পুরোদমে স্কুল শুরুর প্রথম দিনই স্কুলড্রেস না থাকায় দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ষষ্ঠ শ্রেণির দরিদ্র এক শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয় থেকে বের করে দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক।
মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) পৌর শহরের ফুলবাড়ী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
দরিদ্র ওই শিক্ষার্থীর নাম সুমাইয়া সিনহা স্বর্ণা। সে ফুলবাড়ী উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের মো. শাহিনুর ইসলামের মেয়ে। সে একজন থ্যালাসেমিয়া রোগী এবং তার বাবা একজন ক্ষুদ্র সুপারি ব্যবসায়ী।
সরেজমিনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকালে ফুলবাড়ী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হয়। অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ক্লাসে ঢোকে স্বর্ণা। তবে সে স্কুলড্রেস পরে স্কুলে আসেনি। এজন্য প্রথমে তাকে ক্লাসরুম থেকে বাইরে আনা হয়। পরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হাসেম আলী তাকে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেন। এসময় শিশুটি কয়েকদিনের মধ্যে তার ড্রেস তৈরি হয়ে যাবে জানালেও প্রধান শিক্ষক তার কথা শোনেননি।
শিশু শিক্ষার্থী সুমাইয়া সিনহা স্বর্ণা বলে, কিছুদিন থেকে তাদের স্কুলড্রেস পরে বিদ্যালয়ে আসার নির্দেশ দেন শিক্ষকরা। বিষয়টি সে তার বাবাকে জানায়। তার বাবা ড্রেস বানিয়ে দেবেন এমন আশ্বাস দিয়ে তাকে কয়েকদিন এভাবেই স্কুলে যেতে বলেন। আজ সে বিদ্যালয়ে এলে স্কুলড্রেস না থাকায় তাকে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় স্বর্ণার বাবা শাহিনুর ইসলাম বলেন, তিনি নিজে তার অসুস্থ মেয়েকে বিদ্যালয়ে রেখে সহকারী শিক্ষকদের বলেন যে তার স্কুলড্রেস তৈরি করা হয়েছে। দরজির কাছে রয়েছে। অর্থের অভাবে ড্রেস দরজির কাছ থেকে নিতে পারেননি। কাল থেকে স্কুলড্রেস পরে তার মেয়ে বিদ্যালয়ে আসবে। এর কিছুক্ষণ পরে জানতে পারেন যে তার মেয়েকে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। সে এখন পৌর শহরের ঢাকা মোড় জায়গায় রয়েছে। পরে তিনি গিয়ে মেয়েকে বাসায় নিয়ে আসেন।
স্বর্ণা একজন থ্যালাসেমিয়া রোগী। প্রতি মাসে তাকে তিন থেকে চার ব্যাগ রক্ত দিতে হয়। এজন্য প্রতি মাসে চিকিৎসা খরচসহ প্রায় ছয় থেকে সাত হাজার টাকা খরচ হয়। এ পর্যন্ত মেয়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে শেষ সম্বল বাড়িটিও বিক্রি করতে হয়েছে শাহিনুর ইসলামকে। মেয়েকে বিদ্যালয়ে পড়ানোর মতো টাকা তার কাছে ছিল না। এক ব্যবসায়ীর সহযোগিতায় স্বর্ণাকে পুনরায় বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়।
শাহিনুর ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি প্রধান শিক্ষকও জানেন। তারপরও আমার মেয়েকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হলো। তাকে স্কুল থেকে বের করে না দিয়ে আমাকে জানাতে পারতেন। তাকে আমি নিজে বাড়ি নিয়ে যেতাম। এভাবে একটা অসুস্থ বাচ্চাকে বের করে দেওয়া কতটুকু যুক্তিসঙ্গত? ব্যস্ততম মহাসড়কে একা একা আসতে গিয়ে আমার অসুস্থ মেয়ের কোনো দুর্ঘটনাও তো ঘটতে পারতো।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হাসেম আলী বলেন, ‘নির্দেশনা অনুযায়ী সব শিক্ষার্থীকে স্কুলড্রেস পরে বিদ্যালয়ে আসতে বলা হয়েছে। বারবার বলার পরও অনেকে স্কুলড্রেস পরে আসছে না। তাই তাদের বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।’
তবে স্কুলড্রেস ছাড়া একজন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে পড়তে পারবে কি না এমন প্রশ্নে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শমসের আলী মণ্ডল বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের স্কুলড্রেস পরে আসার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বলা হয়েছে। এটা শিক্ষার্থীদের তাগিদ দেওয়ার জন্য। তবে স্কুল থেকে বের করে দিতে হবে এরকম কোনো কথা বলা হয়নি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘কিছু আইনশৃঙ্খলার বিষয় থাকে আবার কিছু বিষয়ও আমাদের মাথায় রাখতে হবে। তবে বিষয়টি (শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া) নিয়ে তিনি প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলবেন।’
এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ফুলবাড়ী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘যারা স্কুলড্রেস কিনতে পারে না, আমাকে জানালে আমি নিজে তাদের স্কুলড্রেস কিনে দেই। (স্বর্ণার বিষয়টি) আমাকে জানালে আমি কিনে দিতাম। এটি একটি দুঃখজনক ব্যাপার। প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টির সমাধান করা হবে।’