স্বামীর প্রতারণায় সব হারিয়ে প্রবাসফেরত নারীর আত্মহত্যা

:
: ১ বছর আগে

বনিবনা না হওয়ায় প্রথম স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় বিউটি আক্তারের। দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে ওঠেন বাবার বাড়িতে। সন্তানদের ভরণপোষণ জোগাতে পাড়ি জমান সৌদি আরবে। সেখানে গৃহশ্রমিকের কাজ নেন তিনি। দুই বছর আগে দেশে ফিরে দ্বিতীয় বিয়ে করেন বিউটি। এরপর আবার সৌদি আরবে চলে যান। সেখান থেকে উপার্জন করা সব টাকা দ্বিতীয় স্বামীর কাছে পাঠাতেন তিনি।

সম্প্রতি দেশে ফিরে স্বামীর কাছে সেসব টাকা-পয়সার হিসাব চেয়েও পাননি। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কলহ হয়। বিউটিকে মারধর করে জখম করেন দ্বিতীয় স্বামী। সন্তানরা তাকে নানার বাড়িতে (বিউটির বাবার বাড়ি) যান। দ্বিতীয় স্বামীর এমন প্রতারণা ও অত্যাচারে মানসিক কষ্টে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন বিউটি আক্তার (৪০)।

বিজ্ঞাপন

রোববার (৩০) এপ্রিল রাতে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার কাউলিবেড়া ইউনিয়নের মোটরা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বাবার বাড়ির পাশের একটি স্কুলের কক্ষের আড়ার সঙ্গে ফাঁস দেন তিনি। সেখান থেকে পুলিশ তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে।

বিউটি মোটরা গ্রামের মোসলেম মাতুব্বরের মেয়ে। প্রথম সংসারে তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ছয় বছর আগে প্রথম স্বামীর সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। সৌদি থেকে ফিরে তিন সালথা এলাকার লুৎফর রহমান (৪৬) নামে এক ব্যক্তিকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন।

বিজ্ঞাপন

বিউটির ছেলে জাহিদ শেখ (১৯) বর্তমানে কাউলিবেড়া গ্রামে একটি দোকানের কর্মচারী। তিনি বলেন, বিদেশে থাকাকালে মায়ের উপার্জন করা সব টাকা তিনি আমার সৎ বাবা লুৎফর রহমানের কাছে পাঠাতেন। আমরা নানাবাড়িতে খেয়ে না খেয়ে কষ্টে দিন কাটিয়েছি। এরপর মা দেশে ফিরে আসেন। তাকে নিয়ে লুৎফর রহমান ভাঙ্গায় তুলি হাসপাতালের নিচে ভাড়া বাসায় থাকতেন।

জাহিদ আরও বলেন, দেশে ফিরে পাঠানো টাকার কথা জানতে চাইলে লুৎফর রহমান প্রথমে তালবাহানা করতেন। একপর্যায়ে তিনি মাকে মারধর করতেন। মেরে ফেলার হুমকি দিতেন। সপ্তাহখানেক আগে বেদম মারপিট করার খবর পেয়ে আমি মাকে ফরিদপুরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করি। সেখানে চিকিৎসায় কিছুটা সুস্থ হলে নানার বাড়িতে নিয়ে আসি। মায়ের মুখে ও শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল।

তিনি অভিযোগ করেন, উপার্জনের সব টাকা হারানোর পাশাপাশি স্বামীর অত্যাচার-নির্যাতনের কারণে তার মা বিউটি খুবই হতাশা ছিলেন। স্বামীর ভালোবাসা পেতে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সেখানে উল্টো সবকিছু হারিয়ে তাকে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। তিনি তার মাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া হয়েছে অভিযোগ করে বিচার দাবি করেন।

বিজ্ঞাপন

এ ব্যাপারে জানতে বিউটি আক্তারের দ্বিতীয় স্বামী লুৎফর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যায়।

ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়ারুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।