সেবার মনোভাব নিয়ে সবাইকে কাজ করার নির্দেশ মন্ত্রী হাসানাত আবদুল্লাহ’র

:
: ২ years ago

পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির মন্ত্রী মর্যাদায় আহবায়ক আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ- এমপি বলেছেন, ‘এমনিতেই দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ অবহেলিত, অসহায়। তাই হাসপাতালের সকল চিকিৎসক এবং নার্সদের সেবার মনোভাব নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে রোগীর চিকিৎসা সেবার আহবান জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকদের প্রতিদিন অন্তত দুবার হাসপাতালে এসে রোগী দেখার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার সকল থেকে দিনভর বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনা এবং উন্নয়ন কমিটির সভায় সভাপতির বক্তৃতায় এই আহবান ও নির্দেশনা প্রদান করেন কমিটির সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ।

এসময় তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘যাদের জন্য আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি সেই মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।

শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের কেবিন এবং চিকিৎসা সম্পূর্ণ বিনা মূল্য করতে হবে।

আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘অবশ্যই দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যা যা করোনীয় আমরা সেগুলো করতে প্রস্তুত রয়েছি।

চিকিৎসকরা অবশ্যই গুরুত্ব দিবেন রোগীর প্রতি। তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে। তাছাড়া হাসপাতালে সেবার মান বৃদ্ধির জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন তরাম্বিত করতে গণপূর্ত বিভাগকে নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল এলাকার সড়ক রাস্তাঘাট চলাচলের উপযোগী করে তুলতে হবে।

হাসপাতালে সকল ত্রুটিপূর্ণ শৈচাগার, দরজা, জানালা, এসি দ্রুত সময়ের মধ্যে মেরামত করার নির্দেশ দিয়েছেন।

পাশাপাশি বিকালে একটি মাত্র লিফ্ট চলাচল করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমি জানি এই হাসপাতালে ১০টি লিফ্ট রয়েছে।

অথচ বিকাল হলেই কেন একটি মাত্র লিফ্ট চলবে। এখন থেকে সবসময় সবগুলো লিফ্ট চালু রাখতে হবে। হাসাপাতালের পানি সমস্যা, বৈদ্যুতিক যটিলতা এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা দ্রুত করার জন্য বলেন।

রোগীদের যাতে কোন প্রকার ভোগান্তির শিকার হতে না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে বলেন হাসানাত আবদুল্লাহ। এসময় গণপূর্ব বিভাগের তত্তাবধায়ক প্রকৌশলী এবং নির্বাহী প্রকৌশলী আগামী দুই মাসের মধ্যে সকল সমস্যা সমাধান করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

পাশাপাশি শেবাচিম হাসপাতালের জন্য একটি দৃষ্টিনন্দন গেট নির্মাণকাজ এ বছরই শুরু করার কথা জানান গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তারা।

এদিকে, সভায় হাসপাতালের পুরাতন ভবনে রোগীর চাপ এবং দর্শনার্থীর চাপ কমানোর প্রসঙ্গে মতামত দেন ইন্টার্নসহ অন্যান্য চিকিৎসকরা।

এর পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতালের পুরানো ভবনে রোগীর চাপ সামাল দিতে পূর্ব পাশে পাঁচতলা বিশিষ্ট নতুন ভবন রোগীর চিকিৎসা সেবায় ব্যবহারের সিদ্ধান্ত দেন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ।

এসময় তিনি নতুন ভবনে মেডিসিন বিভাগ স্থানান্তর করতে বলেন। এ সিদ্ধান্তের কারণে হাসপাতালের পুরাতন ভবনে রোগীর চাপ কমবে বলে আশাবাদব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘এই হাসপাতাল কাগজে কলমে হাজার শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে।

কিন্তু কার্যক্রম চলছে পাঁচশত শয্যার জনবল দিয়েই। এ সমস্যা সমাধানে সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। শেবাচিম হাসপাতাল এক হাজার শয্যা ঘোষণা হলে এখন পর্যন্ত সেটা কার্যকর হয়নি।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টিতে গুরুত্ব না দেয়ার কারণেই জনবল সমস্যার সামাধান হচ্ছে না। তাই প্রশাসনিক অনুমোদন এবং জনবল নিয়োগের বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ে চিঠি প্রেরণের সিদ্ধান্ত দেন তিনি।

এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং সচিবের সাথে বলার প্রতিশ্রুতি দেন হাসানাত আবদুল্লাহ।

