আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় দ্বিতীয়বারের মতো স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণ বা গ্রাজুয়েশনের মানদণ্ড পূরণ ও উত্তরণের সুপারিশ লাভ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
উত্তরণ প্রক্রিয়াকে মসৃণ ও টেকসই করার লক্ষ্যে উত্তরণ পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক সুযোগসুবিধাসমূহ আরো বেশি সময় অব্যাহত রাখার জন্য বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। আসন্ন ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আয়োজিত এক্সপার্ট গ্রুপ সভার এক বৈঠকে বাংলাদেশ মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) আনুষ্ঠানিকভাবে ইউএন-সিডিপি এর নিকট এই আহ্বান জানায়।
ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি বিষয়ক) জুয়েনা আজিজ। বৈঠকে একটি উপস্থাপনার মাধ্যমে সাম্প্রতিক আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন এবং স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের পক্ষে বাংলাদেশের সর্বশেষ অবস্থান তুলে ধরেন ইআরডির সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন।
সভায় আশা প্রকাশ করা হয় যে, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিতব্য সিডিপির ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের সকল মানদণ্ড পূরণ করবে। একইসঙ্গে উক্ত উত্তরণ প্রক্রিয়াকে টেকসই ও মসৃণ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের পক্ষ হতে সিডিপির নিকট ২০২১ সাল থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর মেয়াদি প্রস্তুতিকালীন সময় প্রদানের আহ্বান জানানো হয়।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ২০১৮ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত সিডিপির সর্বশেষ ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় প্রথমবারের মতো স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের মানদণ্ড পূরণে সক্ষম হয়েছিল। জাতিসংঘের নিয়মানুযায়ী, কোনো দেশ পরপর দু’টি ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় উত্তরণের মানদণ্ড পূরণে সক্ষম হলে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের সুপারিশ লাভ করে।
সিডিপির প্রবিধান অনুযায়ী উত্তরণের সুপারিশ লাভের পর একটি দেশ তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত প্রস্তুতিকালীন সময় ভোগ করতে পারে। আগামী মাসে ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় উত্তরণের সুপারিশ লাভের পর পাঁচ বছর প্রস্তুতিকাল শেষে বাংলাদেশের গ্রাজুয়েশন ২০২৬ সালে কার্যকর হবে।
প্রস্তুতিকালীন এই সময়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রাপ্ত সকল সুযোগসুবিধা ভোগ করতে পারবে। তাছাড়া বর্তমান নিয়মে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশ ২০২৬ সালের পর আরো তিন বছর অর্থাৎ ২০২৯ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
বাংলাদেশের বক্তব্য উপস্থাপনকালে ইআরডি সচিব উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ এমন একটি সময়ে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হতে চলেছে যখন সমগ্র জাতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করছে।
তিনি তার উপস্থাপনায় সমষ্টিক অর্থনীতি ও আর্থসামাজিক বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যে অভূতপূর্ব সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে তার উপর আলোকপাত করেন। একইসঙ্গে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের পর বাংলাদেশের জন্য যে সমস্ত সুযোগ ও সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে তা কাজে লাগানোর জন্য সরকার সকল পক্ষকে সাথে নিয়ে কী কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে বা গ্রহণ করবে তাও তিনি তার উপস্থাপনায় তুলে ধরেন।
ইআরডি সচিব তার উপস্থাপনায় উত্তরণ পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক সুযোগ সুবিধাসমূহ অব্যাহত রাখা, জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসমূহ অর্জনের লক্ষ্যে উন্নয়ন অর্থায়নের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহ্বান জানান।
জাতিসংঘ ১৯৭১ সালে কিছু নির্ণায়কের উপর ভিত্তি করে বিশ্বের সবচেয়ে কম উন্নত দেশগুলোকে স্বল্পোন্নত দেশ বা Least Developed Countries (LDC) হিসেবে পৃথকভাবে শ্রেণীবদ্ধ করে। ১৯৭১ সালে স্বল্পোন্নত দেশের সংখ্যা ছিল ২৫ যা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৪৬ এ। বাংলাদেশ ১৯৭৫ সালে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। এ পর্যন্ত মোট ৬ টি দেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণে সমর্থ হয়েছে। এই দেশগুলো হলো- বোতসোয়ানা, কেপভার্দে, মালদ্বীপ, সামোয়া, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি ও ভানুয়াতু।