রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত অঞ্চল মতিঝিল। ব্যাংক ও অফিসপাড়া হিসেবে পরিচিত অঞ্চলটিতে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন লাখ লাখ মানুষ। এসব মানুষের একটি বড় অংশ দুপুরের খাবারের জন্য নির্ভর করেন ক্যাটারিং সার্ভিসের ওপর।
কর্মজীবী এসব মানুষকে কেন্দ্র করে অঞ্চলটিতে কয়েকশ’ নিম্ন আয়ের মানুষ গড়ে তুলেছেন বিশাল ক্যাটারিং ব্যবসা। অফিসে অফিসে খাবার সরবরাহ করা এই ক্যাটারিং ব্যবসায় জড়িতদের বড় অংশের বসবাস মতিঝিল সংলগ্ন ফকিরাপুলে।
ক্যাটারিং ব্যবসায় জড়িত এবং তাদের সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০০ সালের আগে থেকে অঞ্চলটিতে এই ক্যাটারিং ব্যবসা চলছে। তবে ২০০০ সালের দিকে ব্যবসাটি মতিঝিল থেকে ফকিরাপুলে বেশি জনপ্রিয় ছিল। ফকিরাপুলে গড়ে ওঠা প্রেসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কেন্দ্র করে মূলত বাসায় রান্না করা খাবার প্লাস্টিকের বাটিতে করে সরবরাহের মাধ্যমে একশ্রেণির নারী এ ব্যবসা করতেন।
ধীরে ধীরে এ ব্যবসা ফকিরাপুলের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র মতিঝিল, পল্টন অঞ্চলে। অফিসপাড়ায় দুপুরের খাবার সরবরাহের এ ব্যবসা জমজমাট হতে থাকে ২০০৪-০৫ সাল থেকে। বর্তমানে মতিঝিল-পল্টন অঞ্চলের লক্ষাধিক কর্মজীবী মানুষ দুপুরের খাবারের জন্য পুরোপুরি নির্ভর করেন ক্যাটারিং ব্যবসায়ীদের ওপর। এদের কেউ দিন চুক্তিতে, আবার কেউ মাস চুক্তিতে খাবার নিয়ে থাকেন।
ক্যাটারিং ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দিন চুক্তিকে দুপুরের খাবার নেন একটি বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা আবদুর রহমান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের অফিসের ১০ জন প্রতিদিন দুপুরে একজনের কাছ থেকে খাবার নেয়। বাটিতে করে অফিসে এসে খাবার দিয়ে যায়। ভাতের সঙ্গে মাছ অথবা মুরগির মাংস এবং ডাল ও সবজি থাকে। মাঝে মধ্যে খিচুড়ি ভোনাও দেয়। একজনের খাবারের দাম পড়ে ৬০ টাকা।
তিনি বলেন, শুধু আমরা নই, এই বিল্ডিংয়ে ১০০টির বেশি অফিস আছে। প্রতিটি অফিসে ৫-১০ জন বা তারও বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী দুপুরের খাবার এদের কাছ থেকে নেন। সে হিসাবে এই বিল্ডিংয়ে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার মানুষ দুপুরের খাবারের জন্য তাদের ওপর নির্ভর করেন।
দিলকুশার একটি ব্যাংকে কাজ করেন মো. জাফর। তিনি বলেন, মতিঝিল অঞ্চলে যারা চাকরি করেন, তাদের বড় অংশ দুপুরের খাবারের জন্য বাসায় রান্না করে অফিসে অফিসে খাবার সরবরাহকারীদের ওপরে নির্ভরশীল। দিনের টাকা দিনে দিয়ে দেয়ার পাশাপাশি অনেকে মাস চুক্তিতে বাকিতে দুপুরের খাবার খান। মাস শেষে বেতনের টাকা পেলে খাবারের বিল পরিশোধ করেন।
ফকিরাপুলের একটি প্রেসে কাজ করা আনোয়ার বলেন, এক খালার কাছ থেকে আমরা মাস চুক্তিতে দুপুর ও রাতের খাবার নেই। খালা নিজে এসে বা তার ছেলের মাধ্যমে খাবার আমাদের প্রেসে পাঠিয়ে দেন। কোনো দিন ভাত, মাছ ও ডাল। কোনো দিন ভাত, মুরগির মাংস, ডাল আবার কখনও কখনও ভাত, ডিম ও আলু ভর্তা বা ডাল থাকে। প্রতি বেলায় জনপ্রতি খালাকে ৪০ টাকা দিতে হয়।
মতিঝিলের অফিসে অফিসে খাবার সরবরাহ করেন আলেয়া বেগম। তিনি বলেন, আমি প্রায় সাত বছর ধরে খাবার সরবরাহ করছি। প্রথমদিকে গ্রাহক ছিল কম। এখন আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো গ্রাহক আছে। অফিসে অফিসে খাবার পৌঁছে দেয়ার জন্য দুজন সহকারীও রেখেছি।
তিনি বলেন, আমরা বাসায় রান্না করি। সুতরাং হোটেলের তুলনায় আমাদের খাবারের মান ভালো এবং দামও কম। যে কারণে, অনেক বড় বড় স্যারও আমাদের কাছ থেকে খাবার নিয়ে থাকেন। আমি যাদের কাছে খাবার বিক্রি করি তারা দিনের টাকা দিনেই দিয়ে দেন। তবে মাঝেমধ্যে কেউ কেউ এক-দুদিন বাকি রাখেনে। পরবর্তীতে টাকা পরিশোধ করেন।
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com