পাশাপাশি গণপূর্ত বিভাগকে শুধুমাত্র সংস্কার কাজের জন্য বরাদ্দ না চেয়ে জনবান্ধব কাজের বরাদ্দের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে বলেন। তাছাড়া হাসপাতালে রোগী কল্যাণ ফান্ডের জন্য ইতিপূর্বে রোগী ভর্তির ক্ষেত্রে যে দুই টাকা রাখা হতো তা বাড়িয়ে পাঁচ টাকা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এছাড়া শেবাচিম হাসপাতালে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত এবং গণপূর্ত বিভাগ কর্তৃক চলমান সবধারনের উন্নয়ন, চিকিৎসক-নার্স ও স্টাফদের সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন কিনা, রোগীদের সমস্যা এবং সম্ভাবনার বিষয়গুলো সার্বক্ষণিক তদারকির জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি উপ-কমিটি গঠনের প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ।

বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারকে প্রধান করে গঠিত কমিটিতে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার এবং শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিচালককে সদস্য হিসেবে রাখার কথা জানান তিনি। তার এই প্রস্তাবনায় সম্মতি প্রকাশ করেন সভার সকল সদস্য এবং অন্যান্য চিকিৎসকরা।

এসময় আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘এই কমিটি সরেজমিনে সার্বক্ষণিক হাসপাতালকে মনিটরিং করবে। পরে তারা স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়ন এবং ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে রিপোর্ট করবেন। প্রয়োজনে তারা সমস্যা সমাধানের বিষয়ে শুপারিশও করতে পারবেন। পরবর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সেইসব বিষয়ে আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত হবে।

এর আগে সভায় অংশ নেয়া বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) বরিশাল জেলার সভাপতি ডা. ইসতিয়াক হোসেন সম্প্রতি রোগী এবং ইন্টার্নদের মধ্যে যে ঘটনা ঘটেছে সেই ঘটনার কথা তুলে ইন্টার্নসহ সকল চিকিৎসকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘হাসপাতালে মানুষ প্রেম করতে আসে না, ব্যাথা নিয়ে আসে। আমাদের হাসপাতালের চিকিৎসকরা ড্রেস কোড মানে না। তারা এপ্রোন পরে না। এজ ড্রেসকোড মানলে এমন ঘটনা ঘটতো বলে আমার মনে হয় না। এসময় তিনি হাসপাতালের পরিচালক থেকে সুইপার পর্যন্ত সবাইকে সঠিকভাবে ড্রেসকোড অনুসরনের আহবান জানান। ড্রেসকোড মানা হলে অন্তত ৮০ ভাগ সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।

এসময় স্বাস্থ্য বিভাগ দালাল এবং ওষুধ কোম্পানির কাছে জিম্মি হয়ে আছে উল্লেখ করে ডা. ইসতিয়াক হোসেন বলেন, ‘হাসপাতালের অত্যাধুনিক মানের পরীক্ষা নিরীক্ষার যন্ত্র বা মেশিন রয়েছে। কিন্তু সেগুলো এখন বিকল হয়ে আছে। অথচ বেসরকারি হাসপাতাল এবং ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেশিনগুলো পুরানো এবং কম দামের হলেও বছরের পর বছর পরীক্ষা নিরীক্ষা চলে আসছে। বিভাগীয় স্বাস্থ্য অফিস অবৈধভাবে ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ক্লিনিকের লাইসেন্স দিচ্ছে। লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে যেসব ক্রাইটেরিয়া আছে তা মানা হচ্ছে না।

হাসপাতালের মিডলেভেল চিকিৎসক ডা. সৌরভ সুতার বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালের শুধুমাত্র ইন্টার্ন চিকিৎসকের পদই পূর্ণ আছে। কিন্তু সিনিয়র চিকিৎসক বা মিডলেভেল চিকিৎসকের চরম সংকট। সার্জারি বিভাগের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে একজনমাত্র সহকারী অধ্যাপক রয়েছে। আর একজন মিডলেভেল ডক্টর রয়েছেন। যে কারণে আমি নিজে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বহিঃবিভাগে রোগী দেখা শেষ করে ওয়ার্ডে গিয়ে রোগী দেখি, অপারেশন করি। এত বড় একটি হাসপাতালে সার্জারির মতো একটি বিভাগ কিভাবে একজনমাত্র চিকিৎসক দিয়ে চলে সে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এই চিকিৎসক। পাশাপাশি চিকিৎসক সংকট সমাধানের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে অনুরোধ জানান তিনি।

অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য রতনা আমিন, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিটির মো. খোন্দকার আনোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ এনামুল হক, র‌্যাব-৮ অধিনায়ক ডিআইজি জামিল হাসান, শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম, বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক আহমেদ, জেলার সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রেহানা বেগম, বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট লস্কর নূরুল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা কেএসএম মহিউদ্দিন মানিক-বীর প্রতীক, শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন, স্বাধীনতা নার্সেস পরিষদের সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান, ইন্টার্ন ডক্টর্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাকিন হোসেন খান প্রমুখ।

সভা শেষে আগামী ২৫ জুন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সকলকে অংশগ্রহণের অনমন্ত্রণ জানিয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ।