স্বদেশি টিউলিপ বাংলাদেশে দেখে মুগ্ধ ডাচ ডেপুটি হেড অব মিশন

লেখক:
প্রকাশ: ২ years ago

শীতপ্রধান দেশের ফুল টিউলিপ এখন ফুটছে গাজীপুরের শ্রীপুরের দেলোয়ারে হোসেনের বাগানে। আর সেই টিউলিপ ফুলের বাগান ঘুরে দেখে মুগ্ধ হলেন নেদারল্যান্ডসের ডেপুটি হেড অব মিশন পাউলা রুজ শিনডেলার। এসময় বাংলাদেশের মাটিতে স্বদেশি ফুলের বাহার দেখে উৎফুল্ল হয়ে ওঠেন তিনি।

বাগানের মালিক দেলোয়ার জানান, শুক্রবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় তার টিউলিপ বাগান পরিদর্শনে যান নেদারল্যান্ডসের ডেপুটি হেড অব মিশন পাউলা রুজ শিনডেলার। এসময় বাংলাদেশের টিউলিপ বিশ্ববাজারে পৌঁছে দিতে নানা ধরনের পরিকল্পনার কথা শোনেন এবং বাংলাদেশের আবহাওয়ায় টিউলিপ চাষ বাড়াতে নেদারল্যান্ডস সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

ফুলচাষি দেলোয়ার বলেন, ২০২০ সালে সীমিত পরিসরে চাষ করে কয়েক রঙের টিউলিপ ফুল পেয়েছিলেন। এবার তা থেকে চারা/টিউবার নিয়ে ছড়িয়ে দিয়েছেন দেশের বিভিন্ন জায়গায়। এখন টিউলিপ ঘিরে মানুষের মাঝে তৈরি হচ্ছে সম্ভাবনার স্বপ্ন। এ টিউলিপ দেশে কৃষি অর্থনীতির চাকা শক্তিশালী হওয়ার পথও খুলে দিচ্ছে।

দেশের মাটিতে প্রথম টিউলিপ ফুল ফোটায় ওই বছর তা নিয়ে রীতিমতো দেশজুড়ে হইচই পড়ে গিয়েছিল। দেলোয়ারের টিউলিপ বাগান দেখতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ তার শ্রীপুরের বাড়িতে ভিড় জমান। পর্যায়ক্রমে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেলোয়ারের বাগানে দ্বিতীয়বারের মতো টিউলিপ ফুল ফোটে। এই টিউলিপ নজর কেড়েছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও। টিউলিপ বাগান পরিদর্শনে এসেছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

তিনি বলেন, দেশে টিউলিপের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। আমার বাগানে পরপর দুইবার টিউলিপ ফোটায় সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। সেই চিন্তা থেকে এবার নেদারল্যান্ডস থেকে হলুদ, লাল, চার ধরনের পিংক, অরেঞ্জ, সাদা, পার্পেল রঙেরসহ ১০ ধরনের ৭০ হাজার টিউলিপের বাল্ব (বীজ) আমদানি করা হয়েছে। আমদানি করা টিউলিপ বাল্ব দিয়ে পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায় ৪০ হাজার, রাজশাহীতে এক হাজার ও যশোরের গদখালিতে পাঁচ হাজার বাল্ব বাগান তৈরি করে দেশের টিউলিপের এলাকা নির্ধারণে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। এছাড়া অনেক ছোট উদ্যোক্তা টিউলিপের বাল্ব সংগ্রহের জন্য যোগাযোগ করেছেন। তিনি নিজেও তার শ্রীপুরের মাঠে চাষ করেছেন টিউলিপ। ইতোমধ্যে এসব স্থানে টিউলিপ ফুল ফোটায় এ নিয়ে ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

jagonews24

দেলোয়ার আরও বলেন, আমাদের দেশে ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চাহিদা মেটাতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ফুল আমদানি করা হয়। ফুল চাষে জড়িয়ে আছে কৃষি অর্থনীতির একটি অংশ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ফুল চাষে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠলেও আমরা পিছিয়ে। অর্থনীতি ও চাহিদার কথা চিন্তা করে বিভিন্ন বিদেশি ফুল দিয়ে আমার স্বপ্নযাত্রা শুরু হয়। নানা প্রতিবন্ধকতার পরও থেমে থাকিনি। এরই মধ্যে জার্বেরা, চায়না গোলাপের পর বিদেশি টিউলিপ ফুল ফুটিয়ে এসেছে একের পর এক সফলতা। এখন হলো সম্প্রসারণের কাজ করে যাওয়া।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (ফুল গবেষক) ফারজানা নাসরিন খান বলেন, আমাদের দেশে টিউলিপকে ঘিরে এখন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আগে শীতের সময়ে বাসা-বাড়ির টবে অনেকেই টিউলিপের চাষ করলেও এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে চাষ হচ্ছে এটা সত্যিই আনন্দের খবর। আমাদের দেশে টিউলিপের একটি বাজার রয়েছে, দেশের বাইরেও বাজার রয়েছে। কৃষি অর্থনীতিতে দারুণ একটি ছোঁয়ার আশা তৈরি হয়েছে।

চাষ সম্প্রসারণে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি সরকারকে সহায়তার হাত বাড়াতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।