপর থেকে প্রায় ৩০ বছর ধরে তিনি নরসিংদি শহরের বিলাসদী এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিলেন। একই জায়গায় তার ছোট ভাই স্বপন মিয়া প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি ও ভগ্নিপতি শহিদ উল্লাহ ব্যবসা করতেন। হাফেজ সেখানে ভেলানগর জেলখানা মোড়ে চায়ের দোকানের ব্যবসা করতেন।
সোমবার বিকেলে মেয়ে তারিনের বায়নায় তুলি ও স্ত্রী রুমা আক্তারকে নিয়ে শহরতলীর বাদুয়ারচর এলাকায় নতুন সড়ক ও ট্রেন লাইনের পাশে ঘুরতে যান।
এসময় স্ত্রী রুমা আক্তার নিরাপদে রেল সেতু পার হন। কিন্তু হাফেজ মিয়া, তারিন আক্তার ও কোলে থাকা দুই বছরের মেয়ে তুলি নোয়াখালীগামী উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় সেতুর পাশে পড়ে যান। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতাল নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে রেলওয়ে পুলিশ দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও সদর হাপসপাতাল থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করেন।
ছেলে তারেক আজিজ বলেন, তারিন আব্বুকে ঘুরতে যাওয়ার জন্য বলে। পরে আব্বু, আম্মু ও ছোট দু’বোন ঘুরতে যান। ছোটবোন তুলির ইচ্ছাতে সবাই ট্রেন সেতুর ওপর দিয়ে হাটেন। আম্মু দ্রুত সেতু পার হতে পারলেও আব্বু ও ছোট বোনরা ট্রেনের ধাক্কায় পাশে পড়ে গুরুতর আহত হন। পরে হাসপাতালে নিলে তারা মারা যান।