সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় স্কুলপ্যান্ট ছাড়া পরীক্ষা দিতে যাওয়ায় ৯ম শ্রেণির এক ছাত্রকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ইন্দ্রজিৎ কুমার নামের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
শনিবার (৪ জুন) বেলা ১১টার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বলাডাঙ্গা গ্রামের সোনার বাংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, ‘শনিবার বেলা ১১টার দিকে আমরা পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করি। এ সময় কেন্দ্রটির দায়িত্বে থাকা বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক ইন্দ্রজিৎ কুমার ওই শিক্ষার্থীকে দাঁড়াতে বলেন। ইউনিফর্মের একাংশ (প্যান্ট) না পরে পরীক্ষা দিতে আসার কারণ জানতে চান। সে তার প্যান্ট বানাতে দিলেও না পাওয়ার বিষয়টি জানালেও ইন্দ্রজিৎ কুমার তাকে স্কেল দিয়ে বেধড়ক মারধর করেন। একপর্যায়ে তাকে গলা ধাক্কা দিয়ে পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে বের করে দেন শিক্ষক।’
তারা আরও বলে, ‘পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে বের করার পরও বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে পড়ে থাকা একটি গাছের ডাল দিয়েও ওই শিক্ষার্থীকে মারধর করেন ইন্দ্রজিৎ স্যার। এ সময় চিৎকারে বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকরা ছুটে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।’
নির্যাতনের শিকার স্কুলছাত্র জানায়, ‘অভাব অনটনের সংসারে ঠিকমতো খাওয়া হয় না। করোনার কারণে দীর্ঘদিন স্কুল ছুটি থাকায় ইউনিফর্ম নষ্ট হয়ে গেছে। এরপরও পুরাতন ইউনিফর্ম পরেই নিয়মিত স্কুলে আসতাম। তবে এটা নিয়ে সহপাঠীরা হাসাহাসি করতো। উপায়ন্তর না পেয়ে বাবা দর্জির কাছে প্যান্ট তৈরি করতে দেন। কিন্তু দর্জি সময় মতো প্যান্ট না দেওয়ায় পরীক্ষার দিন অন্য একটি প্যান্ট পরে যাই।’
সে আরও বলে, ‘বিষয়টি আমি স্যারকে বারবার বলেছি। এরপরও তিনি কোনো কথা না শুনে বেধড়ক মারধর করেছেন। এ ঘটনায় আমার সহপাঠীসহ পরিবারের সদস্যরা প্রতিবাদ করলে তাদেরও মামলার হুমকি দেন।’
এ বিষয়ে নির্যাতিত ছাত্রের বাবা ও মা বলেন, ‘আমরা দিনমজুর। একবেলা কাজ জুটলে খাওয়া হয়। কাজ না জুটলে অনাহারে থাকতে হয়। আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মতো যেন সন্তানকে দিনমজুরের কাজ করতে না হয় এ জন্য ছেলেকে স্কুলে পড়াই। করোনার ছুটি থাকায় শহিদুলের জামা-প্যান্ট নষ্ট হয়ে যায়। এরপরও নষ্ট পোশাক পরে শহিদুল স্কুলে যেতো। তবে সহপাঠীরা সেটা নিয়ে হাসাহাসি করায় ছেলে একপর্যায়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়।’
তারা আরও বলেন, ‘দর্জি প্যান্ট বানাতে দিলেও দেরি করে। এতে পরীক্ষার দিন সে ইউনিফর্মের শার্ট পরলেও প্যান্ট পরে স্কুলে যেতে পারেনি। এ অপরাধে ছেলেকে পরীক্ষার কেন্দ্রের ভেতরে থেকে মারধর করে বের করা দেওয়া হয়েছে। আমরা এর ন্যায় বিচার চাই।’
মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক ইন্দ্রজিৎ সরকার বলেন, ‘ইউনিফর্ম না পরে আসায় ওই শিক্ষার্থীকে অল্প মারধর করা হয়েছে। তবে নিউজ করার মতো ঘটনা ঘটেনি।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুর রহমান বলেন, ‘এক শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়েছে বলে আমি জেনেছি। কালকে এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।’
সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘শিক্ষার্থীকে মারধরের বিষয় আমার জানা নেই। তবে এ বিষয়ে তার অভিভাবকরা লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com