সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে এক গৃহবধূকে গণধর্ষণ করেছে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী। পরে এসএমপির শাহপরাণ থানা পুলিশ শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টার দিকে ছাত্রবাস থেকে স্বামীসহ ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে। পরে তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়েছে।
সিলেটের প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত এমসি কলেজের ১২৮ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে গৃহবধূকে গণধর্ষণের খবর সাধারণ শিক্ষার্থীসহ সচেতন নাগরিকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
ওই গৃহবধূ স্বামীর সঙ্গে এমসি কলেজ ঘুরতে আসেন। ঘটনায় জড়িতরা সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক রনজিত সরকারের অনুসারী ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।
পুলিশ বলছে, অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান শুরু হয়েছে। ঘটনার পরপর র্যাব-৯ ও সিলেট মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার সিলেটের এমসি কলেজে স্বামীর সঙ্গে ঘুরতে যান ওই গৃহবধূ। এক পর্যায়ে রাত ৮টার দিকে তরুণীর স্বামী সিগারেট খাওয়ার জন্য এমসি কলেজের মূল গেটের বাইরে বের হন। এ সময় কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী গৃহবধূকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যেতে চায়। এতে তার স্বামী প্রতিবাদ করলে তাকে মারপিট শুরু করেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। এক পর্যায়ে গৃহবধূ ও তার স্বামীকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে নিয়ে যায়। সেখানে স্বামীকে বেঁধে ছাত্রলীগের তিন-চারজন নেতাকর্মী গৃহবধূকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।
এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (দক্ষিণ) মোহা. সোহেল রেজা পিপিএম বলেন, রাত ৯টার দিকে স্বামীকে ধরে নিয়ে কিছু ছেলে মারপিট করে। গৃহবধূকে ছাত্রাবাসে ভেতরে নিয়ে তিন-চারজন মিলে গণধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (গণমাধ্যম) জোর্তিময় সরকার বলেন, অভিযোগকারী গৃহবধূর স্বামীর বাড়ি সিলেটের দক্ষিণ সুরমা এলাকায়। শুক্রবার বিকেলে তিনি স্ত্রীসহ টিলাগড় এলাকায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। এ সময় ৪-৫ জন তরুণ তাদের জিম্মি করে ছাত্রাবাসের ভেতরে নিয়ে যায়। পরে ছাত্রাবাসের ভেতরের একটি রাস্তায় তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করে।
সিলেট শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাইয়ুম চৌধুরী জানান, এক দম্পতিকে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে আটকে রাখা হয়েছে খবর পেয়ে পুলিশ ছাত্রাবাস থেকে তাদের উদ্ধার করে। উদ্ধার হওয়া নারী ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন। পরে তাকে ওসমানী হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করা হয়েছে।
এমসি কলেজের ছাত্রাবাসের সুপার মো. জামাল উদ্দিন জানান, কয়েকজন ছাত্রাবাসে এক দম্পতিকে আটক রাখে বলে অভিযোগ পেয়েছি। পরে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত খবর নিচ্ছি।
এমসি কলেজের অধ্যক্ষ সালেহ আহমদও একই তথ্য জানিয়ে বলেছেন, তাদের কেনো আটকে রাখা হয়েছিলো এবং তাদের সঙ্গে কী আচরণ করা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও বিষয়টি তদন্ত করছে।