স্থানীয় সরকারের ইউনিয়ন পরিষদ এবং পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অনুপ্রবেশকারী, বিতর্কিত ও হাইব্রিড নেতাদের এবার মনোনয়ন দিচ্ছে না দলটি। এছাড়া আগের নির্বাচনে যারা দলের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচন করেছেন তারাও দলের মনোনয়ন পাচ্ছেন না। ইতোমধ্যে অনুষ্ঠিত কয়েক ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে দলটির এমন সাবধানী অবস্থানই দেখা গেছে।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের একাধিক সদস্য জানান, স্থানীয় সরকারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছেন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান এবং পৌরসভার মেয়র। এ দুই পদ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং উপজেলা চেয়ারম্যানদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান দ্বন্দ্ব লেগেই থাকে। তারা নিজের পছন্দের লোককে মনোনয়ন দিতে পৃথক রাজনৈতিক বলয় গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। এ কারণে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা চাইলে সংসদ সদস্য এবং উপজেলা চেয়ারম্যানরা নিজের পছন্দের প্রার্থীদের তালিকা পাঠানোর চেষ্টা করেন। এটি আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল করেছে।
তাই এবার দলের তৃণমূলকে গুরুত্ব দিতে এবং প্রকৃত যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রার্থী মনোনয়নে সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি তার সরকারি বাসভবনে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা সাংগঠনিক শৃঙ্খলার ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর। তিনিসহ দলের মনোনয়ন বোর্ড স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যে সিদ্ধান্ত নেবে, তা বাস্তবায়নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। আগে (২০১৬) যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহ করেছিলেন, এবার তাদের কোনোভাবেই মনোনয়ন দেয়া হবে না।
দলের এমন কঠোর অবস্থানে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারা জানান, ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ এবং পৌরসভায় দলভিত্তিক নির্বাচনে সন্তোষজনক অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন, বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়িসহ দলের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হয়েছিল।
তারা আরও বলছেন, তখন দলে অনুপ্রবেশকারীরা প্রভাবশালী নেতাদের সহায়তায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। এতে আওয়ামী লীগের বহু বিদ্রোহী প্রার্থী পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জয়লাভ করেছিলেন। ফলে দলের নিবেদিতপ্রাণ তৃণমূলের নেতাদের মধ্যে অসন্তোষ বেড়ে যায়। তবে এবার যথাযথভাবে প্রার্থী বাছাই করায় সংগঠন আরও শক্তিশালী হবে বলে আশা করছেন নেতাকর্মীরা।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২১ সালে স্থানীয় সরকারের সব ইউনিয়ন এবং পৌরসভার নির্বাচন শেষ হবে। প্রথম ধাপে ২৪টি পৌরসভায় ভোট হয়েছে ২৮ ডিসেম্বর। ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপে হবে ৬১ পৌরসভায় ভোট। তৃতীয় ধাপে ৬৪টি পৌরসভায় ভোট হবে ৩০ জানুয়ারি। এছাড়া চতুর্থ ধাপে ৫৬ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ হবে ১৪ ফেব্রুয়ারি। এজন্য মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) থেকেই আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু হয়েছে। বাকি পৌরসভাগুলোর ভোটও ফেব্রুয়ারির মধ্যেই হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া ২০২১ সালে কয়েক ধাপে প্রায় চার হাজার ৫৫৪টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এসব নির্বাচনের প্রার্থী বাছাই করা নিয়েও কঠোর ও সাবধানী অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে দলের ১৭ সদস্যের মনোনয়ন বোর্ড রয়েছে। বোর্ডের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে যেসব পৌরসভায় নির্বাচন হয়েছে, সেখানে দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্তকরণে তৃণমূল পর্যায়ে প্রার্থীদের গ্রহণযোগ্যতা, ভোটারদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ এবং গোয়েন্দা প্রতিবেদনকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বাকি পৌরসভাগুলোতেও মনোনয়ন দেয়ার সময় এসব বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হবে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা বলেন, বর্তমানে পৌরসভা এবং ইউপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি স্থানীয় পর্যায়ে অনেকটাই দুর্বল। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রয়োজনীয় শক্তি তাদের নেই। কিন্তু দলীয় প্রার্থী নির্ধারণে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে বিরোধ দেখা যায়। এ অবস্থায় আগে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন বা দল-মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করেছেন- এমন কাউকেই এবার মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে না। দলে শৃঙ্খলা আনতে এ বিষয়টিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।