স্বাধীন হয়নি বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে বৈদ্যুতিক ভল্টে ইস্ট পাকিস্তানের নাম!

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

১৯৭১ সালে নওয়াব হোসেন নিরবের বয়স ৮ কিংবা ৯ বছর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ শুনে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তার বাবা আব্দুল আলী। ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর বরিশাল স্বাধীন হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এ জেলাটি নাকি এখনও স্বাধীন হয়নি বলে বলছিলেন নগরের উত্তর আমানতগঞ্জ এলাকার মুক্তিযোদ্ধা সন্তান নিরব। তিনি বলেন, ‘ বরিশাল স্বাধীন হলে শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়(শেবাচিম) হাসপাতালে বৈদ্যুতিক ভল্টে ইস্ট পাকিস্তান সরকারের নাম থাকবে কেন?

মুক্তিযোদ্ধা বাবার স্মৃতিচারণ করে নিরব বলেন, ‘১৯৭১ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় তখন আমি মাত্র পাঁচ ক্লাশ(পঞ্চম শ্রেণী) পাস করেছি। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে এপ্রিল মাসের শেষের দিকে ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে জুনে দেশে ফিরেছেন বাবা। এরপর বাবা যুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার ২ বছর পরই বাবা মারা যান। তিনি আরো বলেন সম্প্রতি আমার মেয়ের চিকিৎসার জন্য শেবাচিম হাসপাতালে যেতে হয়। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখলাম হাসপাতালের বৈদ্যুতিক ভল্টে বাংলাদেশ সরকারের পরিবর্তে ইস্ট পাকিস্তান সরকারের নাম লেখা রয়েছে। যা আমাদের জন্য খুবই পীড়াদায়ক। ফলে বাংলাদেশ স্বাধীনের ৪৮ বছর পরও ক্ষোভ আর ঘৃণায় অনেক মুক্তিযোদ্ধা এখানে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন না। আর যতদিন এটি সঠিকভাবে সংস্কার করা না হবে ততদিন আমি ও আমার পরিবার সেখানে চিকিৎসা সেবা নিতে যাবেন না।’ সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের অধিকাংশ বৈদ্যুতিক ভল্টে ইস্ট পাকিস্তান সরকারের নাম লেখা রয়েছে। তাছাড়া ২/১টি বৈদ্যুতিক ভল্টে ইস্ট পাকিস্তান সরকারের নাম না মুছে উল্টো নামের উপর সাদা ও কালো কসটেপ মেরে দেওয়া হয়েছে।

হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মোঃ বাকির হোসেন বলেন,বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করায় আপনাকে(প্রতিবেদক)ধন্যবাদ। অনেক স্থানেই লেখা ছিল যা মুছে ফেলেছি। তাছাড়া যেখানেই ইস্ট পাকিস্তান সরকারের নাম লেখা রয়েছে তা ঘষে-মেজে মুছে ফেলা হবে।

বরিশাল মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ডেপুটি কমান্ডার শাহজাহান হাওলাদার বলেন, ‘বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। বৈদ্যুতিক ভল্টে ইস্ট পাকিস্তানের নাম থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য খুবই কষ্টের। এখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি বৈদ্যুতিক ভল্টে ইস্ট পাকিস্তানের নাম মুছে ফেলে সেখানে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের নাম যুক্ত করা হোক।’

বরিশাল মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার মোকলেসুর রহমান বলেন,‘আপনি(প্রতিবেদক) ৪৮ বছর পরে যে প্রশ্ন করেছেন তা খুবই দুঃখজনক।মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন বাংলাদেশের মাটিতে এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু থাকতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী সরকারের আমলে হলেও ভাবতাম এটা একটি ঘৃণিত ঘটনার বহিঃপ্রকাশ।’

এ বিষয়ে বরিশাল জেলা প্রশাসক এস.এম অজিয়র রহমান বলেন,‘এ ব্যাপারে আমাদের কিছুই জানা নেই। তবে যে দপ্তরেই হোক বিষয়টি সংশোধনের চেষ্টা করবো।’