সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আগুন: রোগীদের দুর্ভোগ, তদন্ত কমিটি গঠন

:
: ৫ years ago

রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় আগুনের সূত্রপাত ঘটে। তবে অগ্নিকাণ্ডের উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আগুন লাগার পরপরই পুরো হাসপাতাল জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্বজনদের সহায়তায় রোগীদের হাসপাতাল থেকে বের করে এনে অস্থায়ীভাবে মাঠে রাখা হয়েছে। গুরুতর অসুস্থ রোগীদের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার পরপরই স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হাসপাতালে ছুটে যান। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিট কাজ করছে। তবে রাত ৮টা ২০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যের ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের জানান, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। হাসপাতালে ভর্তি থাকা সব রোগী ও তাদের স্বজনদের নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে। তাদের অন্য হাসপাতালে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। গুরুতর অসুস্থদের ইতিমধ্যে পাঠানো হয়েছে। অন্যদের পর্যায়ক্রমে পাঠানো হবে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে হাসপাতালের তৃতীয় তলা থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। সংশ্নিষ্টরা ধারণা করছেন, হাসপাতালের তৃতীয় তলার ১১ ও ১২ নম্বর শিশু ও গাইনি ওয়ার্ডের মাঝামাঝি রাখা ফোম ও অন্যান্য আসবাব থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। তৃতীয় তলা থেকে মুহূর্তের মধ্যে আগুনের লেলিহান শিখা পুরো হাসপাতালজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। পুরো হাসপাতাল অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এ সময় হাজার শয্যার হাসপাতালটিতে ভর্তি থাকা রোগী ও তাদের স্বজন, চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। রোগী ও তাদের স্বজনরা আগুন আগুন চিৎকার করতে থাকলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আগুন লাগার খবর পেয়ে হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ূয়া, সহকারী পরিচালক ডা. মামুন মোর্শেদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হাসপাতালে ছুটে যান। সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরিচালকের নির্দেশে রোগীদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়।

অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, হাসপাতালে প্রায় দেড় হাজারের মতো রোগী ভর্তি ছিলেন। এছাড়া প্রত্যেক রোগীর সঙ্গে গড়ে দুইজন করে দর্শনার্থী ছিলেন। আগুন লাগার পর চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই মিলে রোগীদের হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। আপাতত রোগীদের হাসপাতাল মাঠে রাখা হয়েছে। গুরুতর অসুস্থ রোগীদের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

সহকারী পরিচালক ডা. মামুন মোর্শেদ বলেন, আইসিইউ বিভাগে ১০ জন রোগী ভর্তি ছিল। সন্ধ্যায় সোয়া ৬টার মধ্যে তাদের মধ্যে তিনজনকে সরিয়ে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। অন্যদের সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

এদিকে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে। কিন্তু আগুনের ভয়াবহতা বাড়তে থাকায় পর্যায়ক্রমে আরও ১০ ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে হাসপাতালে পৌঁছায়। প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, আগুন লাগার পর অনেক রোগী ও তাদের স্বজনরা হাসপাতালের বাইরে বেরিয়ে এসে পাশের মাঠে অবস্থান নিয়েছেন। তারা ধারণা করছেন, শতাধিক রোগী ও তাদের স্বজন এখনও হাসপাতালে ভেতরে রয়ে গেছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শতশত রোগী ও তাদের স্বজনদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। শ্যামলী ও আশপাশ হাসপাতালে রোগীদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কাউকে স্থানান্তর করা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান বলেন, কোনো রোগী আটকা পড়েনি। কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। কেন আগুন লাগল তা খতিয়ে দেখা হবে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান বলেন, সন্ধ্যা ৬ টার দিকে হাসপাতালের নিচতলার স্টোর রুম থেকে আগুনের সূত্রপাত। এরপর তা দোতলা ও তিনতলায় ছড়িয়ে পড়ে। রাত ৮ট ২০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

স্টোরে অনেকগুলো কক্ষ থাকায় সেগুলো পরীক্ষা করা হচ্ছে জানিয়ে আলী আহমেদ বলেন, ভেতরে ছোট ছোট আগুন আছে, স্পোক আছে। তবে আগুনটা বড় হচ্ছে না। আমরা এখন রুমগুলো চেক করে দেখছি। রাত ৮টা পর্যন্ত ভবনের বিভিন্ন তলায় তল্লাশি করে হতাহত কাউকে পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি। ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বলেন, রোগীসহ সবাইকে নামিয়ে আনা গেছে।

৫ বছরের শিশুর নানী জুলেখা বেগম জানান, তার নাতি তিন তলার ১১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি ছিল। আগুন লাগার ধোয়া গন্ধ পেয়ে আতঙ্কে দ্রুত নামতে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সব রিপোর্ট, মোবাইল ও নগদ ৯ হাজার টাকা ফেলে এসেছেন। এখন কিভাবে চিকিৎসা খরচ চালাবেন তা ভেবে কোনো কিনারা পাচ্ছেন না।

নজরুল ইসলাম (৬৫) নামে এক রোগীর ছেলে রোমান জানান, নিচ তলার দুই নম্বর ওয়ার্ডে তার বাবা ভর্তি ছিলেন। আগুন লাগার পরপর তারা প্রাণ ভয়ে বারান্দায় গিয়ে আশ্রয় নেন।