চেচনিয়া থেকে রাশিয়া, মাঝখানে ইউক্রেন হয়ে বেশ কয়েকটি যুদ্ধে সরাসরি জড়িত ছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ১৯৯১ সালে শোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরে এসব যুদ্ধ হয়েছে।
কয়েক মাসের উত্তেজনার পর সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) পূর্ব ইউক্রেনের স্বঘোষিত প্রজাতন্ত্র দোনেৎসক ও লুগানস্কে সেনা মোতায়েনের নির্দেশন দেন পুতিন। ওই দুই অঞ্চলের স্বাধীনতার স্বীকৃতিও দিয়েছেন তিনি।
সেনা মোতায়েনের সুযোগ নিয়ে অস্পষ্টতা থাকলেও তার এ-সিদ্ধান্তে ইউক্রেন সংকটকে আরও তলানিতে নিয়ে গেছে। প্রতিবেশী দেশটির সীমান্তে দেড় লাখের বেশি সেনা মোতায়েন করেছে রাশিয়া। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সেনা মিলে মোট এক লাখ ৯০ হাজার সেনা রয়েছে ইউক্রেন সীমান্তে।
চেচনিয়ায় দুটি যুদ্ধ
১৯৯৪ সালের শেষ দিকে বছর তিনেক ককেসাস প্রজাতন্ত্রের কার্যত স্বাধীনতা বরদাশত করার পর মস্কো সেখানে সেনা পাঠিয়েছে। চেচনিয়াকে পায়ের তলায় নিয়ে আসতে সেখানে অভিযান চালায় রাশিয়া।
কিন্তু তীব্র প্রতিরোধের মুখে ১৯৯৬ সালে অঞ্চলটি থেকে সরে আসতে বাধ্য হয় রুশ বাহিনী। এরপর ভ্লাদিমির পুতিন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ১৯৯৬ সালের অক্টোবরে চেচনিয়ায় ফের তিনি সেনা পাঠান।
রাশিয়ায় প্রাণঘাতী হামলার জবাবে চেচনিয়ায় সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালায় মস্কো। রাশিয়ার দাবি, চেচেনরাই এই হামলা চালিয়েছে। ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারিতে চেচেন রাজধানী গ্রোজনির নিয়ন্ত্রণ নেয় রুশ সামরিক বাহিনী। কামান আর বিমান হামলায় পুরোপুরি ধুলোয় মিশিয়ে দেয় অঞ্চলটিকে।
কিন্তু গেরিলাদের আন্দোলন অব্যাহত চলতে থাকে। ২০০৯ সালে সেখানে অভিযানের ইতি টানে ক্রেমলিন। দুই যুদ্ধে দুপক্ষের কয়েক হাজার সেনা নিহত হয়েছে।
রুশ-জর্জিয়া যুদ্ধ
২০০৮ সালের আগস্টে, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ছোট্ট অঞ্চল দক্ষিণ ওসেতিয়া নিয়ে পাঁচ দিনের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে জর্জিয়া ও রাশিয়া। ৭ ও ৮ আগস্ট দক্ষিণ ওসেতিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিতে রক্তক্ষয়ী অভিযান চালায় জর্জিয়ার সামরিক বাহিনী। ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে একটি যুদ্ধ ও সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর অঞ্চলটিতে নিয়ন্ত্রণ হারায় জর্জিয়া।
জর্জিয়ার অভিযানের জবাবে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেয় রাশিয়া। দেশটির ভূখণ্ডে সেনা পাঠিয়ে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের প্রতিধ্বনিতে আঘাত হানেন পুতিন। এতে কয়েকশ মানুষ নিহত হয়েছেন।
এরপর দক্ষিণ ওসেতিয়া ও আবখাজিয়ার স্বাধীনতায় স্বীকৃতি দেয় ক্রেমলিন। এরপর থেকে এ দুই অঞ্চলে রাশিয়ার জোরালো সামরিক উপস্থিতি রয়েছে। কার্যত এই দখলদারিত্বের নিন্দা জানিয়েছে পশ্চিমারা।
ইউক্রেন সংঘাত
২০১৪ সালে ইউক্রেনে ইউরোপীয় ইউনিয়নপন্থীদের বিদ্রোহের পর ক্রেমলিনপন্থী ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ক্ষমতাচ্যুত হন। জবাবে ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে একীভূত করে জবাব দেয় রাশিয়া। যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রাশিয়ার এই উদ্যোগে সমর্থন দেয়নি।
এরপর দোনেৎসক ও লুগানস্কে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উত্থান দেখা দেয়। এই দুই অঞ্চলের সঙ্গে রাশিয়ার সীমান্ত রয়েছে। পরবর্তী সময়ে বিদ্রোহীদের সঙ্গে তীব্র লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে কিয়েভ।
কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো বলছে, পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহকে উসকে দিয়েছে রাশিয়া। অস্ত্র ও সেনা পাঠিয়ে তাদের শক্তিশালী করা হয়েছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে সেখানে রাশিয়ার স্বেচ্ছাসেবীদের উপস্থিতির কথা স্বীকার করেছে মস্কো। ২০১৫ সালে মিনসক চুক্তির পর দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা কমে আসে।
কিন্তু ২০২১ সালের পর ইউক্রেন ভূখণ্ড ঘিরে আকাশ, স্থল ও সমুদ্রে সামরিক শক্তি বাড়ায় রাশিয়া। সোমবার পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতবাদী দুটি অঞ্চলের স্বাধীনতার স্বীকৃতি দিয়েছে রাশিয়া।
২০১৪ সাল থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে কিয়েভের সংঘাতে ১৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
২০১৫ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় সেনা মোতায়েন করে রাশিয়া। সেখানে প্রেসিডেন্ট বাসার আল-আসাদ বাহিনীকে সমর্থন করে মস্কো। সিরীয় বাহিনীকে রাশিয়া বিমানশক্তি দিয়ে সহায়তা করলে যুদ্ধের মোড় আসাদের দিকে ঘুরে যায়। এতে আসাদ বাহিনীর চূড়ান্ত বিজয় এবং বিদ্রোহী ও জিহাদিরা পরাজয়ের মুখে পড়ে।
সিরিয়ায় মস্কোর দুটি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। একটি হুমাইমিমে, অন্যটি তারতুসে। সিরিয়ায় ৬৩ হাজার রুশ সেনা মোতায়েন করার কথা জানিয়েছে রাশিয়া।