স্ত্রীর পরকীয়া সন্দেহ শেষ করল স্কুলশিক্ষকের জীবন

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

পারিবারিক কলহ ও পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার সন্দেহ করে নেত্রকোনার মদন গোবিন্দশ্রী উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক উজ্জ্বল চৌধুরীকে (৪২) হত্যা করেছেন স্ত্রী মনি বেগম।

হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশ নেন মনি বেগমের চাচাতো ভাই আনোয়ারুল ইসলাম (১৫)। শনিবার দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এসব তথ্য জানান নেত্রকোনার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আকবর আলী মুন্সী।

এসপি মো. আকবর আলী মুন্সী বলেন, ১০ বছরের সংসার জীবনে মনি বেগম ও উজ্জ্বল চৌধুরীর দুই ছেলে সন্তান রয়েছে। তারপরও একে-অপরকে সন্দেহ করা ও আর্থিক টানাপোড়েন নিয়ে দুজনের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকত। এরই সূত্র ধরে এক বছর আগে মনি সন্তানদের নিয়ে স্বামীর বাড়ি মদন গোবিন্দশ্রী গ্রাম ছেড়ে নিজ বাবার বাড়ি জেলা সদরের সিংহের বাংলা ইউনিয়নের রুই কোনাপাড়ায় চলে যান।

গত শনিবার মদন থেকে নেত্রকোনায় শ্বশুরবাড়িতে স্ত্রী-সন্তানদের দেখতে আসেন উজ্জ্বল। বিদ্যালয় থেকে ছুটি নেয়ায় কিছুদিন ধরে সেখানেই অবস্থান করেন তিনি।

মনির দাবি, ঋণ পরিশোধের জন্য শ্বশুরের কাছে তার স্বামী টাকা দাবি করছিলেন এবং টাকা না পাওয়ায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে রোববার (২৬ জানুয়ারি) ঝগড়া হয়। এতে হত্যার পরিকল্পনা করে মনি বেগম দুপুরে উজ্জ্বলকে কোল্ড ড্রিংকসের (স্পিড) সঙ্গে বেশ কয়েকটি ঘুমের ওষুধ সেবন করান।

কোল্ড ড্রিংকস খাওয়ার পর উজ্জ্বল ধীরে ধীরে ক্লান্ত হন। কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে শ্বশুরবাড়ি ত্যাগের উদ্দেশে সন্ধ্যায় ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন তিনি। এর মধ্যে স্ত্রী মনি বেগম ঘর থেকে উজ্জ্বলকে টাকা দেয়ার কথা জানিয়ে পথিমধ্যে (জঙ্গল) দাঁড়াতে বলেন।

পরে জঙ্গলের সড়কে স্ত্রী মনি বেগম নিজেও পৌঁছে যান। পূর্ব পরিকল্পনা মতে তারও আগে জঙ্গলের মধ্যে অপেক্ষা করছিল মনির চাচাতো ভাই আনোয়ারুল। সেখানেই দুজন মিলে উজ্জ্বলকে ধরে গলায় মাফলার পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

সোমবার সকালে জঙ্গলের ভেতর থেকে মরদেহ উদ্ধার করে নেত্রকোনা মডেল থানা পুলিশ। তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুন্সীসহ পুলিশ কর্মকর্তারা।

এদিকে শিক্ষক হত্যার ঘটনায় ফুঁসে উঠে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মদনে মিছিল এবং মানববন্ধন করে জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি করেন তারা।

অন্যদিকে হত্যার রহস্য উদঘাটনে মরদেহ উদ্ধারের পর শ্বশুর-শাশুড়ি এবং স্ত্রীসহ বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের থানা হেফাজতে নেয় পুলিশ। নিহতের ভাই থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা করেন।

এরই মধ্যে বেরিয়ে আসে হত্যার রহস্য। গ্রেফতার হয় হত্যাকারীরা। তারা রিমান্ড শেষে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

হত্যাকারী স্ত্রী মনি জেলা সদরের কোনাপাড়া এলাকার আবদুল হাইয়ের মেয়ে। উজ্জ্বল জেলার মদন উপজেলা গোবিন্দশ্রী ইউনিয়নের বড়বাড়ির কেনু মিয়া চৌধুরীর (মৃত) ছেলে। তিনি গোবিন্দশ্রী উচ্চবিদ্যালয়ের শরীরচর্চা শিক্ষক ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের (প্রশাসন) দায়িত্বে থাকা পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার এসএম আশরাফুল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. শাহজাহান মিয়া, মো. ফখরুজ্জামান জুয়েল (সদর সার্কেল), মো. আল-আমিন (সদর) ও মডেল থানার ওসি মো. তাজুল ইসলাম খান প্রমুখ।